আহমেদ জামিল’র অণুগল্প

আহমেদ জামিল’র অণুগল্প

মেহমান

আমাদের বাসায় একটা সদ্য প্রসব করা বাদামি পিচ্ছি ইঁদুরএসেছে। ও কোত্থেকে এলো জানি না। দুদিন হলো- এতো ছোটশিশু ইঁদুর, দেখতে ভারি সুন্দর। তখন পবিত্র রমজান মাস।রাতের খাবার, আমরা সেহরি খাচ্ছি। ওকেও খাবার দিচ্ছি …

এখন ডাকলেই পিচ্ছি ইঁদুরটি আমার পাশে দাঁড়িয়ে বেড়ালেরমতো আমার পায়ের কাছে ঘুরঘুর করে। আমি ছোটবেলায় ঢাকায়রাস্তায় কুকুরের ছানা, বিড়ালের ছানা (মা ছাড়া পড়ে থাকতোঅনেক সময়) আমি উঠিয়ে নিয়ে আসতাম আমাদের বাড়িতে।

ওদের বাসায় রেখে দিতাম। এই জন্য বাসায় রাগ করতেন আমারমা। কারণ অতিরিক্ত বেড়াল কুকুরছানা বেশি হয়ে যাওয়াতে।প্রচুর জায়গা ছিল আমাদের বাসায়- হয়তো একটা ফার্ম করা যেতেপারতো কুকুর-বেড়ালের। মাও পালতেন হাঁস-মুরগি। একটাবেড়াল। খাবার দিতেন নিজের হাতে। আমাকে একদিন মুরগিজবেহ করতে বললেন মা, বাসার কাজের লোকটি বাইরেগিয়েছিলো। আমি রাজি হয়নি। আমার কষ্ট হতো একটা ছোটপ্রাণী হত্যা করবো এটা আমার সহ্য হতো না। কোরবানির ঈদেএকবার গরু জবেহ করার সময় ডেকেছিলেন বাবা, আমিবলেছিলাম আমি পারবো না। আমার কাছে কষ্ট হতো, কেন জানিমনে হতো আমার কাছে নিরীহ প্রাণীদের হত্যা করার অধিকারআমার নেই। আজও কোনো প্রাণী জবেহ করিনি আমার যতটুকুমনে পড়ে। বেড়াল, মুরগি, কুকুর, পাখি, কবুতর এবং আমাদেরহাঁসগুলোকে খুব বেশি আদর করতাম। বিদেশে এসে দেখলামপোষা প্রাণীদের আলাদা রেসপেক্ট। আমি তো দেখে আমার আগ্রহআরো বেড়ে গেলো। ছোটবেলায় দেখেছি নেড়ি কুকুরদের লাঠি ওঢিল মেরে তাড়িয়ে দিতো। অসুস্থ প্রাণীকে মানুষরা ভাগিয়ে দিচ্ছে।আমি পারতাম না। আমি দেখেছি একটি রাস্তায় নেড়ি কুকুরগাড়িতে ধাক্কা খেয়ে এক্সিডেন্ট করেছিল। কুকুরটি অসুস্থ হয়েপড়েছিল বলে আমি ওকে রিকশায় করে নিয়ে পুরনো রেলস্টেশনফুলবাড়িয়া ক্রস করে পশু হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। ওকেরেখেছিলো হাসপাতালে রেখেছিলো দুদিন। পরে আমি বাসায়নিয়ে এলাম। কুকুরটা সুস্থ হয়ে বেঁচেছিল দীর্ঘদিন।

মূর্খ

আমার পরিচিত বন্ধুর ছোট ভাইয়ের সন্তানদের জন্ম ঢাকায়। তিনবছর হলো ওরা আমেরিকাতে এসেছে। ওদের দুই সন্তান বাংলা বইপড়তে চায়, দেশেও বাংলা স্কুলে পড়তো। ওদের মা বলেছে, বাংলাপ্রাকটিস করে লাভ নেই বাবা এই দেশে। বাংলা বই পড়া ইংরেজদেশে বোকামি। ইংরেজিতে কথা বলবে, ইংরেজি বই পড়বে। ওদেরমা ইংরেজিতে কথা বলে সন্তানদের সাথে সবসময়ে। আমিবলেছিলাম ওদের মাকে দুটা ভাষা জানলে ওরা বড় হলে কাজেলাগবে। যখন চাকরি করবে বা ব্যবসা করবে তাদের কাজে লাগবেদুটো ভাষা জানলে যুক্তরাষ্ট্রে চাকরির ক্ষেত্রে অনেক ফ্যাসিলিটিদিয়ে থাকে। ওদের মা হেসে উড়িয়ে দিলো আমার কথা। আমাকেবললো, বাংলা পচা ভাষা, বাংলার কোনো ভ্যালু নেই এদেশে।

বাংলাদেশকে অনেকে চিনে না এদেশের অনেক লোক।

এদেশে যখন আমার সন্তানরা থাকবে তখন ইংরেজি শিখুকআপনার যুক্তি আমি মানতে পারছি না ভাই। ‘বাংলা’ বাংলাদেশেই পড়ে থাক।

বাংলা নববর্ষ

আমার কথা হলো বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে পান্তা ভাত আর ইলিশভাজা কে চালু করেছিল। সম্রাট আকবর তো নয়? এই রেসিপি কেদিলো? কোন পাগল- নাম জানতে চাই।

আমার এক বন্ধু এই মহামারির মধ্যেও গত পরশু দিন কুইনসেনিজেদের বাসার মধ্যে একটা নবর্বষের পাটি করেছিলো। যদিওকোনো বন্ধুবান্ধব আসেনি করোনাকালের জন্য। শুধু পাশেরবাসার এক আমেরিকান-গ্রিক দম্পতি এলো।

তারা আসার পর তাদের নিয়ে আমার বন্ধু ও তার স্ত্রী বসেডাইনিং টেবিলে বাংলা শুভ নববর্ষ পালন করতে বসে।

পাশের বাড়ির পড়শির নাম কালাহান ও তার স্ত্রীর নামজেনিফার। কালাহান ও জেনিফারকে টেবিলের সিরামিকের বড়পাত্র থেকে চামচ দিয়ে তাদের দুজনের পেল্টে পানিসহ পানতাভাত ঢেলে দেয়। আরেক পেট থেকে ভাজা ইলিশমাছ দুটুকরা করেদেয় দুজন গেস্টকে। আরেকটা বাটিতে পোড়া শুকনা মরিছকালাহান বাসিভাত খেতে শুরু করে বলে উঠলো, এটা কী ধরনেরসুপ? আমার বন্ধু বললো, সুপ নয় আমরা সুস্বাধু পানতা ভাতÑ আমরা বাংলা নববর্ষে খাওয়াদাওয়া করি।

কালাহান বললো, এতো বিশ্রী গন্ধ খাওয়া হাইজেনিক নয় তো? আমি খেতে পারবো না দুঃখিত ফ্রেন্ড। আমার মুখে দিয়ে ঢুকবেনা। কালাহানের স্ত্রী একই কথা বললো আমার বন্ধুকে। তবেভাজা ইলিশ পেটে দেয়ার পর কালাহান ও তার স্ত্রী খুব মজা করেখেলো। খুব সুস্বাধু হয়েছে বললো দুজনে। কালাহান বললোপানতা ভাত, পচা ভাত কেন বানিয়েছো দোস্ত?

এটা কোনো খাবার হলো! আমার বন্ধু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।লজ্জায় পড়ে গেলো। তোমাদের নতুন বাংলা বছরে এই ধরনেরপচা হাইজেনিক নয় বিষাক্ত খাওয়া কারো পরিবেশন করা উচিতনয়। আমি বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টে বেশ কয়েকবার খেয়েছি বিরানি-পোলাউ খেয়েছি। এই বাসি ভাতের আইটেম খুঁজে পাইনি।

নতুন বছরে তোমরা এই বাসি ভাত খাওয়া বন্ধ করো অতি সত্বর।যদি এই পচা পানি মেলানো বাসি ভাত খেয়ে একদিন পুরোবাঙালি জাতি হয়তো অসুস্থ হয়ে যাবে…