প্রবীর রঞ্জন মণ্ডলের কবিতা

প্রবীর রঞ্জন মণ্ডলের কবিতা

মনের ভাবান্তর

বড়ো বটতলা জুড়ে
ছায়ার হাতিরা ওই খেলে লুটোপুটি।
নিস্তেজ পাখিরবাসা
ওল্টান বাটির মতোই পড়ে আছে অনেকদিন,
ডিমের খোবড়াখানা সন্তানের জন্ম দিয়েই ছাড়ান।
তারা যে ডানার ভারে বাতাসের পালে
গা ভাসিয়ে কোথায় গেল তাই ভাবি।
দিনের ছায়া পুবের বারান্দায় এসে মিলিয়ে যেতেই
সারা ডাল ভরে কিচিরমিচির
সারা চৌপর রাতভর ঘুমের বিছানায়
শরীর ছেড়ে দেওয়া সাপের খোলসের মতোই।
তাই ভাবি বড়ো বড়ো ঝুরি টেনে বট
অকপট রাত জেগে কী করে?
কীভাবে সারাদিন অবিচল মাথা উঁচু রেখে
এইসব খেল তামাশায় সঙ্গী হয় কীনা!
ওরও তো প্রাণের সুপ্ত সন্তান
ছড়িয়ে ছিটিয়ে চলে যায় বুকের ওম মেখে।
খোলসের মাঝে এদিক সেদিক সব প্রান্তে
বাচ্চা ফুটে জানান দেয়,তারাও আছে
ওরই জীবনীশক্তি নিয়ে ভরপুর ;
তপ্ত দুপুর ভাবান্তর ঘটায় সুপ্ত মনে।

কঙ্কাল হবো

ভুল করে রাস্তার দুধার জুড়ে
লাগিয়ে ফেলেছি পরপারের গাছ
বাতাস হলেই এধার ওধার জুড়ে
হেলিয়ে দুলিয়ে করেই চলে নাচ।
ফুল চাইলে বৃষ্টি ছড়ায় হেসে
ফল চাইলে রাস্তা জুড়ে ছড়িয়ে দেয় ছায়া
প্রেতের মতো সকল গাছ কখন হলো লাশ
তাইত দেখি রাস্তা জুড়ে আসলো মরু মায়া।
সাম্প্রদায়িক হচ্ছে সবাই খেলছে মেরু তাস
সবাই দেখি চারিদিকে করছে উপহাস!
গাছের গায়ে মারছে ছোবল জোরে
কঙ্কালতো আমরা হবো বেরবে হাড়মাশ।

শরীরে বিষন্নতা

রক্তে রাঙা সুন্দরী মেঘের ডানায়
ভাসিয়ে দিয়েছি শরীর
ও পাড়ায় আঁধার নামে
ডানা ঝাপটান পাতিকাকের ডানায়।
ওখানে এখন জোনাকজ্বলা রাত
আলেয়ার চোখ হয়ে নেমে আসছে মাঠে।
ভুতুড়ে সব কাণ্ডকারখানায়
মাঠের চৌহদ্দিতে কেউ থাকেনা এখন ;
দু’একটি গাছ পাতার মাথা নাড়ায়
বুঝিয়ে দেয় তার উজ্জ্বল উপস্থিতি।
সংসারের সব খুঁটিনাটি,
হাঁড়ি কড়াই,খুন্তি,কলসির দিনরাত
ঠুকঠাক ঝগড়াঝাটি।
দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের
সুখ, স্বাচ্ছন্দ‍্য,বিষন্নতা ধরা পড়ে।
আঁধারে পথচলা ভাসমান শরীর চোখে
তাইত আমি ভেসে থাকি
আর মেঘের ডানায় বাড়াই উদ্বেগ।

একটি নদীর অপমৃত‍্যু

জলের প্লাবনে জেগে ওঠে প্রত‍্যয়
আমি আছি এখনো আছি প্রবাহমান
ধীরে ধীরে পলির দুর্বৃত্তরা এসে ছায়া ফেলে
চোখে নেমে আসে অপঘাত
অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সব কোন খেলায় ক্ষীণ হয়ে আসে!

দীর্ঘায়িত স্রোত আজ মুমূর্ষু প্রায়
ঘোলাজলের প্রলেপে চাপা পড়ে আজ কত স্মৃতি
চর চর চড়ার খেলায় খেলে স্থবির শরীর
ঢাকা পড়ে যায় কত মানুষের ইতিহাস
আমিও তো একটা জীবনকৃতি মাত্র!

শতাব্দীর পর শতাব্দী কত প্লাবি স্রোত
জীবনে বয়ে যাওয়া ছোট ছোট অনুসঙ্গ
ঘাত অভিঘাত অজস্র পলির প্রলেপে পড়ে ঢাকা
নিঃসঙ্গ জীবন জঠরে নেমে আসে আত্মমৃত‍্যু
তাই এখন একটা নতুন ইতিহাসে ঠাঁই নিতে
খুঁজে চলি একান্ত আশ্রয়।

উত্তপ্ত ছাপ

আগুনের ফুলকির মতো
ধেয়ে আসছে একটি সময়
ডাইনে বামে ওলন দেওয়া কোনো ভারসাম্য নেই
চকিতে সমুদ্রসৃষ্ট প্রবল নিম্নচাপের মতোই
মুহূর্তে মুহূর্তে বদলে যাচ্ছে রঙ।
একটা গুছিয়ে ওঠা থিমসঙ বানাতে সবাই ব‍্যস্ত
পারছে না কেউ;কিছুতেই পারছে না।
আগুনের ফুলকি লাগা সময়ের বুকে
জেগে উঠছে একএকটি দুঃসময়
বিশ্বযুদ্ধে প্রয়োগ করা এক একটা মারণাস্ত্রের মতো।
নিরন্তর সাবধানতায় কেটে যাবে ঝড়
রেখে যাবে স্মৃতিপথে উত্তপ্ত বিধ্বংসী ছাপ
তাপ উত্তাপ কেটে উঠতে সময় লাগবে হয়তো বহুকাল
তবুও এই শতাব্দীর মানুষতো অন্তত
দুঃসহ বেদনায় একটা মহামারী দেখল।