গল্প: সৌভিক ফিরে এসে

সৌভিক ফিরে এসে
সালেহা চৌধুরী
ফিরে এসেছেন আবু সৌভিক পরাগ। দেশের বাড়িতে। থাকেন বিদেশে। ফিরে এসেছেন দশ বছর পর। এসেই দখল করেছেন চাচার ঘর। চাচা অবশ্য খুশী মনেই ঘরটা দিয়েছেন পরাগকে।— ঠিক আছে বাবা। তুমি এখানেই থাকো। ঘরটা তোমার পছন্দ?
ভীষণ। জানালার ওপারে সবুজ মাঠ, গাছ, পুকুর, পাখি। পাখির ডাক। সকালবেলা — চোখ গেল ঘুম ভাঙ্গায়। এতদিন বিদেশে এসব দেখিনি।ইস্ কী সব অপূর্ব দৃশ্য! এই বলে সৌভিক পরাগ জানালায় দাঁড়িয়ে থাকেন। বোধকরি দশ বছর পর দেশে ফিরলে এমনই করে মানুষ। চাচা এমন দৃশ্যে বোধকরি নিজের ঘর হারানোর শোক ভুলে যান। তিনি অবশ্য তাঁর ছোটভাই রাশেদের ঘর শেয়ার করছেন এখন। এই বাড়িতে থাকেন পরাগের দুই চাচা — শাহেদ আর রাশেদ। ফুপু হাসনাহেনা। হাসনাহেনা বিধবা। একটি মেয়ে নিয়ে থাকেন। মেয়েটি কলেজে পড়ে। বাড়িটা একসময় সৌভিক পরাগের বাবা রাজ্জাকএর ছিল। তিনি মারা যান। আর পরাগ বিদেশে চলে যায়। কাজেই এই বাড়িতে দুই চাচা আর ফুপুই থাকতে শুরু করেন এবং এখন তাঁরা পারমানেন্ট বাসিন্দা। পরাগ বিদেশে যাবার আগে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছিলেন। এখন আমেরিকার আলাবামাতে কোন এক কোম্পানিতে কাজ করেন। বিয়ে করেননি। তবে শোনা যায় গার্লফ্রেন্ড আছে তাঁর। সৌভিক পরাগের বয়স প্রায় চল্লিশ ছুঁই ছু্ইঁ। কিন্তু দেখতে লাগে খুব বেশি হলে একত্রিশ। মাথা থেকে এক গোছা আঙুরলতার মত চুল কপালে পড়ে থাকে। তখন তাকে দেখতেও লাগে অন্যরকম। হাসনাহেনা বলেন — রাজকাপুরের মত। মিতি বলে—অসাধারণ।
কি করছো মিতি? ফুপুর মেয়ে মিতি ছাদের আলসেতে বুক লাগিয়ে কী যেন করছিল তাকে প্রশ্ন করেন পরাগ। পরাগ যে ছাদে এসেছেন সে খবর মিতি জানতেও পারেনি। তাঁর মধ্যে এক ধরণের গোপনীয়তা আছে। তাঁর চলাফেরাও সবসময় বোঝা যায় না। যেমন করে হেঁটে তিনি হঠাৎ মিতির পিছে এসে দাঁড়িয়েছেন, এমন দৃশ্যে মিতি চমকে যায়। যেন জ্বিন না হলে কোন যাদুকর। বাতাসে ভর করে এমন করে হাঁটতে পারে কেউ? অবশ্য তিনি যাদু জানেন। বাবাতো নামই রেখেছিলেন সৌভিক। যে নামের অর্থ যাদুকর। সৌভিক কথা দিযেছেন একদিন তিনি সকলকে যাদু দেখাবেন। এবং যাদু দেখিয়ে বিস্মিত করবেন। তিনি মিতির পিঠে আলতো করে হাত রেখে বলেন কী করছো এখানে?
মিতি বা মিতালি বলে — পাখি দেখছি। আর ভাবছি।
কী ভাবছো মিতি?
ভাবছি ওরা সব কোথায় থাকে আর কোথা থেকে আসে? অবাক লাগে আমার ঋতুতে ঋতুতে পাখিদের রকমফের।
সৌভিক পরাগ মিতির পাশে দাঁড়িয়ে বলে — যেমন করে আমি এসেছি তেমন করে। দেখছো না ওরা সব শীতের পাখি। শীত থেকে বাঁচতে এসেছে।
মিতি হাসে। – এতদিন কী আপনার শীত করেনি পরাগভাই।
তা করেছে। তবে আসার সময় হয়নি।
এখন কী তাহলে শীতের কারণেই এখানে?
এ ছাড়া আবার কী কারণ? নিজের দেশে ফিরে এসেছি। এসেই দেশটাকে পছন্দ করেছি। অবশ্য যখন চলে যাই বয়স ছিল উনত্রিশ। তার সঙ্গে আরো দশ বছর যোগ করলে বয়স যা হয় আমার তাই। তখন কিন্তু দেশটাকে এমন মনে হয়নি। এখন যা মনে হয়।
এখন কী মনে হয়?
এমন দেশটি কোথায় খুঁজে পাবে নাকো তুমি। একটি মিস্টিরিয়াস দেশ। গাছে গাছে পাতায় পাতায় আর রোদে-বৃষ্টিতে কেবল রহস্য, মিস্ট্রি।
বেশ একটু নিবিড় ভাবে দুজনে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। একজন প্রায় চল্লিশ। আর একজন উনিশ। অনেক গল্প হয় দুজনার। প্রায় দুপুর পার করে। দেশ-বিদেশের গল্প, মানুষ আর জীবনের গল্প। এর সঙ্গে ফুলকির মত প্রেম ও ভালোবাসারও গল্প। তারপর ছাদ থেকে দুজনে নিচে নেমে আসে। হাসনাহেনা ফুপু বলেন — কী করছিলে তোমরা ছাদে?
তখন মিতির চুলে ছাদের টবের বাগান থেকে তোলা একটি ফুলের ছায়া। পাখা মেলে বসে আছে একটি ফুল।মেয়েকে দেখেন হাসনাহেনা। পরাগ সত্যিই মেয়েটাকে গল্পে ভোলাতে পেরেছে মনে হয়। কেমন হাসি হাসি খুশী খুশী চেহারা মিতির। ছাদের বাগানটা মিতির। ও বলে — এ আমার ব্যাবিলনের শূণ্যদ্যান। মা আবার প্রশ্ন করেন — কী করছিলে তোমরা ছাদে?
গল্প। এই বলে মিতি ঘরে চলে যায়। আর পরাগ উঠোনের একটি ছড়ানো চেয়ারে বসেন। মাঝখানে চা টা এইসব। রাশেদ সেখানে। ও চা খেয়েছে। সৌভিককে এক কাপ চা ঢেলে দেন হাসনাহেনা। বলেন — মিতি কিন্তু সকলের সঙ্গে কথা বলে না। সকলে মনে করে দেখতে ভালো সেই অহংকারে।
কেন আমার সঙ্গে তো বেশ কথা বললো।
হাসনাহেনা হাসছেন। — দেখে খুশী হলাম। দেখ তুমি যদি ওর এই বদনামটা দূর করতে পারো। ছেলেদের সঙ্গে সহজ ভাবে মিশতে পারা গুণ। সে গুণটা ওর নেই। ছেলে দেখলে কেমন একটু জবুথবু ভাব করে থাকে ও। আমার ভালোলাগে না। পৃথিবী বদলে গেছে। ছেলেমেয়ে কাঁধে কাঁধে লাগিয়ে কাজ করবে তবেই না।
ও নিয়ে আপনি ভাববেন না। আমার সঙ্গে জবুথবু? হতেই পারে না।
তা তুমি থাকবে কতদিন পরাগ?
একমাস বা দুইমাস। চারপাশের সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে আসছে। বলে পরাগ উঠোন থেকে দূরের মহানিম গাছটার দিকে তাকিয়ে, ফুলগাছে ভরা উঠোন গাছটাকে জরিপ করে। ঢাকায় এমন বাড়ি আর উঠোন ভাবা যায় না। যা দেখলাম এবার সে এমন ডাকায় এখন সব ফ্লাটবাড়ি। আমার বন্ধুর ‘গুলমোহর ভিলা’ এখন ‘দি হাইটস’। ভালো লাগেনি তাই এখানে চলে এসেছি।
তা ঠিক। জানোতো এখানেও ডেভোলপার আসতে শুরু করেছে। অনেকেই বড় বাড়ি ফ্লাটবাড়ি করছে।
পরাগ তখন কী যেন ভাবছে উত্তর দেয় না। বলেন হাসনাহেনা — বড় ভাইজান চলে গেলেন। ভাবীতো তারো আগে। এই বাড়ি নিয়ে কিছু ভেবেছো?
না তো ফুপি। কী ভাববো। পরাগ আপনমনে চা খেতে থাকে। বগুড়ায় নানা সব সুন্দর সুন্দর বাড়ি তৈরী হতে শুরু হয়েছে বা হচ্ছে সেসব পরাগ দেখেছে। এখানেও ডেভেলোপারদের যাতায়াত শুরু হয়েছে। বাড়ি গুলো গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে ফ্লাটবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। আকাশের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে এখানেও কিছু ফ্লাট-বাড়ি। বর্তমানের বাঁধহীন ঢেউ।
দুই চাচা, ফুপি আর মিতি এই বাড়িতে বেশ নিশ্চিন্তেই আছে। হঠাৎ পরাগ আসাতে বাড়ি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন হাসনাহেনা। চাচারাও হয়তো কিন্তু কিছু বলছেন না। তারা জানেন বেড়াতে এসেছে পরাগ, বেরিয়ে আবার চলে যাবে ও। ‘সন্ধ্যাতারা’ নামের বাড়িটা ওর বাবার স্মৃতি নিয়ে বগুড়ার সুত্রাপুরে ভালোই থাকবে। যে বাড়ির চারপাশে গাছপালা। উঠোনে চাপকল। নিম, ডালিম, সফেদার গাছ। লেবু আর রজনীগন্ধা। এমন বাড়ি দেখলে আজকের দিনে নস্টালজিয়া হয়। পেছনে একটি ছল ছল পুকুর। এখনো ভরাট না হয়ে পুকুর হয়েই আছে। যেখানে মাছেদের ভেসে থাকা। কখনো মাছরাঙ্গাদের আসা যাওয়া।
দেখতে দেখতে মিতি আর পরাগ গভীর বন্ধু হয়ে যায়। বয়সটয়স কোন কাজের কথাই নয়। কাজেই মিতি যে কথা বলে না বা বলতে পারে না সেসব এখন ওকে দেখলে কেউ বলবে না। মিতি এখন প্রজাপতির মত অনেকটা। পরাগ সত্যিই ওকে ওর নিজস্ব ‘কুকুন’ থেকে বের করে এনেছে।
দুজনে মিলে ঘুরছে নানা জায়গায়। ফুপি খুশী। বিদেশের নানাসব ডিগ্রিফিগ্রি করা মানুষ কিন্তু কত সহজ ও।— ঠিক রাজ্জাক ভাইয়ার মত। কেমন প্রাণখোলা আর দিলদরিয়া ছিলেন রাজ্জাক ভাই। মনে মনে বলেন হাসনাহেনা। তাঁর বয়স বোধকরি পঞ্চাশ। অনেকদিন আগে মিতির বাবা মারা গেছেন। হাসনাহেনা মেয়েকে বুকে করে বেঁচে আছেন।
সকলকে নানা জিনিসে মুগ্ধ করেন সৌভিক পরাগ। বাগানে বার্বাকিউ, সকলের জন্য বিদেশী রান্না, রাতে নানা ম্যাজিক এবং আরো অনেককিছু। আবার কখনো স্পানিশ গিটারে — স্টারি স্টারি নাইট। বার্বাকিউতে গান বাজে। নানা গান। কখনো খুন্তি হাতে তিনি নাচেন। কখনো মিতিকে ধরে নাচতে থাকেন। কে বলবে এই সেই মিতি। যে আগে মুখচোরা- লাজুক মেয়ে নামে পরিচিত ছিল, এখন পরাগভাইএর সঙ্গে সারাক্ষণই গল্প চলে ওর। কুকুন ভেঙ্গে বেরিয়ে এসেছে প্রজাপতি- উড়ছে ঘুরছে গভীর প্রানানন্দে। বুঝতে পারছে আসলে জীবন কখনো হরিৎ মদের মত পান করবার। সবুজ ঘাসের সরবত গেলাশে গেলাশে পান কোন এক কবি বলেছিলেন।
বার্বাকিউ খেতে খেতে সকলে একটু চিল্ড কোল্ডড্রিংক পান করে। হার্ড ড্রিংকএরও ব্যবস্থা আছে। মিতি কী কোকোকোলায় মিশিয়ে তেমন কিছু পান করছে? কেমন যেন বেসামাল চলাফেরা আর কথা বলা তার। দু গালে ফুটে আছে লাল ডালিম। মা মেয়েকে ডেকে বলেন তুই ঠিক আছিসতো মিতি?
হাসতে হাসতে বলে মিতি — কেন? আমি ফার্স্টক্লাশ। বলেই সে ঘুরপাক খায় ছোট মেয়ের মত। মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে মায়ের গালে চুমুও খায়। তারপর গিয়ে দাঁড়ায় সৌভিক পরাগের পাশে। সৌভিক পরাগ অনেকক্ষণ মিতির চোখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। ওদের একজন চল্লিশ আর একজন উনিশ।
এইসব করতে করতে দেড়মাস কেটে যায়। বলেন পরাগ একদিন আমি কাল চলে যাব। তারপর ওর সঙ্গে মিতির কী কথা হয় কে জানে। মনে হয় মিতিকে বোঝাতে পেরেছেন পরাগ। সকলে জানে আলবামাতে এক বিঘা জমির উপর তার বিশাল বাড়ি। বাগান। সুইমিং পুল। সাউনা, জাকুজি, টেনিসলন। একেবারে এলাহি কারবার। এ ছাড়া এখানে ওখানে কয়েকটি ফ্লাটবাড়িও আছে তার। আসলে তিনি বাড়ি ভালোবাসেন। বাড়ি সংগ্রহ করতে বা বানাতে। একটা নাকি তাঁর ট্রলার হাউসও আছে। বাড়িটা গাড়িতে চেপে তাঁকে ফলো করে। তিনি যেখানে যেখানে যান গাড়িটাও সেখানে যায়। বেশ মজার। এমন গল্প শুনে মিতি বলেছিল — ইস পরাগভাই আপনার জীবনটা কেমন এ্যাডভানচারাস এক জীবন!
এমন একটা জীবন তোমার পছন্দ মিতি? মিতি কথা বলে না। পরাগ বলেন —দেখা যাক এমন একটা জীবন তোমাকে উপহার দিতে পারি কিনা। বোহেমিয়ান লাইফ তোমার পছন্দ? হঠাৎ একদিন দেখবে মাঠের ভেতর তুমি, জেগে উঠে এক আকাশ তারা দেখছে, না হলে ছল ছল নদীর শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেছে তোমার। না হলে ফুলের গন্ধে ঘুমই আসছে না। না হলে একরাশ অবাক প্রজাপতির মাঝখানে তুমি। ভাবতে পারো? কখনো নদীর ছল ছল শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যাবে তোমার।
সত্যি! মিতি বলে।
সত্যি! এমনই মজার জীবন!
ঘুম থেকে উঠে দেখা গেল কোন এক অচেনা হ্রদের পাশে, কোন এক বিশাল মাঠের ভেতর, তারাভরা আকাশের তলায় আমি? কেমন লাগবে তখন? ইস ভাবতেও থ্রিলিং লাগছে। এই বলে মিতি হাত বাড়ায়। হাতে কাঁটা কাঁটা থ্রিলিং। সৌভিক পরাগ হাতে হাত বুলিয়ে দেন। বলেন Ñ একটা মজার জীবন চাই তোমার তাই না?
মিতি হাসে। সৌভিক পরাগের বয়স নিয়ে তার মাথা ব্যথা আছে এমন মনে হয় না। মোসলমান পরিবারে কাজিনই সবসময় প্রথম প্রেমিক।
সে রাতে জমে ম্যাজিকের খেলা। যে দশ বছর পর হঠাৎ করে ফিরে এসে একবাড়ি মানুষকে স্তব্ধ করে দিতে চায়। যে কেবল উপহার আনে। কতসব কীর্তি করে এক বাড়ি মানুষের ব্যথা ভোলায়, ভোলায় একা থাকা।
প্রথমে তাসের ম্যাজিক। তারপর আরো সব। ওদের কানের পাশ থেকে বের করে নানা কিছু। ফুল, ঘড়ি, ডিম, পাখি। পাখি যখন কিচ কিচ করে বাতাসে মিলিয়ে যায় ওরা ভাবে — তাহলে পাখিটা সত্যি পাখী? কিন্তু কেমন করে? এরপর আরো নানা ম্যাজিক দেখে সকলে। আর সকলে যখন চলে যায় মিতি কাঁদো কাঁদো গলায় বলে — আমি এখন তাহলে কী নিয়ে থাকবো?
পরাগ ওর চুলে আর চোখে আদর করে। বুকের কাছে আঙুলের স্পর্শ রাখতে রাখতে সেখান থেকে বের করে লাল গোলাপ। আর বুকের কাছ থেকে তুলে আনে নানা সব অবাক ফুল।
তুমি জানতে না তো তোমার হৃদয় থেকে ফুল তুলে আনা যায়।
আমি অনেককিছুই জানতাম না। আমি জানতাম না কেবল হেসে হেসে কেমন করে এতসব সময় কাটানো যায়। বলে আবার — আমি অনেককিছু জানতাম না।
আপনারা কবে এই বাড়ি ছেড়ে ভাড়ার বাড়িতে যাচ্ছেন? সৌভিক পরাগ বলেছেন খুব তাড়াতাড়ি যাবেন। একজন অপরিচিত কী সব কাগজপত্র হাতে।
আমরা কোথায় যাব? রাশেদ, শাহেদ, হাসনাহেনা প্রশ্ন করেন। তারা ঘটনা ঠিক বুঝতে পারছেন না।
বাড়িটা দশতলা বাড়ি হবে। উনি আমাদের কাছে দিয়ে গেছেন। ভালো দাম পেয়েছেন কিনা।
তিনজন বিমূঢ়। সৌভিক এমন কাজ কেমন করে করলো? ওদের না বলে।
কবে থেকে কাজ শুরু?
সাতদিন পর থেকে। উনি বলেছেন আপনারা দু একদিনের ভেতরই চলে যাবেন।
পাশের ঘরে আপনমমনে গান শুনছে মিতি। নীল ডায়মন্ড না হলে জোন বায়েজ। পশ্চিমী সঙ্গীতের স্বাদে মুগ্ধ সে। জেনেছে পশ্চিম জগতের কথা। নানা সব। থিওরেটিকালি আর প্রাকটিকালি। নিষিদ্ধ ফলের স্বাদ জেনেছে। একদিন হুশ করে প্লেনে চেপে মিতি ওদেশে চলে যাবে এমন আশ্বাস দিয়েছিলেন সৌভিক।
বাড়িটা তাসের বাড়ির মত গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেল। আর মিতি জানলো যাদুকরের কথা। যে তার সবকিছু নিয়ে চলে গেছে। আসলে সৌভিক মস্ত যাদুকর, নাহলে? একটা বাড়ি কী করে বাতাসে মিলিয়ে যায়। আর তাছাড়া? কোন এক যাদুর কাঠি মিতিকে গুটিপোকা থেকে প্রজাপতি করে তারপর আবার কেমন করে সেই প্রজাপতি আবার গুটিপোকা হয়ে যায়। গুটিপোকা কী ওর চারপাশে আবার কুকুন তৈরী করবে? বেডকভারের ঘন অন্ধকারে কেমন স্বস্তি পায় মিতি। আর পরাগের জীবনের দর্শন হলো — হোয়েন মিল্ক ইজ চিপ হোয়াই ইউ কিপ এ কাউ।