অণুগল্প : ফেরিওয়ালা

ফেরিওয়ালা
রাণা চ্যাটার্জী
“মাছ নেবে মাছ… টাটকা মাছ..?”
বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে এক মহিলা অনেকক্ষণ ধরে জোরে জোরে হাঁক দিয়ে যদি কাউকে দেখা না যায় তবেই পাশের বাড়ির দরজায় এগুচ্ছে।
“ও মাসিমা, টাটকা মাছ আছে নেবে নাকি?কম দামে দিয়ে দেবো.. নাও না গো..”
“…না রে মেয়ে ,আমিতো খাই না ,কি করবো বল মাছ নিয়ে! আর তুই রোজ রোজ খামোকা প্রশ্ন করিস।আমি বিধবা কিনা ” এই শেষের শব্দ দুটো বলতে গিয়েও ঠিক মতো মুখ দিয়ে বেরুলো না!উল্টে চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এলো অজান্তে বৃদ্ধার।
“বাড়িতে কি কেউ নেই নাকি গো তোমার মাসি”? তাদের জন্য তো নিতে পারো”!
“বাড়িতে”! দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে চোখ ছল ছল হলো চামড়ায় কোঁচ পড়া বিভাবতীর।
দেখভালের মানুষটা এই সেদিনও ছিল,করোনা ছোবলে সব শেষ,ছবি হয়ে দেওয়ালে ঝুলছে প্রিয় মানুষটা!
“এ বাড়িতে ভূতের মতো থাকিরে মেয়ে”- বলে নিজেকে সান্ত্বনা দিলেন বিদেশে সেটল বহাল তবিয়তে থাকা সন্তানের বৃদ্ধা মা!”
ওদিকে সদ্য মা হারানো জেলে বউ চুপ করে শুনছে,তারও মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে চরম শুন্যতা।নীরবতা ভেঙে বৃদ্ধা আশ্বস্ত করে বললেন,” আচ্ছা রে মেয়ে,খান দুই মাছ মাঝে মধ্যে দিয়ে যাস বরং,বেড়াল গুলো এলে ওদের দেবো।
“ছোট মুখে একটা কথা বলবো মা ,বলো রাগ করবে নি”- না না রাগ করবো কেনো রে,বলে ফেল কি বলবি?
শাড়ির আঁচলে ভেজা চোখ মুছে জেলে বউ উদাস হয়ে বললো,”মাকে হারিয়েছি আমিও,আজ যেন মনে হলো নতুন এক খান মা পেয়েছি” বলে ঠক করে প্রণাম করলো।
সাহিত্য পরিচিতি
রাণা চ্যাটার্জী
বর্ধমান নিবাসী রাণা চ্যাটার্জী সারল্য-প্রতিভার মেলবন্ধনে অকুন্ঠ সাহিত্য ভালোবাসায় সৃষ্টি করে চলেছেন একের পর এক লেখা।এ যাবৎ বহু কবিতা,গল্প- নিবন্ধ,ছড়া কার্টুন,প্রতিবেদন প্রকাশিত ও পুরস্কৃত ।লিখেছেন “এই সময় “দৈনিক সহ ,নতুন কৃত্তিবাস,সেরা শিশু পত্রিকা “কিশোর ভারতী”, প্রবাসী নানা ম্যাগাজিন,নিউজ পেপারেও।একক কাব্যগ্রন্থ ,”মেঘ বালিকা তোমায়” “নাভিপদ্ম”,”এক মুঠো মেঘ নিয়ে এসো”ও গল্প গ্রন্থ “কস্তুরী মৃগ” উল্লেখ যোগ্য। ইতিমধ্যে বেশ কিছু বই সম্পাদনা সহ,নানা পুরস্কার অর্জনে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন।