চ্যাটার্জী অমলের কবিতা

শুধু তোমার জন্য
ব্যস্ত পৃথিবীর বুকে ধীরলয়ে নামছে ধূসর গোধূলি
একটু পরেই আকাশ গড়িয়ে নামবে নিকষ আঁধার ।
বিষাদের আদিম ভৈরবীর অস্থিরতা নিয়ে মনটাও হেঁটে
চলেছে একাকী। মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো মনখারাপের
খারাপটা ছাঁটতে এক কাপ চা দিতে পারো ?
ধোঁয়া ওঠা লাল চা… ,
আর হ্যাঁ , সাথে মিশিয়ে দিও দু ফোঁটা বেপরোয়া
ভালোবাসা। তারপর চলো না শুকতারাকে সাক্ষী রেখে
নগ্ন আকাশের নীচে মুখোমুখি বসে সারারাত নাহয়
মেপে নেব জীবনের খুঁটিনাটি ।
স্মৃতিভাণ্ডের পর্বে পর্বে তোলপাড় সোহাগী স্রোতে যখন
দুটি শরীরের প্রখর উত্তাপ বাইবে দাঁড় , যখন বাড়তে
থাকা বেনিয়মের জীরাফ গলা থমকে দেবে চুঁইয়ে পড়া
যত অভিমান , তখন পাহাড় ছুঁতে চাওয়া ঈগল চোখের
বখাটে অবসাদ আর নীল হতাশাকে বলবো…
শুনছো তোমরা , না বলা বর্ণমালার শেষ দৃশ্যে চলছে
বাঁক বদলের চিত্রনাট্য , এবার তোমরাও তোমাদের
চিত্রনাট্য বদলের কথা ভাবো , দেখছো না বাসি দিনের
জমাট লজ্জা সরিয়ে ভালোবাসার ছটা শরীরে এখন।
সব অনুভূতির ইচ্ছেপত্রগুলো এক ছাতায় এলেই
কাব্যকথার ফুল দিয়ে লিখে রাখবো অমর এক কবিতা
শুধু তোমার জন্য।
অসমাপ্ত ছবি
হঠাৎ একদিন তার সামনা সামনি হতেই
বিপুল আগ্ৰহে নিরামিষ প্রশ্লটা দিলাম ছুঁড়ে
কী কেমন আছো ? কোন উত্তর না দিয়েই
আপন খেয়ালে গন্তব্যের গান গাইতে গাইতে
ফিরে গেল গন্তব্যের দিকে। আসলে আমার
তোবড়ানো হৃদয়ের মানচিত্রে যখন অপ্রাপ্তির
বিষাদ বেদনায় বেদনারা হাসে, তখন চোখের
অবিশ্রান্ত বৃষ্টির লোনা জল ধুয়ে দেয় বুকের চর।
জীবনের পটভূমে আমাদের দূরত্ব এক আকাশ
হলেও আমি চাইনা তার শরীরময় দীর্ঘশ্বাস
আঁকুক বিষাদের বর্ণমালা।
সন্ধির প্রস্তাব নিয়ে যেখানে একদিন উঠেছিল
পলাশের ঢেউ, আমার বিশ্বাস সেখানে
বাড়িয়ে দেওয়া হাতটা অপেক্ষায় হাড় পাঁজরা
বার করে ইতিহাস না হলে হয়তো পারস্পরিক
ভালোবাসায় সাজানো ঘরের স্মৃতিভাণ্ডে
গড়ে উঠতো কালোয়াতি কিছু মূহুর্তের মহাতীর্থ।
হয়তো ভালোবাসার রেশমী হাওয়া কে সাক্ষী রেখে
জীবনের দুচোখ জুড়ে বাদামী ভ্রমর হয়ে
ঘুরে বেড়াতো স্বপ্নগুলো। হয়তো অনেক কিছুই
এখনো অটুট আছে আবার কতকিছুই প্রেমহীন
অন্ধকারে অসমাপ্ত ছবিগুলো নেই হয়ে গেছে।
ভুলে যাও বললেই অঙ্কের চূড়ান্ত গণনায়
সবকিছু ভোলা যায় না ।
নিঃশব্দের শব্দ
শেষের সে’দিন যখন দেখা হয়েছিল,
বলেছিলাম তোমার মনের আঙিনা বরাবর
সমস্ত জানলা হাট করে খুলে রাখবো।
বলেছিলাম রাতের সাম্রাজ্যজুড়ে সবাই যখন
মগ্ন থাকবে ঘুমে,তখন পাহাড় হয়ে যাওয়া ইচ্ছেগুলো
অন্তহীন জাগরণের ক্লান্তি সরিয়ে নিজস্ব ভাষায়
ভালবাসার নান্দনিক আখ্যান লিখবে
জ্যোৎস্নাধোয়া রাতে।
তারপর কতো শিশির ভেজা ভোর হাতছেড়ে
হারিয়ে গেল জ্বলন্ত দিনের মাঝে বাংলার প্রান্তরে।
তবুও সবুজ স্নেহ উজিয়ে একরাশ আশা নিয়ে
হৃদয়ের গানে বেঁচে আছে ভালোবাসা। না,কোটিকোটি
মূহুর্তে গড়া ভালোবাসায় তোমাকে ভাসাতে
কোনো তঞ্চকতা নেই। হৃদয়ে প্রাণ আছে
তাই নিঃশব্দের আগাছাগুলো সব মনোযোগ
এক জায়গায় জড়ো করে নিজস্ব রূপকাঠামোয়
বাড়তে চায় অনাস্বাদিত শব্দের সন্ধানে।
তুমি কী পারবে মনের অহম পাশ কাটিয়ে
ভালোলাগার নৈঃশব্দ্যগুলো খুঁজে নিতে ?