মশিউর রহমানের কবিতা

মশিউর রহমানের কবিতা

অসাড়তায় মোড়ানো এবং অতঃপর স্বরবর্ণ

নাকে ধাক্কা দিল রাতের ঝিম ধরা চাপা গন্ধ

আমি আমার সাথে দ্বৈত আলাপে রত
সঙ্গ দিচ্ছে গোমড়া মুখো চাঁদ
চাঁদের নাই কোন উচ্ছ্বাস নাই কোন হাসি
সব খেয়ে ফেলেছে অদৃশ্য এক শত্রু বিশ্বময়

চারপাশের ছড়ানো বর্ণমালায় নাই কোন স্বরবর্ণ
তাই হয়নি আর কোন নতুন শব্দ ও বাক্যমালা
শুধু অপেক্ষা, অসাড়তায় মোড়ানো এক একটা প্রহর

শতাব্দীর জরা চারদিকে ঘিরে ধরে আছে
সৌরবাতির আলোর আড়ালে গিলতে চায় জনপদ
ভীত কুকুর নিজের গায়ে নিজের কামড় দিচ্ছে…

হঠাৎ নেশাচর পাখির ডানাঝাপটায়ে বলে,”স্বরবর্ণ”

আমি চেয়ে দেখি,
আকাশ থেকে ঘুরে ফিরে নেচে নেচে নেমে আসে
এক ঝাঁক ” স্বরবর্ণ “।

আমার প্রেম

আমার প্রেম, স্মৃতিময় বিস্মৃতি, সে তো সিলিং এ ঝুলানো মাকড়শার পুরাতন জালের মতো ঝুলে থাকা কালো কালো ঝুল!
সেগুলাতে সৌন্দর্যের বড়ই অভাব, উদাসীনতায় একটু একটু বেড়ে ওঠে…

বেড়ে উঠতে উঠতে মাকড়শার ঝুলন্ত ঝুলগুলি বটগাছের লতা হয়ে যায়
মনেপড়ে দুই একবার বটবৃক্ষের লতায় দোল খাওয়ার কথা; দোল খেতে খেতে নিজেকে মনে হয়েছিল দম দেওয়া ঘড়ির দোলনা, সময়ের কারিগর
কিন্তু মাকড়শার ঝুলে দোল খাওয়া যায় না
থেমে থাকা সময়ের জীর্ণ প্রতিচ্ছবি

হঠাৎ একটা টিকটিকি সিলিং থেকে থপ করে পড়লো
গায়ে তার মাকড়শার কালো জালের ঝুল!
আমার প্রেম ঐ পর্যন্তই।

মুখোশ

সুন্দর মুখোশের আড়ালে প্রাগৈতিহাসিক অন্ধকার
হাতে হাত মিলিয়ে, তালে তাল দিয়ে করে কারবার
অাদি থেকে অন্ত অন্ধকারের একই স্বরূপ
তবে, অন্ধকারেই চেনা যায় আসল-নকল
কারন, অন্ধকারে যে মুখ, মুখোশ ও সবার একই রূপ

অনেক হয়েছে চেনা অন্ধকারে, দিয়েছি তালে তাল
অনেক হয়েছে ছোটা মরীচিকার পিছনে বেসামাল
এবার সবকিছু থেকে নিজেকে বিরত করার সময়
এবার নিজেকেই নিজে ভালোবাসার সময়
এবার নিজের মাঝেই খোঁজা নিজের নিরাপদ আশ্রয়

ঐ পথে সেই পথে সব পথেরই শুনি গান
তবে কোন পথেই আর জুড়ায় না আমার প্রাণ
আমার চলা আমার বলা আমার মতোই থাকুক
আমার আকাশ আমার বাতাস আমার পাখিরা
আমার পৃথিবীতে আমার মত করেই ডাকুক…