দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের কবিতা

কোথাও রাত্রি ছিল না
সোনালী আমার হাতে রাত্রি হয়
অমাবস্যায় সোনা লীন হয়ে পড়ে
উজ্জ্বলকে ডাকলেও একটা চিন্তা
সেলাই করতে থাকে আকাশ পাতাল
একটি লাশের কাছে আগুন বন্ধু
হয়ে ফুরিয়ে দেয় হিসেবের খাতা
তালবাদ্য স্তিমিত হয়ে এলে নীরবতা ইতিহাস রচনা করতে থাকে সেখানে সে রাত্রিকে খোলে
সুতোর অস্তিত্ব বিসর্জন দেবার পর
খুঁজে নেয় রক্তমাংসের উপমা
প্রসঙ্গে বা প্রসঙ্গান্তরে সেই রাত্রি
ঢুকে পড়ে বন্ধ ঘরের আনাচে কানাচে একটা নদীর হাত ধরে
আর তখনই অন্ধকারের দাঁত
উপচে নেমে আসে হাসির উপাখ্যান আর গুরুগম্ভীর মন্ত্র
শ্মশানের রামপ্রসাদী মুছে নেচে ওঠে নৃমুন্ডমালিনী
ভোর যেন ভোর নয়
ভোরের চোখে দূরদর্শন পরিয়ে দিলে
রাতের গন্ধ মিলিয়ে যাবার পর
সুতো ঠিক চিনে নেয় রিফুঘর
অন্তঃসত্ত্বা মেঘ কিছুক্ষণ পরে
জন্ম দেবে বৃষ্টির
বহুদিন আগুন সহ্য করার পর
মাটির খাঁচায় গান তুলবে নরম পাখি ডানার অভ্যাস ভুলে
গাছের ভিতর ক্রমশ শিবের স্বভাব
জল পাতায় লেখে ওম নাম
কুঠার রচনাটি দেখে এক নির্বিকার
উপসংহার বসে যাচ্ছে শেষ পৃষ্ঠায়
তবুও জল পড়ে পাতা নড়ে এই অন্তমিল ক্রমাগত বাজতেই থাকে
বর্ণপরিচয়ের পর ভাগাভাগি হয় পৃথিবী
বিকেলের অনুচ্চারিত দৃশ্যরা
বিকেলের গভীরে একটা বিকেল দেখতে গিয়ে দেখি সূর্যকে গিলে নিয়েছে কেউ আর তার অর্ধেক দেহ পুরে নিয়েছে কালো চাদরে হঠাৎ চুপ হয়ে গেছে মেঘের
সেতার
এইসব বাজনার কথা এখন বাজে না
বিকেলের দৈন্যতা ধরা পড়ে যায়
রামধনু বিদায় নিলে দায়ভার ফেলে সেইসব যজ্ঞস্থলে পড়ে থাকে পোড়া পাতার গন্ধ একমুখ
সন্ধ্যা নিয়ে
জীবন রেখা শেষ হয়ে গেলে একটা
সেতু গান গাইতে থাকে আর ওপার
থেকে নেমে আসে হারিয়ে যাওয়া পাড়া সেখানে পাখির আত্মহত্যার পর খালি হয়ে যায় বাড়ি
বিকেলের বাকি কথাগুলো চাপা পড়ে যায় মৃত বাগানের জলসায়
চরকি ঘুরতে ঘুরতে অবশেষে বোঝে অদৃশ্য ঈশ্বর টানছে দড়ি
সংগীতের পর এক শান্ত সুবাস
সোনালী আবাসন
১.
আলোকের ঘর কানাগলি পেরিয়ে
দাঁড়িয়েছে বড় রাস্তায়
অন্ধ লিখছি না
এক সাকারে যে এল
শাড়ির শরীরে চেনা ঈশ্বরী
কবিতা ফোটার গন্ধ আসছে
২.
খুলে রাখছি হিসেবের জামা।
পথে কুসুমের অক্ষর।
আঙুল টের পাচ্ছে নরম
পাখির ভেজায় আকাশ হল
এ ছাদে চুলের দীর্ঘ পালা
সামনে বসে আছে
হরফের ভিতর ব্যর্থ চেষ্টা
বেণী বাঁধবার
৩.
রেডিও দুপুর অনুরোধ বাজায়
আসরে গড়িয়ে নামে গত জন্ম
চাদর পাল্টেও বাড়ি বাড়ি থেকে যায়
বড়ি শুকনোর এক উঠোন গল্প
৪.
সন্ধ্যার ভ্রমণ কথা নেই
বেলা চলে যাবার পর
টেলিফোন মরে গেলে
শোকসভা দীর্ঘ হয়ে যায়
পুরনো ট্রাঙ্কে বেরিয়ে যায়
সুবাস ন্যাপথলিনের
দুঃখের উপকথা গুলি
চিঠি না থাকায় বিমর্ষ
জুঁইয়ের পাশে বসে থাকে