রাজেশ কান্তি দাশের কবিতা

জ্যোৎস্নার সংলাপ
তোমার কমলা রঙা গোধূলি রূপে প্রতিবিম্বিত হয় মধুপের গুঞ্জন
চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তার কিন্নরী কল্লোল
আমি মোহাচ্ছন্ন হই, স্বপ্নের জাল বুনি, থইথই হারিয়ে যাই পুলকে
এ মনোলোভা কল্লোলের ভিতর;
সাথে নিয়ে আঁধারসিক্ত আকালিক দীর্ঘশ্বাস!
আর বিষাদি জীবনের টুকরো টুকরো ঘোলাটে স্মৃতি
দেখি আবেগমথিত স্বপ্ন ও পুলকের মূর্ছনায় কে যেন হেঁটে যায়…
কে যেন যায় চাঁদের শোভায় জ্বালিয়ে ধূপ
আমি খুঁজি, আমি খুঁজে নিই তাকে; সে-ও কি খুঁজে আমাকে?
বর্ণালি পৃথিবীর পাড়ে
বকুল বাতাসের বারান্দায় যেমন আমি খুঁজে ফিরি তার মোহন স্বরূপ।
রাতের কোলাহলে আমাকে ভালোবাসার উত্তরীয় পরায় অষ্টমীর চাঁদ
আমি ভুলে যাই ভুলে যাই বিষাদ সব।
ঘুমের ঘোর থেকে জেগে উঠে দেখি দুঃসাহসের মতো
আমার দীর্ঘশ্বাস জড়িয়ে আছে তোমার সুখদ ভালোবাসার পুষ্পজ অনুভূতি
চারদিক শুধু নীরব।
অন্ধকারবতী আমার পুরোনো স্মৃতিগুলি আর নেই;
হয়তো হারিয়ে গেছে তোমার আসা যাওয়ার গন্ধ পথে
যখন নির্জনে ঘুমায় পৃথিবী
অথবা দুঃখজয়ী তোমার অনুভবী মনের কমনীয়তার ভিতর
থেকে থেকে গোলাপের সুঘ্রাণ বেরোয়
কমলালেবুর খোয়ার মতো টসটসে তোমার রক্তিমা ঠোঁটে
আমি অপলক থাকি তোমার দিকে চেয়ে
যেন জলের দিগন্তে হেঁটে যায় মাধবী রাতে মায়াবী জ্যোৎস্না
সকল বিষাদের পাখা চুমে
জ্যোৎস্নার সংলাপে ভরে হৃদয়ের বুনো চর।
ফেরার মন
দেখতে দেখতে কতটা বছর কেটে গেলো
তবুও তোমার বয়স আঠারো পূর্ণ হলো না!
দেখা হলো না তোমার শ্রাবণী সৌন্দর্যের যাপিত রূপ;
কিংবা হেমন্তের শিশিরস্নাত ভোরের সূর্যালোয় জন্ম নেওয়া
তোমার দেবী প্রতিমা
শুনা হলো না তোমার কুমারী যৌবনের গল্প;
তুমি চিঠি লিখলে না অভিমানী মন নিয়ে, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হলো না।
হাসনাহেনার সুবাস ছড়ালো না শঙ্খচিলের ডানায়
আমি অপেক্ষায় রইলাম…
যেমন গোধূলির নীড়ে পাখি ফেরার জন্য অপেক্ষা করে।
দিনের পর দিন কত প্লাবন আমার বুকের উপর দিয়ে বয়ে গেলো!
কত নক্ষত্রীয় ভালোবাসা ডুবসাঁতারে চুমু খায়!
কত লালিত স্বপ্ন চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে নদী তরঙ্গে ভেসে যায়!
তবুও তোমার বয়স আঠারো পূর্ণ হলো না;
দেখতে দেখতে কতটা বছর কেটে গেলো!
আমার ফেরার মন বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয় না কখনো
হয় না প্রৌঢ়
ঘোর অন্ধকারেও তোমাকে খোঁজে;
আবির রং মাখা যুবতি ভালোবাসার পুষ্পজ উদ্যানে
তোমার আঠারো বছর পূর্ণ হওয়ার আরাধনা করে
চিরহরিৎ রাখালের মতো সারাদিনমান
পোয়াতি পূর্ণিমার রাতে নতুন নতুন স্বপ্নে তপস্যা করে
তুমি যেন হয়ে উঠো চুলে শিউলি গুঁজানো নারীর মতো
কোনো নবীনা শিউলিমালা।
কিংবা পারিজাত হয়ে আভা ছড়ানো কোনো উর্বশী।
জবা, সন্ধ্যাতারার মতো শুভ্র উজ্জ্বল তুমি
দ্যুতি ছড়াও আমার দেহ মন অলিন্দের একান্নবর্তী মাঠে
তোমার কুমারী সফেদ যৌবন কর্পূরের মতো ভেঙ্গে পড়ে না যেন;
আমি অপেক্ষায়ই থাকলাম… ফেনিল অপেক্ষায়…
দেখতে দেখতে কতটা বছর কেটে গেলো!