গল্পঃ টান
টান
শামীমা সুলতানা
অবশেষে আপদটা বিদায় নিল তবে?
আচানক লাফিয়ে ওঠে মন। খুশিতে ডগমগ। উচ্ছ্বাসের ঢেউ যেন বেরিয়ে আসতে চাইছে বুক চিরে। কিন্তু না, এটা ঠিক হবে না।সব খুশির প্রকাশ ঘটাতে নেই সব সময়।কাজেই মনের লাগাম টেনে ধরে ভিন্ন পথে হাঁটতে হবে।এখন শুধুই কান্দনের সময়।শাশুড়ি মরলে ইচ্ছের বাইরে হলেও, কেঁদে-কেটে চোখমুখ ফোলানো চাই। সুতরাং শুরু হল আহাজারি। আঁচলের আচ্ছাদনে মুখটা ঢেকে বড় ছেলের বউ বুক চাপড়ায় আর কাঁদে-
আঙ্গোরে ভাসাইয়া গেলে গো…। ও মাগো, মা..।
গলার স্বর ক্রমাগত উঁচুতে উঠতে থাকে। শান দেয়া গলার ধারালো আওয়াজ তীরের মতো আঘাত করে প্রতিবেশীর মনে, কর্ণকুহরে।
আহা! কী করুণ কান্না! আকাশ বাতাস কেঁপে ওঠে কষ্ট-ক্রন্দনসুরে।পাখিরা উড়ে যায়, পশুরা অবাক। পর্বতচূড়ায় জমে থাকা তুষার যেন খসে খসে পড়ে বেদনার মিছিলে সামিল হতে।
চারপাশ চাউর হয় বিষাদের খবর।ঝিমিয়ে পড়া দুপুর জেগে ওঠে। স্তব্ধতা ভেঙে খান খান।ঘরদোর ফেলে রেখে ছুটে আসে বউ, ঝি, প্রতিবেশী, শত্রু-মিত্র সবাই। সবাই এসে ভিড় করে সেই আপদের ঘরে।কিন্তু না, লোকজন ছুটে এসে দেখে বুড়ি মরে নাই।মৃতের মতো পড়ে থাকলেও ওটা আসলে মড়া নয়।পেটের ব্যথায় দীর্ঘক্ষণ কাতরানোর পর এখন সে বিরতি নিয়েছে। মুখে কোনো শব্দ নেই। একদম চুপচাপ, নিস্তব্ধ।
শাশুড়ির হঠাৎ এই নিস্তব্ধতার কারণেই বড় বউ সন্দেহ করেছিল- হয়তো বুড়ি মারা গেছে।আর এইজন্যই সে মড়াকান্না শুরু করে।
মৃত্যুর এই আয়োজনের মধ্যে বুড়ির না-মরার আভাস পেয়ে সকলেই যেন হতাশ। কেউ কেউ বিরক্তও বটে।এক প্রতিবেশী বলেই বস-
ও বউ, মরে নাই তো!নড়াচড়া কইরত্যাছে দেহো ।হুদাই চ্যাচাইত্যাছো।উহ! নও বেবাকতে,কাইমকাইজ ফ্যালাইয়া তামশা দেকপ্যার আছি। এই বেডি এত্তো তাড়াতাড়ি মইরবোনা গো।
বউ এতক্ষণে তীব্রস্বরে কান্নাকাটি করলেও মনের ভেতরে আনন্দ বৈ দুঃখ ছিল না, সেই বউ ক্রন্দন থামিয়ে দিল এবার সত্যিকার দুঃখের চাপে।
বুড়ি দীর্ঘদিন ধরে বিছানায় পড়ে আছে।হাঁপরের মতো উঠানামা করে তার বক্ষপিঞ্জর। সাঁই সাঁই আওয়াজ তুলে এতোটা আক্রোশে ঘাই দেয় যেন, থেঁতলে পিষে ফেলবে ভেতরের প্রত্যঙ্গ সব।জ্বালা ধরা ব্যথায় টনটন করে নাভিমূল।দলা পাকায় কুণ্ডলী। মাথাটা চক্কর দেয়। ঘেমে নেয়ে একাকার। মাঝে মাঝে এমন অবস্থা তৈরি হয় যেন- এই বুঝি দম গেল চলে, এই বুঝি অন্তিম বিদায়। বুড়ি তখন গো গো শব্দ তুলে জোরে জোরে গোঙায় আর শ্বাস টানে সর্বশক্তি দিয়ে । যমে আর বুড়িতে এভাবে চলে টানাটানি।
তালপাকা ভাদ্রের তপ্ত দিনে জীবন এমনিতেই দুর্বিসহ। গরমের তীব্র তাপে হাশপাশ করে সবাই। তার উপর অহরহ চলে যদি মুমূর্ষু রোগীর কাৎরানি-চিৎকার, তখন প্রাণের প্রিয়জনও অতীষ্ট হতে বাধ্য। কথায় বলে- নিত্য রোগীর কদর থাকে না। জমিলার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই।দীর্ঘদিন যাবৎ পড়ে থাকা রোগীর কান্নাকাটি আর চিৎকারে অতিষ্ট সব পুত্রবধু। এমনকি পেটের সন্তানেরাও বিরক্ত।
ছোট খাট ব্যবসায় চলে ছেলেদের ঘর-সংসার। করোনা নামক আপদের জ্বালায় প্রায় সব কাজ বন্ধ। থমকে গেছে আয়-রোজগার। বোঝার উপর শাকের আঁটির মতো প্রায়ই চেপে বসে আত্মীয়-স্বজন। বুড়ির মেয়েরা মাঝে মাঝেই আসে অসুস্থ মাকে দেখতে। সঙ্গে থাকে আণ্ডাবাচ্চার ঝাঁক। যতটা না রোগী দেখা, তার চেয়ে পেট চালানোটাই মুখ্য বলে মনে হয় তাদের হাবভাবে।এছাড়াও আছে জ্বালা। বউদের নানা ভুল ধরে,নানা ছলছুতোয় উপদেশ বাতলায় ।মায়ের চিকিৎসার খরচ আরও কতো শত। তিন ছেলে গত সপ্তাহে বগুড়ার সদর হাসপাতালে নিয়ে দেখায়। কতো রকম পরীক্ষা করিয়ে আনে। তবুও জমিলা চ্যাঁচ্যাঁয়।
এই সেই স্বপ্ন তাড়ানো জমিলা।তিন ছেলের মা হয়ে যার অহংকারে পা পড়েনা। স্বপ্ন দেখে আকাশ সমান।প্রতিবেশিদের কথায় কথায় ঝাড়ি দিয়ে বলেছে—
এইতো আর কয়ডো বচ্ছর। আমার তিন পোলা ডাঙ্গোর অলি ভাতের অভাব অইবো নালো মাগীরা। তহন বেবাক প্রতিশোধ নিমু।বেবাক কতা এই হানে জমায়ে রাখত্যাছি।”তিন পোলার মাও রাজরাণী এক পোলার মাও খুটে কুড়ানি”কতাডো মনে রাহিস।
বুক চাপড়িয়ে শাসায় আর হনহনিয়ে দ্রুত তালে কাজ করে যান্ত্রিক শরীরে।
সবাই পড়াশোনা করতে স্কুলে যায়। জমিলার কেবলই ভাতের চিন্তা।ওদের বাপে তো বারো মাসের নয় মাস থাকে অর্থের সন্ধানে। জমিলা বুক চিড়ে জমানো কষ্ট অভাব খিদে সব বুকের মধ্যে শাণ দেয় , লুকিয়ে রাখে।যুগ যুগ ধরে জমিয়েছে বুকে।জমানো ভার এখন আর সইতে পারে না জমিলা। এখন তার বুকের যন্ত্রনা জ্বালা আর জ্বালা। চিৎকারেও যায় না।তবুও চ্যাঁচ্যাঁয়। কান্দে,হাঁপরে কিল থাপ্পরে লাল হয় শরীর।
আচ্ছা মা– আপনের এল্লাও আক্কেল নাই!মরদ পোলাডা কেবলই হুইছে। চোহে দুনিয়ার ঘুম, শইলডা দুর্বল।এবা চিল্লাচিল্লি হরলি ঘুমাইবো কেবা হইরা।হেই কোন ব্যানবেলাত কামে যায়।কেবল বিচন্যাত গাওডো থুইছে।
মায়ের ঘরের সাথেই গা ঘেঁষা ঘরে বড় ছেলের আবাস।এতো শব্দে ত্যক্ত বিরক্ত হয় ওরা।উঠতে বসতে ত্যাচড়া কথায় জ্বলন্ত শরীরে আরও বেশী জ্বালা ধরায়।
সহ্যি অয়না মাগো। কী হরমু আমি।
আঙ্গোর তালি কী হরব্যার কন। এই অভাব দুর্যোগেও ডাকতর দেহাইলো। মাইনসে ভাত পায়না। আর আঙ্গোর ট্যাহা মরণে কামড়ায়। ট্যাহাক ট্যাহা কইত্যাছে না। তবুও বুড়ির কান্দন শেষ অয়না।এই বুড়িক আল্লায় আক্কেল বুদ্ধি কবে দিবো।
জমিলা লজ্জা পায়।পেটের যে কামড়ানো জ্বালা পোড়া ব্যথা। মনে হয় আগ্নেয়গিরির গুপ্ত পথ। আস্ত এক শীল নোরা পাথর সর্বক্ষণ গুতায়।পাকস্থলী মুচড়ে আনে ছেঁড়া শাড়ির মতোই। নাড়িভুঁড়ি পচপচ শব্দে ছিঁড়তে থাকে।তবু ব্যথা যায়না।
খামচানো মুখে খিস্তি খেঁউড় চলে বহুক্ষণ।শরীরের সব শক্তি দিয়ে ধাক্কা মেরে আটকে দেয় দরজার খিল। ঘুণ ধরা পাল্লা ঝাঁ ঝাঁ শব্দে থামিয়ে দেয় সব আওয়াজ গোঙ্গানি।বউ নিজ কক্ষে যায়।নিজেদের দরজাটায় খিল টানে। বিছানায় স্বামী সোহাগের পুরোটা বুঝে নেয়।রাতের না পাওয়া অংশটার হিসেব চুকিয়ে নিয়ে নিস্তেজ দুটো দেহ ঘুমায় শান্তিতে।
বন্ধ খিলানের এপারে জমিলা লড়ছে। জীবনের সাথে দমের সাথে। জ্বালা পোড়া বেদনার সাথে। ধীরে ধীরে অবশ অসার হয় দেহ। স্বপ্ন নাকি ঘোর?পাল তোলা একটা নাও। বাতেন তাকে ডাকে।
ও বউ, বউ, আয় তাড়াতাড়ি। তোক নিবার আছি রে।
জমিলার মুখে অস্ফুট কষ্টের হাসি।হাচা কইত্যাছো? তুমি আমাক নিবা?এতদিন পর আমাক মনে অইলো?
হ্যাচারে হ্যাচা। ওই চ্যায়া দেখ, নাও নিয়া আছি তোর নাইগা। আটা নাইগবোনা।নু যাই তাড়াতাড়ি।
তালি যে বড় বুজান কইলো তুমি ম্যালা বেজার আমার উপর।তোমার অভিশাপ ন্যাইগছে।বুবু কয় বাতেনরে কত্তো জ্বালাইছোস হেই জন্যি তোর এই প্যাটের বেদনা। বেবাগ গাইল পেটের মধ্যি ঢুইকা তোরে পোড়াইত্যাছে।
আমাক কয় বাতেনের কব্বরের কাচে যা। পায়ে পোইরা কান্দেক, মাপ চা। আমি এতো কষ্টে আছি আইটা ওই কব্বরের পায়ে কেমনে যামু? আইছো যহন আমাক মাপ কইরা দ্যাও। আমার আর সয়না।
নারে পাগল। আমি তোক কেবা হোইরা অভিশাপ দিমু।তুই আমার আদরের পুতলা বউ। কুনুদিন সুখ দিছি মনে আইসে না। কিন্তুক ভালাবাসতামরে পাগলী। পেটের ভাত জোগাইব্যার পারি নাই। দিন রাইত না খাইয়া থাকসস। হেই জন্যি এই বেদনারে জমিলা। তোর কান্দন আমি আর হুইনব্যার পারতাছি নারে। নু যাই। আমি আহুন যা হরমু হুদা তোর জন্যি।
বুকের ওমে জড়িয়ে নেয় বাতেন। কতো দিন এভাবে আদর করে জড়িয়ে ধরে নাই। বাতেনের এই আদর পেয়ে অভিমান রাগ আরও মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।
জমিলা ধাক্কা দিয়ে ছাড়িয়ে নেয় নিজেকে।আরও একবার রাগ ওঠে। যত রাগ এই বাতেনের ওপর।
কি কও এইন্যা। আঙ্গোর পোলা মাইয়া আছে নাহ?
তুমি খালি আমাক নিবা ক্যা?তুমি কবে থাইক্যা এবা সাত্তপর অইছো?
হ, তোর পোলা মাইয়া ঘরে কপাট আটকাইয়া ঘুমায়।তারা বেবাকে সুখেই আছেরে জমিলা। যে পোলা মাইয়াক নিজে না খাইয়া খাওয়াইছস অসুখ বাধাইছস তারা দেখ অসুস্থ মাক ঘরির মধ্যি কপাট আটকাইয়া রাইখছে। আর মরদ পোলা বউ নিয়া দিন দুহুরে হুইয়া আছে। আমি তোক কোন দিন আদর যত্নি করতি পারি নাইরে জমিলা। তুই-ই আমাক মাপ কইরা দে।
হ, তাও তো আঙ্গোর নিজের পোলাপান। মরলি আঙ্গোর নাম নিবো। আর তুমি কী হোরছো। আমি বুলি নাই গো। কামাই হোইরা আমাক ট্যাহা না দিয়া দিচো পাড়া প্রত্তিবেশিক। দেহো, শইল্যে কত্তো দাগ আহুন ও সাক্ষী।আমি তোমাক মাপ করুম না।–আহ্লাদী আবদারে কান্নার সুর তোলে বাতেনের কোলের কাছে।
মনে পড়ে বাতেনের।বছরের অর্ধেকের বেশী সময় বরেন্দ্র অঞ্চলে করাতির কাজে বেরিয়ে যেত বাতেন।হাতে কোন টাকা কড়ি না দিয়েই বেরিয়ে যেত অর্থের সন্ধানে। একমাত্র ভরসা পাশের এক প্রতিবেশী। তাকে ডেকে অনুরোধ করতো– ভাইরে, এই কয়ডা মাস তোর ভাবিক চালাইস। আমি আইসা বেবাক দেনা মিটাইয়া দিমু।
শুধু প্রতিবেশীর ভরসায় চলে না পেট।কাটে না দিন। ভাত কাপড় ঔষধ কতো কিছু চাই।ছয় সন্তানের মা জমিলা। কখনো ভাত,কখনো রুটি, কখনো শাক পাতায় পেট ভরায় সন্তানের। নিজের জন্যে তলানি। না থাকলে শুধুই দুই গ্লাস পানি।
একদিকে স্বামীর দীর্ঘ অনুপস্থিতি, তার উপরে এতোগুলো নিরন্ন মুখ। কেবল গতরই সম্বল রুগ্ন জমিলার।হাড় জিরজিরে শরীরে কতইবা শ্রমের চাপ নিতে পারে? তবুও সে গতর খাটায়, দুমুঠো অন্নের জন্য।কখনও বা ধারে-দেনায়, চেয়ে-চিন্তে।
প্রতিবেশীর গঞ্জনা, পাওনাদারের কঠিন তিতা কথা সবই সহ্য করতে হয় মুখ বুজে।
সময় চলে যায় তবু নিজস্ব নিয়মে। দিনে দিনে মাস, মাসের পরে বছর এভাবেই কেটে গেছে যুগ। পঞ্জিকার পাতা উল্টে যায়, উঁকি দেয় নিত্যনতুন দুঃখ। তবু জীবনে কোন সুখ আসে না জমিলার।
তারপর ফিরে আসে গোব্যাচারা স্বামী বাতেন। ঘরের চৌকাঠে পা দেবার আগেই চতুরেরা বাগিয়ে নেয় উপার্জনের বেশ খানিক। প্রতিবাদ করতে গেলে স্ত্রী বেচারা খারাপ,জাঁদরেল বেহায়া, চশমখোর।
চতুরের ফাঁদে অসহায় সরল হতভাগ্য বাতেন আর জমিলার জীবন ছিল বন্দী।
এদের নিজের পুরোটা নিজের অন্যের কিছুটাও নিজের। গোব্যাচারা ভালো মানুষটাকে নানা ছলনায় মন ভুলায়।বাগিয়ে নেয় হাতিয়ে নেয় ধান্দাবাজের দল।বাতেন স্মৃতিচারণ করে। দুই ফোঁটা তপ্ত অশ্রু ঝরে পড়ে বুক বেয়ে।
জমিলা ও কম না।জীবনে পোড় খাওয়া নারী ঠিক বুঝে নেয়। কড়ায় গণ্ডায় হিসাব চায় টাকার। কথায় তার ঝাঁজ।আগুনে ঝলসানো রাগ।ষোল আনা হিসাব চায় তিন চার মাস কষ্ট আর তিক্ত জীবনের।অকথ্য গালিগালাজে জ্বালা মেটাতে চায়।মেটে না। সেই আট বছর বয়সে বাতেনের ঘরে এসেছিল পুতুলের ঘর বুকে চেপে। আজ তার নিজের ঘর তার বুকেই চেপে আছে কৌশলে। না পারে ছোটাতে না পারে বাঁচতে।অশ্রাব্য গালি দেয় স্বামীকে।
বউয়ের বেপরোয়া ব্যবহারে পুরুষত্বে আঘাত হানে।ঝনঝন করে বেজে ওঠে পৌরুষ।বের হয়ে পড়ে ভালো মানুষী থলের বেড়াল।রাস্তার ক্লান্তি আর বউয়ের দুর্ব্যবহার নিজেকে থামাতে পারেনা বাতেন।
আঘাত করে, পেটাতে থাকে , বজ্জাত হারামি মাগী আরও কতো গালি।
আশেপাশের মানুষজনও উৎসুক।তাল দেয় ঢোল বাজায়।সুর তোলে স্বার্থপর সমাজ।
একে অন্যের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে।
কেউ বলে– আহারে! পোলাডি কতডা ভালো মানুষ। আর মাগী একটা জুটছে ছেনাল, বদমেজাজী, হারামজাদী।
কেউ বলে– মাগী জামাই আইছে এদ্দিন পর। হ্যার সেবা যতন হরা বাদ দিয়া ট্যাহার ইসাব নিয়া বইছে। ভাল অইছে। মাগীর শিক্ষা অইছে– পিঁটাও গো। আচ্ছা মতো পিঁটাও। মাগীর আড্ডি ভাইঙ্গা দাও।
আরেক জন বলে–জামাইডো বাইত থান যাওয়ার হাতে হাতেই পাড়া দাবড়ানি শুরু।আরে ভাই তুমি ঠিক করছ। এবা বউরে আচ্ছা মতন মাইর দ্যাওন লাইগবো। মাগী তোর জামাই ট্যাহা কামাই হরছে। তার যা ইচ্চা হইরবো। তাতে তোর বাপের কী লো?
চারপাশের গুঞ্জন।পাড়ার আবাল বৃদ্ধা বণিতার ঢল।হাঁট বসেছে যেন দেখছে যাত্রাপালা।র সঙয়ের নৃত্য। মজা দেখার লোকের অভাব নাই।আমুদে নাটকের দৃশ্য চলে বেশ খানিকক্ষণ।
অমানবিক মানুষের দল একবারের জন্যেও ভাবে নাই বউয়ের কষ্ট?
দগদগে স্মৃতিচারণ করে বাতেন জমিলা। বউটার কষ্টে কাটা দিনগুলো দুচোখের ঝাপসা পাতায়।ভিজে যায় বুক গড়িয়ে পড়ে চুপিচুপি নিঃশব্দে। চিনচিনে কষ্টে নড়েচড়ে হৃদয়।
জমিলারে, হেই জন্যিই তো তোক নিবার আছিরে।নু যাই। আহুন বেবাকে ঘুমে আছে। ঘুম ভাঙ্গলি কইলাম যাইব্যার দিবোনি ন্যা।
বাতেনের লোমশ বুকে মুখ রাখে জমিলা। ক্লান্ত দুই হাতে জড়িয়ে ধরে স্বামীকে। ঠোঁট দুটো বাড়িয়ে দেয়। একবার শুধু ছুঁতে চায় প্রিয়স্পদকে।
তারপর কী হল কে জানে। বন্ধচোখেই দেখতে পায়- ছেলেমেয়ে, আত্মীয় পরিজন সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে।