কুমকুম বৈদ্য’র কবিতা

কুমকুম বৈদ্য’র কবিতা

লোবাসা আজ ও যুক্তি তক্কো আর রূপকথার গল্প

জ্যোতির্ময়! মনে রেখেছো সেই সব কানাকানি ফিসফাস
কোনো মেয়ে যদি ভালোবাসে শুধু অকারণে
চোখের ইঙ্গিতে প্রশ্ন
মেয়েটির মধ্যে আছে কি এমন ?
লুকনো উড়ান আছে? কিম্বা উপত্যকা?
সুইস ব্যাঙ্ক কারেন্টএকাউন্ট?
না হলে নির্ঘাত উগ্রবাদী
নিদেন পক্ষে ইন্টারন্যাশনাল মাদক চক্র
তাহলে কিসের জন্যে চুম্বকের মত টান?

প্রেম আজও হিসাব শেখায়
জ্যোতির্ময় তুমি ও কি এসব ভাবো কখনো
অত্যন্ত গোপনে , চোরের মতো
একটা ছেলে একটা মেয়ের কাছে ,নখের ময়লা ফেলে ম্যানিকিওর শেখে

যেন ভীষণ অপরাধ
কোনো মেয়ের চোখের ঝরে যাওয়া পাতা রুমালে ভরে বুকের কাছে রাখা
যেন ওরা বারুদ চাষ করছে গোলাপের গোপনে

কিম্বা দুটি মেয়ে বা দুটি ছেলে হাতে হাত রাখে
নতুন বিকেলে যৌনতা র চেনা সমীকরণ ছেড়ে
যেন কলকাতা ন্যাড়া হয়ে যাবে বজ্রাহত ডাব গাছের মত
ভূমিকম্প যেন ভেঙ্গে দেবে রিখটার স্কেল

ভালোবাসা আজ ও যুক্তি তক্ক আর রূপকথার গল্প

উপহার

জ্যোতির্ময় , আর কোনো দিন দেখবো না তোমাকে
আজ রাতে ঝড় উঠল -মন পেরিয়ে আত্মা
সন্ধ্যা পর্যন্ত অফিস ফেরতা আমি ছিলাম স্পষ্টত আমারই অধীন
অফিসে বাইরের ফুল ছাড়া বে মরসুমী পলাশ গাছ
তারপর ভীড় বাস, আর আমার বাড়ির সরু গলি
আমি ফিরলাম সওদা সেরে-
এখন আমি এক বিছানা ক্লান্তি পোহাচ্ছি আর লিখে রাখছি দু পাতা ব্যক্তিগত দুঃখ
আমি শুনতে পাচ্ছি
ল্যান্ডফোন, অত্যন্ত গোপনে রাত্তির বেলা কিম্বা ভর দুপুর
সমস্ত চুপচাপ খানখান করে দিচ্ছে
আজ তোমার বাড়ি নিয়ে এসেছি ঠিক আমার বাড়ির পাশে
তোমার ঘরটি আজ আমার প্রতিবেশী কারন তুমি বাড়ি নেই
গিয়েছো পাহাড়ে আমরত্বের তাগিদে অথবা নেহাত কেজো দরকার
তোমার ওই ব্যক্তিগত জানলা, যা তুমি পকেটে ই নিয়ে ঘুরছ
যে জানালায় দাঁড়িয়ে তুমি আমার সাথে কথা বলোনি দু দণ্ড
তার ফাঁক দিয়ে দেখতে পাচ্ছি তোমার ড্রয়িং রুমে রাখা রূপোর হুঁকো
তোমার জন্য আমি কিনতে চেয়েছিলাম একটা ফটো ফ্রেম আর কিছু সুগন্ধ
কিন্তু শেষমেশ সে আর কেনা হল না, ভোর হয়ে এলো
পাহাড় থেকে ছুটে এল পরিযায়ী পাখি
পৃথিবীর সব নোনা জলে পড়ে থাকা বটের ছায়া
আজকাল নিঃশ্বাস ফেলে আমার গায়ে
অথচ ফাস্টট্রাকের ঘড়ি ছিল আমার স্টাইল স্টেটমেন্ট
আমি আর কোথাও যেতে পারিনা
দিন রাত সময় মেপে চোখে হরেক রকম ড্রপ
চোখ দুটো জুড়ে দ্রুত নেমে আসছে স্মৃতির ছানি
এই বসন্তেই মনে হচ্ছে চোখ জুড়ে নেমে আসবে রাত বারোটা
পারলে আমার জন্যে এনো একটা ব্রেইল শেখার বই
তোমার আমাকে দেওয়ার – একমাত্র উপহার

ইনসোমেনিয়া

জ্যোতির্ময় কবে আমি সারা রাত জুড়ে ঘুমাতে পারব?
প্রতিটা দিনের শেষে কে যেন বলে যায় কানে,পেঁচার রক্ত বইছে আমার গায়ে
আমি চুপ করে বসে থাকি জানলা র কার্নিশে দিই পা
সেই সব দেওয়ালি র দিন, ফানুস আর রকেটের রসনাই ঢেকে রাখে আকাশ
চোখের পাতার ঘুম পুড়িয়ে সমাধি দেয় পাঁচ মাইল দূরে
হাওয়া কেটে শ্বাস নিতে যাই আকাশের গায়ে
আমার প্রচণ্ড শীত করে জ্যোতির্ময়
কবে আমি শুধু এক ঘুমে রাত পার করব?
একবার সন্ধ্যাবেলা আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা খসা দেখতে পেয়েছিলাম
কোথায় যে পড়ল সে, কুড়িয়ে পেলে তার বদলে
ওষুধের দোকান থেকে ঘুমের ওষুধ কিনতাম -প্রেসক্রিপ্‌শন ছাড়া
মাঝে মধ্যে মধ্যরাতে শুধু তোমাকে ছুঁতে চেয়ে হাউ হাউ করে কাঁদি অনেকক্ষণ
বেমালুম ভিজিয়ে ফেলি বালিশে লুটানো এলো চুল
তারপর চুলের সোঁদা গন্ধে ঘোর লাগে আধো ঘুমে

এখন আমার পেঁচার মতো ছোঁ মেরে হঠাৎ ঠুকরাতে ইচ্ছা করে
ভালোবাসার গায়ে, দীর্ঘ একটা রাত
মানুষের পায়ের শব্দে লুকিয়ে ফেলি মাথা
কেন এই থেমে থাকা ? বড় গহীন ব্যথা
কবে একটা রাত আসবে জ্যোতির্ময়
শুধু বালিশ জড়িয়ে ঘুম দেব টানা-
শুধু বালিশ জড়িয়ে ঘুম দেব টানা!