মুজিব ইরমের কবিতা

মুজিব ইরমের কবিতা

বারোমাসি কবিতা

বৈশাখ মাসে ডাকেরে দেওয়া কতো উজাই ওঠে, মেঘের ডাকে আমারও মন উজান দিকে ছুটে। কতো মানুষ ধরলো মাছ তোমার বাড়ির পাশে, আমার বৈশাখ যায় কেটে যায় মাছ ধরিবার আশে। সেই উজাই মাছ মেঘে ভিজে ধরা হইলো না, তোমার হাতের ডিমাল পুঁটি খাওয়া হইলো না।

জৈষ্ঠ্য মাসে পাকলো কাঁঠাল পাকলো কতো ফল, তোমার কথা ভেবে ভেবে আসলো চোখে জল। পাকলো কতো জাম রে বন্ধু পাকলো কতো আম, তুমি শুধু রইলা দূরে জপলা শুধু নাম। সেই না ফল রইলো ডালে পাড়া হইলো না, তোমার হাতে রসাল আম খাওয়া হইলো না।

আষাঢ় মাসে নয়া পানি নয়া কথা কয়, দিনে রাতে মনের মাঝে কতো আশা রয়। কতো জনে আইলা নাইওর বজরা ডিঙ্গি দিয়া, কতো জনে রইলা সুখে আপন মানু নিয়া। রঙ্গেডঙ্গে কাটাই দিলা নয়া মানু লইয়া, কতো লোকে বাঁধলা গান নদীর ধারে বইয়া। আমার শুধু নাও দৌড়ানি দেখা হইলো না, তোমার সনে আষাঢ় মেঘে ভিজা হইলো না।

শ্রাবণ মাসে মন খারাপে ফুটলো কতো ফুল, তোমার কথা মনে থাকে কেমনে করি ভুল। বাড়ির পাশে নালিতা শাক লকলকাইয়া বাড়ে, সে নালিতা ভাজবে তুমি দেখবো আড়ে আড়ে। বাদলা মাইয়া দিনে তোমার কিসের এতো তাড়া, লেঠা দিয়া বসবো পাশে দেখবো রাঁধাবারা। আহা, সেই নালিতা তোমার হাতে খাওয়া হইলো না, বাদলা দিনে তোমার পাশে বসা হইলো না।

বাড়ির পাশে ইরি ক্ষেত বাতাস এলে নড়ে, আর ক’টা দিন পরে ধান আসবে উঠে ঘরে। সে ধানে ভাজিবে তুমি নতুন চালের চিড়া, তোমার সনে ভাব করিবো ভাদ্র মাসের কিরা। ভাদ্র এলো ভাদ্র গেলো বাড়লো মনে দুখ, লোকের কথায় ভরলো শুধু এই বিরহী বুক! তোমার হাতে তালের শাস খাওয়া হইলো না, তোমার সনে ভাব করিবার নসিব হইলো না।

আশ্বিন মাসে মেঘ উঠিলো কমলো পানি ধীরে, পদ্মগুলো পদ্ম তো নয় তোমায় থাকে ঘিরে। শিউলি ঝরে শিউলি ঝরে থাকি তোমার ঘোরে, তুমি না হয় গান ধরিও শিউলি ঝরা ভোরে। আমি না হয় না শুনিলাম পদ্মফোটা সুর, আমি না হয় খুব বিরহে কান্দি বসে দূর। মনের দুঃখ রইলো মনে উধাও হইলো না, এই আশ্বিনে তোমার সনে দেখা হইলো না।

কার্তিক মাসের বোয়াল মাছ বড় আশা নিয়া, আমার তরে করবা বিরান পিঁয়াজ মরিছ দিয়া। সকাল বিকাল করবা আদর দিবা পানের কিলি, সন্ধ্যারাতে গাইবো গান আমরা দুজন মিলি। শীতল শীতল রাত রে বন্ধু শীতল শীতল রাত, আমার বুকে রাখবা তুমি তোমার মায়ার হাত। মনের আশা মনে রইলো পুরন হইলো না, তোমার হাতের চিতল পিঠা খাওয়া হইলো না।

আগন মাসে ঘরে ঘরে পাকা আমন ধান। সেই ধান কুটিবা তুমি গাইবা রসের গান। নয়া চাল কুটিয়া তুমি করবা নয়া পিঠা, তোমার হাতের রাঁধা শিন্নি হইবো কতো মিঠা। সেই মিঠা গুড় খাইতে আমার কপাল হইলো না, তোমার হাতের তিলের পিঠা খাওয়া হইলো না।

পৌষ মাসেতে তোমার দেওয়া খেজুর গুড়ের স্বাদ, আখের রসে মন মজিবে কান্নাকাটি বাদ। কুয়াশা ভেজা চাঁদ নামিবে তোমার উঠান জুড়ে, সে উঠানে দেখবো ধামাইল কী এক নেশার ঘোরে। আমার কী আর কপাল ভালা এমন কথা বলি, ঘরে ফেরা হাঁস হয়ে রোজ তোমার পিছু চলি! তোমার হাতে রসের পিঠা খাওয়া হইলো না, তোমার সাথে কুয়াশা রাতে হাঁটা হইলো না।

মাঘ মাসে কান্দে মনে এই কথাটি ভেবে, তোমার সাথে আমার দেখা হইবো তবে কবে! কাঁপছে দেহ কাঁপছে মন মাঘ মাইস্যা শীতে, তুমি কবে ডাকবা আমায় ঘরে তুইলা নিতে! মাঘের জারে বাঘ তাড়ালো সেই আশাতে রই, হয়নি দেখা হয়নি দেখা দুঃখ কারে কই। তোমার হাতে নক্সি কাঁথা পাওয়া হইলো না, মাঘের শীতে এক জাজিমে কাটান হইলো না।

ফাগুন মাসে ফুল ফুটিবে তোমার বাড়ির পাশে, সেই ফুল তুলিতে যাইবা দেখা পাইবার আশে। কুকিল হইয়া ডাক পারিমু ঘরের পাশের গাছে, ভয়ে মরি দেখে যদি ময়মুরব্বি পাছে! সেই ভয়ে কি এই ফাগুনে শিমুল হইলো লাল, সেই ভয়ে কি এই ফাগুনে বাড়লো দুখের কাল! ফাগুন মাসের মিঠা বাতাস খাওয়া হইলো না, ফুল বাগানে তোমার সাথে বসা হইলো না।

বুক ফাটা রোদ মাঠে ঝরে বুক ফাটা রোদ মনে, কতো কষ্ট সইবে আর রৌদ্র পোড়া তনে! আমি শুধু ঘুইরা মরি চাতক পাখির বেশে, তুমি কবে শীতল পাটি বিছাই দিবা হেসে! কাটবে কবে ঘুচবে কবে এই বিরহী দিন, শুধবো কবে বাড়বো কবে খিলিপানের ঋণ! তোমার হাতে ডাবের পানি খাওয়া হইলো না, এই গরমে দেহ আমার শীতল হইলো না।

হইলো না হইলা না আর কিছুই হইলো না, মাস আইলো মাস গেলো কপাল খুললো না। কী উচাটন কী অপেক্ষা পাড়াপড়শি দেখে, এই না ভেবে মুজিব ইরম বারোমাসি লেখে।