দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের কবিতা

দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের কবিতা

টুকরো টুকরো কার্তিক


মেঘের ভিতর ছাইরঙ
হু হু শূন্যতা কুড়োচ্ছে অনুভব
মর্জিনার থেকে সরে গেছে উজান
দেশ মানে কি সে আজও বোঝে না
মাটির কাছাকাছি মরা আম্মার গন্ধ পায়


শূন্য বাড়িটা গিলে খেতে আসছে
সন্ধ্যার আঁচড় পড়ছে বিষণ্ণতায়
অভাব নেমেছে ভরা বাগানের শরীরে
নীরবতা পালন করছে অভ্যাসের অন্ধকার
ভালো থাকা কারোরই বোঝা হয়ে উঠল না


ঘামের ঘ্রাণ নিয়ে পড়ে আছে মাথার বালিশ
এলোমেলো ডালপালায় আটকে কুয়াশা
বাতাস ডাকছে ঝিঁঝিঁদের
বাঁশপাতারা কথা বলছে আঁধারের সঙ্গে
শীত এসে গেল নিঃশব্দে ভাবনার নৌকায়


রূপকথায় মর্জিনা নেই
ইতিহাসের পাতায় একটা আধখাওয়া চাঁদ
দক্ষিণ দিকের জানালার খোলা চাহনিতে
তেতো কথা বিনিময় করছে বমির ভাষায়
সায়ার নীচে গড়িয়ে নামা রক্তের মুখে কুলুপ

বেদি ক্রমশ অভ্যাস করছে শূন্যতার পাঠ
কিছুদিন আগেও সুচিত্রা সেনের গাল সিঁদুর খেলেছে
কে যেন আবির গেয়েছে ভোরের আশা
কাঠামো মাটি ধুয়ে ফেরে নি এখনো
শুধু শুয়ে থাকা একা কুকুরের গা ভর্তি জল

পুরনো গ্রামাফোন বসে আছে চোঙ মুখে
হারিয়ে লং প্লের পিন হঠাৎ বিষণ্ণতায়
থেমে গেছে মাঝপথে তালাত মামুদ
বহুকাল চিঠি লেখা হয় না গানের কলমেও
ছবিটিও ভীষণ ধূসর জগন্ময় মিত্রের তুমি
টিউবের ক্যানভাসে


ব্রিজের তলায় অন্ধকার নিয়ে হাঁটছি
হিমেল গায়ে কোনো জোনাকি নেই
গাছেদের কথায় অবিশ্বাস টাঙানো
শ্মশানের দৃষ্টি গাঁজাড়ুর মতো রক্তাক্ত
ধোঁয়া নিয়ে যাচ্ছে কাউকে অনেক দূরে


কেদারার ভিতর ঢুকে যাচ্ছে বারান্দার আরাম
সংগীতের রাগ টেনে নিয়ে যাচ্ছে পুরনোয়
কাগজের গা বেয়ে নেমে এসেছে
আপেল বাগানের রক্ত
নভেম্বরের কষ্ট বুকের কাছে পড়তে পারছি না


গন্ধের ভিতর নদী আসছে নীচু হয়ে
আখের খেতের কাছাকাছি রসের সন্ধানে
ছোট ছোট পাথর শুয়ে নির্বিকার
দেখছে ডানার ছায়া জলকুসুম
যাপনের শেষে চুপ হয়ে আসছে শব্দকোষ

১০
গল্প একটা দুঃখের চাষ করছে দেশভাগের পাতা লিখছে ইজ্জত খোয়ানো
একটা কুমারী সময়ের কথা
সন্ধ্যার সে কাত্যায়নী রূপ দেখছে কুয়ো ও চাঁদ
আসলে ছায়া সবসময় একটা বিভ্রান্তিমাত্র