নবনীতা চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা

জলচরিত্র
জল গভীর হলে নতজানু
আমি তার পাশে বসি|
দেহাতী মানুষের মতো চেনা
সুখ দু:খের কথা বলি|
সে শোনায় এক চোরাটানের গল্প
যে টানে তটভূমি ছুঁতে
কখন খাড়ি কেটে বেরোয় জল…
সোজা পথ নয়, জল ও
জানে চোরা টানের উল্লাস|
জল তাই গভীরেই বাঁক নেয়, নীচে নামে…
জোয়ারেই ফিরে ফিরে আসে|
এভাবেই রং পাল্টায় জল…
প্রথমে ঘন নীল, তারপরে হালকা
তারো পরে শুধুই ঘোলা|
এভাবেই সব ভালোবাসা জল
ভুলে যায় ঠিক একদিন|
ভাঁটার দিনে ফিরে যায়
সেই প্রেমিক নির্লিপ্ত… উদাসীন… |
পতঙ্গ জীবন
আসলে সব কিছুই…. আসলে কিছুই নয়|
ঘুমের মধ্যে নি:শব্দ আনাগোনা স্বপ্নের|
স্বপ্নেরা ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসে|
বালির চড়ায় মুখ গোঁজা শীর্ণ
হলদি নদীকে সাজায় ঝালরে|
খোলা জানালার পাল্লায় রোদ্দুর ঝুলে থাকে
শেষ হতে গিয়েও অবশেষ থেকে যায় আনাচ কানাচে |
কুয়াশার আঁধারে ভেসে থাকে ঝুরো আলাপ
আসলে কিছু নয়, সব কিছুই শুধু
আলোর সন্ধানে ভেসে যাওয়া পতঙ্গ জীবন|
অনির্বাণ
হাওয়ায় প্রকম্পিত তবু উজাগর…
যে ছবিতে বৃষ্টি নামে…
ভিজতে ভিজতে বিষণ্ণ সন্ধ্যা
ছুঁয়ে ফেলে আঁধারের হাত|
পিছু হটতে হটতে দেওয়ালের ও
পিঠ ঠেকে যায় দেওয়ালে…
জলমগ্ন সেই বিষণ্ণ সন্ধ্যার
হাত ধরে নেয় শূন্যতা|
অক্ষরেখা জুড়ে প্রবল হ্রেষাধ্বনিতে
ছুটে যায় কৃষ্ণ অশ্বেরা দল বেঁধে|
তীব্র দহনে পুড়ে যাওয়া মুখ ও মুখের পেশি
থেকে জন্ম নেয় এক ফিনিক্স|
অন্ধকারের ও একটা নিজস্ব আলো আছে|
যে আলো কখনো হেরে যেতে শেখেনি|