পল্লব রায়ের কবিতা

দুরবিন
তুমি তো বলছো হিন্দু মরছে বৌদ্ধ বা মুসলিম
আমি তো দেখছি মানুষ মরছে, মরছেই প্রতিদিন!
তুমি তো বলছো সুখে আছে দেশ, সকলের মুখে হাসি
আমি তো দেখছি মানুষে মানুষে ফুটেছে দুঃখ রাশি।
তোমরা মারছো চাপাতিও ভাতে, পায়ের তলায় পিষে
তোমরা মারছো ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক বিষে,
তোমরা শেখাও দেশ ধর্ষণ, ঘাতকের পা চাটা
দিনে সাধুবেশে রাত এলে দেশে বেশ্যাপাড়ায় হাঁটা।
তোমরা করছো জ্বালাও পোড়াও, ধর্ম বারুদ ঠুকে
কাঁদছে মানুষ শহিদ মিনার বিরল অসুখে ধুকে,
হিংসার বাঁশি বাজে চিৎকারে, তোমরা বাজাও তালি
আমাদের ক্ষুধা-রোগ-শোক আর তোমার মুখের গালি।
আমরা ফোটাই গোলাপ যত তোমরা তো চাও রক্ত
তোমরা তো চাও দেশ বেচে হই পাকি কুত্তার ভক্ত,
তোমরাই চাও পতাকার লাল মুছে দিতে বারে বার
হাত দাও যদি আগুনে মূর্খ পুড়ে হবে ছারখার।
ভবিতব্য
হে মানুষ!
যদি শুনতে পাও-
ফুটপাতে শুয়ে থাকা নিরন্ন শিশুটির করুণ আর্তনাদ
বেওয়ারিশ কুকুরের কান্নায় বিভাজিত হতে থাকা রাতের প্রলাপ।
যদি নির্জন মধ্যরাতে, নিঃসঙ্গ রাজপথের মৃত আলোয়;
পালক ভিজিয়ে ডেকে ওঠে একদল অভুক্ত কাক
বুঝে নিও, সম্মুখে সমুহ বিপদ।
বিগত দিনের চেয়ে আরও বিভৎস রঙে ফুটবে আগামী সকাল
প্রেমিকের দূষিত আঙুলে খেলবে প্রেম,
বিপ্লবীর শিরে অঙ্কুরিত হবে অপমান।
বিপন্ন হবে বিশ্বস্ত মানুষের কাঁধ;
স্খলিত হবে ভুল
প্রায়শ্চিত্তের চিতায় জ্বলবে এক শতাব্দী মানুষের পাপ।
আত্মদ্রোহ
রাষ্ট্র তুমি চুপ কেন রও?
তাকিয়ে দেখো সমুখ পানে
চলছে এ কি চতুর্দিকে হরহামেশা ধর্ম নামে?
ধর্ম নামে শিশুধর্ষণ, ধর্ম নামে ভাংচুর
ধর্ম বিষে শূড় ডুবালেই মা ও মাগী; বেহেশতী হুর!
ধর্ম বিষে বিষাক্ত দেশ, মানুষরা তাই সংখ্যালঘু
বিধর্মীদের উচ্ছেদে খুব লুটছো মজা, গোপন মধু।
হয়তো তোমার মিটছে খায়েশ, ভাঙলে আমার ঘরবসতি
ধর্মওয়ালার ইমাম মিটার চড়ছে দ্রুত উর্ধ্বগতি।
এমন ধর্মরে তোর মুখে থুথু, ছিটিয়ে দিলাম সকল ঘৃণার
ছড়িয়ে দিলাম বিরুদ্ধ স্বর, লুটপাট, খুন, হত্যা, জিনার!
রাষ্ট্র তুমি ব্যর্থ স্লোগান, রাষ্ট্র তুমি সাম্প্রদায়িক
ধর্ম তোমার চোখের ঠুলি, রাষ্ট্র তোমায় ধিক্ শতধিক্!
পদাঘাত
হে রাষ্ট্র!
চাইলেই খুন করতে পারো আমাকে
লেলিয়ে দিতে পারো উগ্র মৌলবাদ;
ধর্মের নামে জল্লাদের হাতে ধরিয়ে দিতে পারো রক্তাক্ত চাপাতি
গোলাপের বদলে মাথার খুলি তাক করে, ছুঁড়ে দিতে পারো উত্তপ্ত বুলেট।
রুদ্ধ করে দিতে পারো চিৎকার,
কেড়ে নিতে পারো-
মায়ের নিকানো উঠোনে ফলিত রোদ
ঢেলে দিতে পারো দুকূল উপচানো শোক,
তবু আমি বলবো-
তুমি ধর্মান্ধ, তুমি সাম্প্রদায়িক লম্পট হলে;
তোমার আরশে আমার শানিত পদাঘাত আঁকা হোক!
বিপ্লবীকে বলছি
হিংসার উন্মত্ততা
যখন রাষ্ট্রীয় আস্কারায় বেড়ে ওঠে
তখন বিপ্লব অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়!
শ্রমিকের ঘাম চেটে পরিপুষ্ট হলে ক্ষমতার দম্ভকারী, চাটুকর
যখন ধর্ষণই হয়ে ওঠে ধর্ম ও সভ্যতার আধুনিক সংস্কার;
দ্রোহের বিস্ফোরণ ব্যতিত পরিত্রাণের অন্য কোনো উপায় থাকে না তখন-
জন্মের দর্পনে দেখা মৃত্যু প্রতিদ্বন্দী হয়ে ওঠে জীবনের
যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে
মনে রেখো বিপ্লবী-
রণাঙ্গণে প্রেমের কোনো পাত্তা নেই
রক্তাক্ত তলোয়ার বোঝে না প্রণয়ের ভাষা;
সে কেবলি শত্রুর রক্ত চায়!