নীহার রঞ্জন দাসের কবিতা

মেয়েটি
অতঃপর মেয়েটি জেনে গিয়েছে
প্রেমের আরেকটা ভাষা আন্দোলন ।
বহুদিন,বহুবার মেয়েটি
সড়ক ভেঙেছে কাঁধে তার গলিত মায়ের লাশ নিয়ে ।
কখনো কাশ্মীর
কখনো আসাম
কখনো বিহার
কখনো ত্রিপুরা
খরতাপে পুড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে
কলেজ স্ট্রিটে , বেহালায়
উত্তরবঙ্গে , পাহাড়ে গ্রামে গঞ্জে
ভিড় বাসে যেতে যেতে
কপালের ঘাম মুছে নিয়েছে
ওড়নায় , শাড়ির আঁচলে ।
আজকাল আমি প্রায়স-ই মেয়েটিকে দেখি
ফর্সা অবয়বে জমেছে
কয়লা কাঠ জামরুলের খসে যাওয়া পাতার রঙ ।
কনুইয়ে যে ব্যাগটা থাকতো
তার মূল্য এখন নামতে নামতে
দেড়শো টাকায় এসে ঠেকেছে ।
অনিকেতের কথা মাঝেমধ্যেই
তার মনে হয়।
শ্রাবণ এলেই সে এখনো বৃষ্টিতে ভিজে ,
একটা শ্রাবণেই অনিকেতের
সাথে তার প্রথম আলাপ।
তারপরের শ্রাবণেই রাজনীতির শিকার হতে হয় অনিকেতকে ।
সেই থেকে একলা পথ হাঁটা শুরু মেয়েটির ।
এখন বাইরে বৃষ্টি পড়ছে
টিনের চালে শব্দ যেন তার হৃদপিন্ডের গুমরো আওয়াজ ।
মোবাইলে চলছে
” যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে …”
কাল একটা বিডিও অফিস থেকে তার ডাক এসেছে , সকালে যেতে হবে , ছমাস থেকে ঝুলে আছে তার ছোট্ট একটা লোন , হয়েও যেতো ,
যদি বিডিওর অ্যাপিলটা মেনে সে একরাত্র দিতে পারতো ….
ঘেন্না আর অপমান নিয়ে সে থানায় গিয়েছিল , কিন্তু না কোনো কাজ হয়নি ।
সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে এসে খুব কেঁদেছিলো মেয়েটি ,
হঠাৎ অনিকেত যেন তার পিঠে হাত রেখে বলে উঠলো ” তোমাকে আরো দৌড়তে হবে ,
কাল যাবে , পরশুও যাবে
উঠোন ভাঙতে ভাঙতে
প্রতিটা দরজা ভাঙতে হবে
চেয়ার ভাঙতে হবে
ভাঙতে হবে দুর্বিসহ আরো প্রাচীর …. “
মেয়েটি খুব ক্লান্ত এখন
যতবার আমার সামনে এসে দাঁড়ায় ,
আমি তার চোখের কালচে দাগে
দেখতে পাই কে লিখে রেখেছে ” জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে …”