ভবেশ বসুর কবিতা

ভবেশ বসুর কবিতা

রসিক ভোজন দিয়েই আমি রত্নাকর

আমার নিজের চোখে দেখা,প্রথমে ছোটখাটো পাখি শিকার তারপর প্রাণী ও মানুষ
রত্নাকর হতে রত্নাকর দূরে থাকে,দোভাষীর কাজ করে একজন
আমি নেড়েচেড়ে দেখেছি,আততায়ী নিজে দৌড়ায় না একজনকে ব্যবহার করে
সেই তার কারণ ধ্বনি হত্যার প্রথম আসামী
বৃক্ষ যদি রাজী না হয়,কার সাধ্য আগুন হয় স্মৃতি মুছে দেবে
আমার নিজের চোখে দেখা,এতবড় সূর্যটা ডুবে গেল সামান্য মেঘের চলাফেরায়
মহামান্য বিচারক,আপনি যৌবনকে অপরাধী ভাবছেন
যৌবনের ভেতরে প্রবেশ করে দেখুন,সেখানে উচ্চতর এক দাবানল আছে
যে উদাস জীবাণুর মতো পৃথিবীর পিঠ গ্ৰাস করছে।

একটি বস্তু অবস্তুকে দিয়েই গড়ে নিচ্ছে মৃত্যুর আয়ু
শ্বেত বস্ত্র কখনো তার মুখ কালোতে ঢাকতে চায় নি
কাপড়টা এমনই ছিল যাতে রামধনু রঙ আগাগোড়া অনুশাসনের কাজ করে
আমি প্রথম সাক্ষী,একজন নারীকে উলটে পালটে পূর্ণিমার চাঁদ দেখাই,নদীর জল বাঁশের ডগা ঋতু বৈভব ছিল আমার হাত
আর বারবার ভূমিকম্পের মতো নারীর স্থলভাগ ফালাফালা করে নিজে ক্রমশঃ উজ্জ্বল হই।

মহামান্য শুনতে পাচ্ছেন ?এই দেশ এই বিদেশ ও সমাজের জঙ্ঘা অবধি অবস্তুর ঘ্রাণ
এই রসিক ভোজন দিয়েই সকলে বাল্মীকি সবাই রত্নাকর
পৃথিবীকে মিলনের গল্প শোনাতে হলে আগে কলশিকে যমুনা ছাড়া করুন,তারপর সেই ঐতিহাসিক বাঁশির বিচার।

তুমি বাড়ি আছো

তুমি বাড়ি আছো ? তোমাকে দরকার এই জল শূন্য যমুনায়
তুমি থামলে কেন,কলশি ছিল আর নূপুর ধ্বনি—-
আয়ান চিরদিনই উদাস,হেসে খেলে এই শক্তি পুতুল খেলার মতো তোমায় ছাড়পত্র দিল
চল আবার শুরু করি লুকোচুরি এই লোকসমাজ এড়িয়ে
সময়টা ভালো নয়,যে কেউ পাথর থেকে শিল্পী―তোমায় স্বর্গ ভেবে এই শরীর চাইতে পারে
তাকিয়ে দেখ পৃথিবীর আজ অপরাহ্ন ঢেউ
সকলই আছে,শুধু প্রেম পিতা মাতা জল সম্পর্ক অতীত।

ঘর ভেঙে গেলে ঘর গড়া এমন কিছু নয়,কয়েকটা খড়কুটো আর জোনাক আলো পড়েই থাকে
বৃক্ষের গোড়া কেটে সিংহাসনের জন্য আছে অনেক বিশ্বকর্মা
তারপর ঘর ঘরকে দাম্পত্য করে সেই চিরাচরিত বলপ্রয়োগ
পৃথিবী যতদূর এগিয়েছে তার সিংহভাগ এই অচেতনার ফসল
না ধান না সরসে,মানুষের চোখে পড়ল না আজও সেই আসল অমৃতের অতলান্তিক কলোরব।

বাড়ি আছো নারী,আমার রাধা ? তাহলে চলে এসো কালি ঝুলি ঝেড়ে সেই যমুনাতে যাই যমুনার গর্ভে
খরা যমুনা আমার চেয়ে তোমাকে চায় আগে,রাধা থাকলে কৃষ্ণ আসবে এই আশায় সূর্যচক্ষে শুয়ে আছে
বুদ্ধের মতো বটবৃক্ষে জল দেবে বলে ধর্ষিতা সুজাতা মেয়েটির আজ গভীর অসুখ
এসো তাকে দিয়ে আসি আমাদের অন্তিম লোনা আগুনটুকু।

মাছরাঙা ডানায় একূল সেকূল

আমি নদী হতে গিয়ে উড়ে চলে আসি,ভীষণ আঁকাবাঁকা দেখি তার একূল সেকূল
পাতালের জলও সনাতন পন্থী,সেই উপর নীচ আবেগ ঘন মেঘ
কোথাও পরিচিত সামনে জল,কোথাও প্রেমের চেয়েও গভীর
বট-ছায়া ছায়া দেয় ঠিক তবে কে তার মাতা,পথের সব আলো জ্বেলে দিয়েও জন্মের গন্ধ পাই না
তাই উড়তে উড়তে আমি ফিরে আসি পুকুর পাড়ে,আমার ছোট ছোট সম্পর্কে জড়ানো সেই দুর্বায়
হে বন্ধু পরিজন তোমার আঁচলের কাছেই বসতে দাও,নদী নক্ষত্র আকাশ বড় বেশি সপি’ণী।

জীবন প্রণালীর বিষাক্ত স্পর্শ ছড়িয়ে পড়েছে সাদা পাতায়
কতটা বিষ থাকলে একটি মৃত্যু অবধারিত, সাপও জানে না তবু মাটির বুকে তার উবু হয়ে হাঁটা
চাষী-বউ পান্তার হাঁড়িতে রাখে তার সমস্ত রঙ,সেই রঙে নিজের শাড়ি ভেজায় সন্তান লালনে বুকে স্তনে এবং
পুরুষের কালো দেহে লাফাতে লাফাতে উঠে আসে অনায়াসে
কবির তরঙ্গে তার ছিটেফোঁটা নেই,জঙ্গলের মতো ঝাপসা
এ কবিতা দিয়ে কবির ঘরই রচিত হয়,নখদন্ত বাঘ কখনো লোকালয়ে এসে পড়লে পাঠকের দরজা আর খুলেই না।

নদীর মতো এত আঁকাবাঁকা অগম্য কেন এখন কালি কলম
গর্ভের আসন যদি দেখতে না পাই,রক্তের জোগান দেবে কে
মা ও সন্তানের সম্পর্ক নয় দীর্ঘ নদী বা মরুভূমির চাঁদ
মনে আছে জন্মের প্রথমেই দুর্বার কোলে আলধার,আর সম্মুখে দিয়েছে মা পুকুরের পথে দুটি মাছরাঙা ডানা !

স্বর্গের মেয়ে নরকের নারী

স্বাতীনক্ষত্রের জল কোনোভাবেই আমার কাছে আসে না,অশ্রু শেষ হয় অশ্রু রূপসী হলেও ভিড় জমে যায়
যেন মিষ্টি সুর আগে কখনো কেউ শোনে নি দেখেনি
নীলকণ্ঠ শিবের উলঙ্গ শরীর দেখতে বেশ মজার,মন-চোখ তারই জটা ছিঁড়ে গঙ্গার স্তনে মুখ রাখে
এত লোভনীয় খাদ্য মাড়ি ও দাঁতের সংমিশ্রণে চুষে চলে যাব,লিখে যাব ফলন হয়েছে ভালো
আমি সেই খরা মাঠের ধান,নেই নেই করেও বিঘা প্রতি জ্যোৎস্না ছাদ বরাবর উঁচু
ক্রয় বিক্রয় সবই হয়,রাত বিরেতে আধ পোড়া সিগারেট পড়ে থাকে অনত্র তারপর।

তোমরা দেখ বিষ্ণুপ্রিয়া,আমি জানি শরতের কাশ চোষা শীর্ণ নদী,সবদিন তার পালিয়ে বেড়ানো ছাড়া পথ নেই
জন্মের সময় আবার মৃত্যুর পরেও রক্তপুঁজ ধোয়ার একটাই পাত্র আছে,শকুনও আহারের পর ঠোঁট ডোবায়
ছড়িয়ে পড়ে সমাজ ও রাষ্ট্রের শুকতারার গরিমা,প্রতিধ্বনিত হয় এখানেই স্বর্গ এখানেই নরক।

কেমন আছে স্বর্গের মেয়ে নরকের এই বিষ্ণুপ্রিয়া নারী !
জাহাজ ডুবে যাওয়ার পরও প্রাণের খোঁজে থাকে ইতিহাস,বুদ্ধিমান সভ্যতা সাগর ভরাট করবে না কখনো
স্বাতীনক্ষত্রের জল দাও মরে যেতে যেতেও বিপন্ন নদী বয়ে চলে,যাত্রী বোঝাই হাসি
আর নির্জন সাগর তীরে পুরুষ মেয়েটাকে আজও টানাহেঁচড়া করে চলে,প্রতিমাটা যে লক্ষ্মীর !