শাহরিয়ার রুবাইয়াতের কবিতা

বিষণ্ণশব্দেরা
শহর আজ পুড়ে যাচ্ছে
আগুনের ফুলকি ছুটিয়ে আতশবাজির মত
গভীর রাত্রিতে কৃষ্ণচূড়ার শেকড়ে মায়াহীন বাতাসে।
এখন কবিতার ওষ্ঠে
নিঃশব্দে ধ্বনিত হয় গদ্যের অনুচ্ছেদ
দুঃখিত মুখ জুড়ে নির্জন জীবনের গেরস্থালি।
চেনা গলিতে চতুর্দশী শব্দেরা
চোখের আড়ালে হেঁটে যায়।
জামার বোতামে চিহ্ন দিয়ে রাখে মন্ত্রিত অক্ষর
গন্ধময় স্বপ্নে ছুটে চলছে রাত্রির জোনাকি
নিঃশ্বাসে অবিরাম উতলা হয় বাক্যের মলাট
তবু হেমের মাঝে কলঙ্কেই সবটুকু সুখ।
কার্নিশে শুকোনো খেয়াল চেয়ে থাকে হিমচোখে।
হামিং পাখির মত ডানা ঝাপটে যায় চেনা মুখ
অবিরল নতজানু হয়ে ছুটে যায় ঢেউয়ের সাগর
উপবনে জ্যোৎস্নারাত বিষণ্ন হয় নীরবে
বৃষ্টির আকাঙ্খায় অষ্টাদশী শব্দেরা ঘর ছেড়েছে
নোনাজলে ডুবেছে ব্যক্তিগত অভিধান।
পাথরের পাঁচিল ঘেষে ওপারে চোখ খুলেছে আগ্নেয়গিরি।
পদ্যের কঠিন রূপ দেখে ব্যথিত হচ্ছে অন্তর
নিষিদ্ধ শহরে বুঝি আসবেনা পূর্ণিমা!
তথাপিও উত্তর বসে আছে প্রতীক্ষায়
প্রভাত সূর্যের চোখ ছুঁয়ে সন্ধ্যা অবধি;
আর তারপর নৈবেদ্য সাজিয়ে রেশমী সুতোর বুকে সমর্পণে।
বিভোল বিবশে
আজ ভোরবেলাকে অনেক পুরোনো বলে মনে হলো
সূর্যটাও ঠিক যেন তেমন পুরোনোদের দলের কেউ।
উঠোনের ওপারে দাড়িয়ে থাকা মরা গাছটা
গতরাতের বৃষ্টিতে উপড়ে পড়েছে,
এখন শুধু কল্পনাতেই ওর সবুজ জীবনটাকে দেখতে পাই।
আজ শ্মশানের পাশে পুরোনো সেই বেঞ্চিতে
অনেকটা সময় বসেছিলাম।
চেনা অচেনা মানুষগুলো
পার্থিব জীবন ত্যাগে তারা ঘুমিয়ে পড়েছে
ভূতলে নিরবিচ্ছিন্ন ক্রমাগত।
যে বাতাসে একদিনও আয়ু বাড়েনা সে বাতাসে যাবো না,
এমন কি অধিকারের সীমা ভেঙে
উত্তাল রাত্রিতে যাবনা অতল গহীণে।
যেখানে সর্বস্ব জ্বালিয়ে দিয়ে
সুকুমার সত্ত্বাকে করেছে ছিন্নভিন্ন অহর্নিশ।
আজ বুঝি দুর্বার টানছে মন অকপটে
বালিয়াড়ি জলছোঁয়া তটে,
অনিশ্চিত উদ্বেলে অনুচ্চার বাহিত হাওয়ায়
যেন প্রলয়ের সবটুকু সুখ
মেখে নিয়ে আকাশের নীলে।
দীপ্তানুরাগ
সেদিন; মেঘ গুন্ঠন ফেলে
অম্বর এসে দাড়িয়ে ছিল নীলাম্বুধির পাড়ে
কি বিস্ময়কর অবলোকন অবচেতনে!
কি অদ্ভুত আর ইতস্তত ইতিউতি!
আদৃত হৃৎপিন্ডের অন্তরীপে প্রশ্রিত রুবাই
যেন পরশন অমিয় কোন দীপ্ত আগমনীর।
তারপর-
একদিন ইথারের ধ্রুবনীল দেয়ালে
অভ্রক অবয়বে এলো কুন্তী
পান্ডুর অগোচরে।
বিগত কালের প্রস্থাপিত নিমন্ত্রণে
তৃপ্ত উৎফুল্লতায় দরগুজার হলো সব
আনন্দে স্নাত হলো তুরাগের এপার ওপার।
এরপর-
শব্দের শাখা প্রশাখায় ফুটলো শাল্মলী
প্রাচীরের আবরনে ঝিল্লিতে বাতাসে।
সে কি এক ভীষণ উচ্ছলতা… !
উদ্বেলিত অন্তঃকরনে বাজছে শিঞ্জন
যেন শিখী নেচে চলে বিভোর প্রেম প্রাণ বল্লভে!
অতঃপর-
শেষ বিভাবরীতে ঈশ্বর এলেন অবনীতে
নিজ থেকে দিয়ে গেলেন বর মিলনের তরে।
প্রণয়ী প্রণাম করে অনুরক্ত চরনে
জন্মান্তরের অভিলাষ করে আলিঙ্গন।
অনন্তকাল অভিন্ন রবে এই প্রতিজ্ঞায়
পান্ডু কুন্তিকে নিয়ে যায় কুসুমশয্যায়।