শম্পা ঘোষের কবিতা

শম্পা ঘোষের কবিতা

ভালোবাসি তোমায়

একটা নদী বিরাজমান একান্তভাবেই আমার মনের খোলা জানালাটার পাশে –
কিন্তু সম্ভবত নদীটা গেছে মরে !
বড়ো শান্ত – ভীষণরকম শান্ত সে ।
সেই নদীতে নেই কোন ঢেউ –
কোনো স্রোত ও নেই তাতে ।
বড়োই অদ্ভুত ভাবে শান্ত হয়ে রয়েছে সে ।
আমার আজন্মকালের হাসি কান্না সবকিছুকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে সে রয়েছে শুয়ে –
ভেতর থেকে এক সুতীব্র অভিমান বোধ জেগে উঠছে –
মনও ভাবছে – এ কেমন নদী !
কেমন ধারা তার চলন !
প্রকৃতিও অবাক হয়েছে তার জন্মে !
নিরবেই ঝরছে লক্ষ কোটি ঝরাপাতার দল ওই পাষাণের বুকের উপর –
দিন শেষে সন্ধ্যা নামছে ঐ সাদা বলাকার শুভ্র পাখায় ভর করে ।
কি জানি কেন তবুও ওই মরা নদী টা ওঠেনা জেগে !
রাত হচ্ছে গভীর থেকে গভীরতর –
ওর গা বেয়ে ঠিকরে পড়ছে অন্ধকারের জ্যোতি।
বালিচরের করুন আর্তনাদ যাচ্ছে শোনা ।
উপহাস করে হাসছে শতাব্দী –
বলছে জানি জানি তোমারও আছে প্রাণ !
পূর্ণিমার ঝলসানো চাঁদ ভেঙে ভেঙে পড়ছে টুকরো টুকরো হয়ে !
এতো অভিমান দেখে অবাক হয়েছে সেও !
রাখো এবার তোমার অভিমানকে দূরে সরিয়ে
দেখো এবার তোমার চোখটি মেলে একবার –
বলছি তোমায় ভালোবাসি ।

নিষ্প্রাণ প্রাণ

খোলা আকাশের নীচে ফুটপাথে বসে ঐ কারা ?
ওই যে আদুর গায়ে ওরা রয়েছে জড়াজড়ি করে যেন কুকুর কুণ্ডলী !
তবে কি ওরা নয় মানুষ !
নেই তো ওদের গায়ে জামাকাপড়ের কোন লেশ!
এই হিমেল হাওয়ার পরশ তবে কি লাগে না ওদের গায়ে !
ধরায় না কি ওদের হাড়ের মধ্যে কাঁপুনি !
ওরা কি আছে বেঁচে !

আমরা যখন নিই শীতের উষ্ণতার ওম
তখন ওরা কিভাবে থাকে ওই খোলা ফুটপাথে !
শীতে আমাদের চাই উষ্ণতা আর আরাম –
সাথে থাকতে হবে এখানে ওখানে ঘোরা ।
পিকনিক টা জমে এই শীতে –
ভুঁড়ি ভোজনেই তো তখন মজা –
কমলালেবুর কোয়া ছাড়াতে ছাড়াতে জমবে হাসি ঠাট্টার ফোয়ারা !
নলেনের সন্দেশে জমে যাবে মজা !
জমাতে চাই জয়নগরের মোয়ার সুখ !

কোথায় থাকে তখন ঐ ফুটপাথ বাসীরা ?
ওরা কি ভীড় করে আমাদের মনে ?
যা খুশি হচ্ছে হোক না ওদের –
মরুক না ওরা !
কি দাম আছে ওদের ওই সামান্য প্রাণের !
কি কাজে লাগবে ওরা সমাজের !
ওরা তো সমাজে দুর্গন্ধ ছড়ানো নিকৃষ্ট বস্তু বই তো নয় !
সমাজের উপরতলায় এই তো বেশ আছি আমি তুমি – আমরা সবাই –
কিবা এসে গেল নিচুতলার কোথায় কি হচ্ছে তা জানার চেষ্টা করার !
মরুক ওরা –
আমরা বাঁচি নিজের নিজের সুখে
মুড়ে নিই নিজেদেরকে শালে কিংম্বা সোয়েটারের ওমে
মরছে মরুক ওরা ওই হাড় হিম করা শীতে –
ওই নিষ্প্রাণ প্রাণ গুলো

তোমায় খোঁজা

ঐ নীলাকাশের নীল সমুদ্দুরে আপন মনে গেলাম আমি হারিয়ে –
হারিয়ে গেল আমার সাথে আমার রঙিন বেলা –
আমার শৈশব থেকে মধ্য দুপুরের চিকন চিকন বেলা –
নীল সাগরে ভেসে আমি হলাম শুভ্র মেঘের পালক
বলাকা আর বুনো হাঁসের আদরে হলাম আমি সিক্ত ।
বেহিসাবি এই অনুরাগে সময়ের তরীতে গেলাম আমি ডুবে –
আমার দিন ভুলেছে ,রাত ভুলেছে ,স্থনকাল ও গেছে ভুলে
তোমার নামের ঐ সাগরে ডুবেই আমি মরেছি।
তোমার সুখের ছায়ার মায়ায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছি মাধবীলতার মতো –
জলের রঙে রাঙিয়ে নিয়ে তোমায় প্রেমের রঙে রেঙেছি ।
আমার মন কেমন করা দিনগুলো সব বসলো থিতু হয়ে আমারই মনের ঘরে ।
আমার চোখের জলে ভিজে তোমার সেঁজুতির রঙ হল বিবর্ণ ।
আমার রাগ অনুরাগ আর উপেক্ষারা কেমন যেন থেমে গেল অভিমানে !
সেই তো আমায় চলতে হল জীবনপথে একলাই।
আমার এক জীবনের সব টুকু নীল শুষে নিয়ে ফুরিয়ে দিল আমায় –
চোখের শ্রাবণের ঐ উষ্ণ নোনা জলের ধারা আমায় করতে হল পান –
আমার অবুঝ বোধের মনটা নিয়ে ঐ আকাশে এখনও খুঁজি তোমায় –
আমার এই খোঁজা চলতে থাকেই তোমায় নিরবধি …..