ভবেশ বসুর কবিতা

ঠোঁটে খড় দাও
আমি আমার শরীর চেতনা দিয়ে বুঝেছি,কুঠারের আঘাত না থাকলেও সকলেই কাঁদছে
ফাঁকা ছাদ চিরকাল না হয় একা,যে টবে প্রতিদিন আমি জল দিই তারও চোখে জল
লাল পথ আর ভিড়ের পথিক দুজনেই বিনুনি খুলে রেখেছে কেউ কোনদিন বাঁধেনি
চায়ের কাপ না ভাঙলেও,ভাঙনের রক্ত দেখে যন্ত্রণায় চা ও কাপের একসাথে কান্না
তোমরা জাগরণে শুনতে পাও,আমি ঘুমিয়েও মেঘ বৃষ্টির শব্দ শুনেছি— প্রেম দাও প্রেম দাও বলে যায়।
তার দেহে আঙুল ছোঁয়ালে সে চমকে ওঠে,হাত জড়িয়ে বলে ছেড়ে যাবে না তো আমায়
মানে আড়ালে না পাওয়ার ব্যাথা পৃষ্টা থেকে গোটা বই,পাওয়ার পরেও জলে ভেজা চোখ
লতারা না হয় লুটায়,যে গাছের আকাশ মুখ তারও বাসা ভাঙে ঘর শূন্য বেদনা নিরন্তর
চন্দন পুষ্প সকলেরই এমন কান্না,জানে সময়ই বাউল পথ ধরিয়ে দেবে— নদী নৌকার মতো সুদূরের নেশায় জাদুকর।
শাঁখ-শব্দে শাঁখ ভেঙে গেলেও মনে হয় সঠিক সুর ধরা পড়েনি,আরো জলোচ্ছ্বাস হই
আমাদের দেহ সাধনায় আদিম ক্ষুধা,ঠোঁটে খড় কই !
কেউ কেউ জীবন পাবে
একবার ফিরে গেলে ফিরে আসা সহজ নয়,অনেক অনেক যুদ্ধ হয়— রক্তও ভয়ে লাল
যে তীর হাত থেকে বেরিয়ে যায়,জীবন থেকে জীবন পার হয়ে তবে আসে
জীবন-ইতিহাস একটি সাগর,তীর ভূমে আসবে বললেই কৃষ্ণ-প্রেমের মতো জল ঢালো জল ভরো
সকাল হলেই সূর্যালোক আসে ঠিক,তারও সাঁজবেলা হতে শুরু হয়েছিল দুঃখ-যাত্রা
মৃত্যুর আগে সকলের কত মরণ হয়,তবু পৃথিবীর চিরদিন মাটির উপর মাটি,খাতায় সাক্ষর
জানে একবার মায়ের কোল ছাড়া হলে লজ্জ্বা হবে ভূষণ,আর শৈশব বেদনা বিস্ময়।
একবার ফিরে গেলে ফিরে আসা সহজ নয়,সমুদ্র হতে নদী খুঁজে পায় না পথ
পাহাড় সমতল হয়,সেই পাহাড় উঁচু হতে আবার মেঘ সূর্যের কাছে ধরণা ও ধ্যানে বসতে হয়ই
সমুদ্র করতালিতে যাওয়া যত কঠিন,ফিরে আসতে তার অনেক বেশি ঝড় বৃষ্টি লাগে
এক মুণ্ড সাধনায় ক্রমে ক্রমে পঞ্চমুখ দরকার,কঠিন সাধন যজ্ঞ জাগে।
একবার মাটির পুতুল হলে ভেঙে যাওয়া সহজ,বেলা তিরতির বইতেই থাকবে
আর একবার ফিরে গেলে ফিরে আসা সহজ নয়,অনেক অনেক বৈশাখী মেঘ স্পর্শ হয়
দেহের নীরবতা বয়ে বেহুলা পর্ব আমাদের শিখিয়েছে— সকলে নয় মৃতেরা কেউ কেউ জীবন পাবে।
প্রেম কলঙ্ক পাশাপাশি
যার জন্য জেগে উঠি তার কিল চড়ও আমার কলশি,জল ভরে দিতেই হয়
আশীর্বাদ নিতে এসে জানা হল,অভিশাপ সকল ঝুড়িতে মিশিয়ে তাতেই রাখা আছে
জীবনের জন্য ঘৃণা,জন্ম থাকলে মৃত্যুর পরিসংখ্যানও জানা
আমি জলে নামলে জলখেলা তো হয়ই,তার সাথে মুখে চোখে লেপটে থাকে বালি
তুমি তার হাত ধরেছো বলেই অভিমানও তোমার হল,লাভের সাথে ক্ষতি—-এই সত্য সকলেই ভালোবাসি।
সবদিন আকাশে সূর্য থাকে না,সূর্যের বদলে মেঘ—-জলের স্বাদে জল ঝরে
যাকে আঁকড়ে পিপাসা সেই বেশি তৃষ্ণা দিল আমায়,এ তো বিস্ময় নয়
আগুন জ্বেলে দিলে আগুন কি আমাকে রাখে,আমাকে ঘিরে তীব্র তার শিখা চিরদিন
হাঁড়ির সাথে হাঁড়ি,ভেঙে গড়াগড়ি—–ভেঙে ভেঙে খান খান,মুক্তির ভিতরেই তুমি জেল বন্দী।
ভালোবাসার রক্ত পুঁজ কোথায় ফেলবে,ভালোবাসাই দিয়ে যায় তার মনের মানুষকে
দেখ মেয়ে,প্রেম ও কলঙ্ক পাশাপাশি বইতে হচ্ছে সেই রাধাকে।
লজ্জ্বার মাথা নেই
কালকের মতোই আজকের ভাষা,দুঃখ আমার সুখ আমার
কালকের দিনের মতোই ফেরার গল্প,ফুল আর ঘন সবুজ পাতা
সাদা কাগজ উৎসবে কালো,কালোগুলি প্রথাহীন অবসন্ন হল
কালকের দিনের মতোই বৃষ্টি হল,সেই নদী আমার সাগর আমার
আজ রচনা করি মস্ত পৃথিবী, কালকের মতোই প্রণয় মায়া।
সুখের পায়রা উড়ে,বয়সেও বয়স,কেউ নেই সাথে আমাদের
কালকের মতোই ভাঙচুর ইচ্ছা,কষ্ট পাই কষ্ট দাও নিজেদের
কালকের দিনের মতোই সবুজ সব,শব্দের বিনয় কতটুকু জানি
দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে,লজ্জ্বার মাথা নেই বল কি বলবে শুনি।
দেখ কাল কত আপন,তুমি দাঁড়িয়ে আছো,আমিও থামলাম
কালকের মাথা ছুঁয়ে দুজনের নিভৃত হিসাব আজ কি পেলাম।
ভ্রমণ শেষে ফিরে
ভ্রমণ শেষে ফিরে গেলে বিছানায় একা একা আকাশ দেখি
নদী এসে মাটি খায়,চোখ ছুঁয়েছিল জল
সমস্ত অসুখ এখন তুলে রাখি।
কোথায় যাও ! নদীও গৃহত্যাগ করে খোঁজ নেয় গোপনে
মাটি ক্রমশ ঘাস ও ঘাস ফুলের অপার বিস্ময়
কোনো সংগীতের অসুখেই মানুষ নিঃস্ব নয়
তাহলে কে ডাকে তোমায় নির্জনে !
ভিক্ষা দাও ভিক্ষা নাও,নারী আড়ালে ইচ্ছে জড়িয়ে রাখে
কোথায় যাবে,এমন ফাগুন জ্বর সারা সময় যদি থাকে
আকাশ ফুরিয়ে গেলে কে চেনে তোমায়,ঐ মুরলী মায়ায়!
ভ্রমণ শেষে ফিরে এসো,উনুনে আগুন দিও।