অন্যভাষার মুগ্ধপাঠ এবং আত্মোপলব্ধি

অন্যভাষার মুগ্ধপাঠ এবং আত্মোপলব্ধি
উদয় শংকর দুর্জয়
জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ কবিতাটির সাথে লর্ড বায়রনের ‘শি ওয়াক্স ইন বিউটি’ এবং অ্যাডগার অ্যালান পো’র ‘টু হেলেন’ কবিতার কিছু সাদৃশ্যতা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু সাদৃশ্যতা ছাপিয়ে যদি এক নতুনত্বের আবির্ভাব ঘটে তবে তাকে কোনো ভাবেই প্রভাবিত বলে দাবি করা যায় না। সেখানেও রয়েছে এই নব সৃষ্টির উৎকর্ষতা। ভাব এবং গাম্ভীর্যতাকে ছাপিয়ে ‘বনলতা সেন’ হয়ে উঠেছে বাংলা কবিতার এক মাইল ফলক। সবার অলক্ষ্যে, সবার শ্যেন দৃষ্টির আড়ালে এই নিভৃতচারী নাটোরের কোনো এক পাড়া গাঁয়ের রমণীকে ভেবে অক্ষরবৃত্ত ছন্দের আঠারো পঙক্তির এক নিরেট যাদু ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন ‘বনলতা সেন’ কবিতায়। ১৮১৩ সালে বায়রন যখন লেখেন ‘শি ওয়াক্স ইন বিউটি’ কবিতায়-
She walks in beauty, like the night
Of cloudless climes and starry skies;
And all that’s best of dark and bright
Meet in her aspect and her eyes:
Thus mellow’d to that tender light
Which heaven to gaudy day denies.’
বিংশ শতাব্দীর বাঙলা সাহিত্যের অন্যতম আধুনিক কবি জীবনানন্দ দাশ ‘বনলতা সেন’ কবিতাটি লিখেছেন ১৯৩৫ সালে, তাঁদের প্রায় একশ’ বছর পরে। ‘বনলতা সেন’ কবিতায়, বায়রন আর পো’র যে অনুষঙ্গ দেখতে পাওয়া যায় তা বিশ্লেষণ করলে ‘বনলতা সেন’কেই বেশি উৎকৃষ্ট মনে হয়। উতরে যাওয়াটাই মূল কথা অর্থাৎ নতুনত্বের মুকুটে এক রঙিন পালক। ত্রিশের এই অন্যতম কবি ছিলেন ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র আর তিনি যে প্রচুর পাশ্চাত্য সাহিত্য পড়েছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ১৮১৩ সালে বায়রনিক কবিতাগুলো তখন দারুণ আধুনিক এবং তখনকার সমাজে বায়রন এক আইকোনিক হিরো। তাহলে বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতা আসতে কিছুটা সময় বেশি লেগেছে বলা যায়। ২০০ বছর পরে এসেও দেখা যায় বায়রনের কবিতা সমানভাবে সমাদৃত।
জর্জ গর্ডন বায়রনের কবিতায় রয়েছে প্রেম আর প্রনয়ের এক দারুণ উচ্চারণ। রোম্যান্টিক ধারার এই কবি প্রেমের মধ্য থেকে দেখিয়েছেন স্বাধীকার আন্দোলনের এক উন্মাদনাময় যাত্রা। বায়রন তখনকার সমাজে সংস্কৃতির এক নতুন ধারা সৃষ্টি করেন যা সমসাময়িক সময়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং অর্থবহ প্রভাব ফেলে, এবং তা সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রায় দিকপালের ভূমিকা পালন করে। বায়রন তাঁর কবিতায় প্রেম-ভালোবাসাকে ভিন্নভিন্ন ভাবে দেখিয়েছেন: ইলিসিট লাভ, ইডিলিক লাভ, সেক্সুয়াল এক্সপ্রেশন, সেক্সুয়াল ডিকেডেন্স, থরটেড লাভ এবং পরিনতি। তিনি কবিতার মধ্যে যে প্রেম এবং আবেগকে দেখিয়েছেন তা সম্পূর্ণ ন্যাচারাল; মানুষের মনের অদম্য ভালোবাসাকে তিনি কখনও অবদমন করেননি বরং তা সত্যিকারের রঙে রূপায়িত করেছেন। বায়রন তাঁর মহাকব্য ‘ডন জুয়ান’ লিখতে গিয়ে দেখিয়েছেন মানব মনের সম্পর্কগুলো কতটা নিষ্পাপ, প্রাকৃতিক এবং প্রাচীন। তাঁর অধিকাংশ লেখাগুলোর মধ্যেই রয়েছে বাস্তবতার প্রতিচিত্র। এজন্য তিনি বলেছেন ” Helen, thy beauty is to me
Like those Nicean barks of yore,
That gently, o’er a perfum’d sea,
The weary way-worn wandere bore
To his own native shore”. তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘শি ওয়াক্স ইন বিউটি’ লেখেন তাঁর ভায়ের স্ত্রী মিস্ উইল্মটের সৌন্দর্যে অভিভূত হয়ে। আবার ১৮১৬ সালের দিকে লেখেন ‘হোয়েন ইউ টু পারটেড’– অনেকটা আত্মজীবনীমূলক, লেডি ফ্রান্সিস উইডারবার্ন যখন ওয়েলিংটনের ডিউকের সাথে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এসবের মধ্য দিয়ে কবিতা হয়ে ওঠে যাপনের নীলাভ চিত্র, যেখানে থাকে একাগ্র উপলব্ধির রুঢ় বাস্তবতা। সেসব বাস্তবচিত্র কবিকে যেন কিছুতেই ঘুমোতে দেয় না, স্মৃতির প্রাচীর ভেঙে তাড়িয়ে বেড়ায় সারাক্ষণ আর কবির অবচেতন মন হয়ে ওঠে লেখার শাণিত আঙুল।
এই বায়রনিক হিরোর মতো হয়তো অনেকেরই স্মৃতির বন্দর জেগে ওঠে প্রেম ও প্রণয়ে। সময় এবং কালের ঘটনাপুঞ্জ কবিকে কিছুতেই না লিখিয়ে ক্ষান্ত হয় না। বাস্তবচিত্র থেকে লিখে ওঠার মধ্যে হয়তো বায়রনের প্রণয়-প্রবঞ্জনা-আবেগ জেগে না উঠলেও সমসাময়িক ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে লেখকরা লিখে যান এই আহত পৃথিবীর কথা। প্রেমকে কখনও অস্বীকার করা যায় না তাই বায়রনের ‘সী ওয়াক্স ইন বিউটি’ এর মতো বহু কবিতা হয়তো সৃষ্টি হয়েছে এই গ্রহে, সেগুলো কবিতা হয়ে উঠেছে কিনা তা সময় আর পর্যালোচনার ব্যাপার! অ্যাডগার অ্যালান পো’র ‘টু হেলেন’ বা জন কীট্সের ‘দ্যা ডে ইজ গন, অ্যান্ড অল ইট্স সুইট্স আর গন’ এর মতো অনেকেই লিখতে চান বা লেখার স্বপ্ন দেখেন। সেটাই তো সত্যিকারের খোয়াব যা মানুষকে কিছুতেই স্থির হতে দেয় না, যতক্ষণ না তা সফলতার আলো দেখতে পায়। তাইতো একজন মননশীল লেখকের প্রতিশ্রুতিশীল ভাবনার অন্তর্জাল ভেদ করে ঠিক ঠিক লেখার অনুষঙ্গ বেরিয়ে পড়ে।
গীত হচ্ছে শিল্প-সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ যা মানুষের কাছে বিনোদনের একটি সহজ মাধ্যম। সুরের আবহ জুড়ে যে গল্প থাকে, যে কবিতা থাকে তা যতটা না যন্ত্রের মাধুর্যতায় উপলব্ধি করা যায় তার চেয়ে বেশি উপলব্ধি করা যায় গীতিকবিতা অনুধাবনের ক্ষেত্রে। সুর মানব মনকে তাড়িত করে, এক অন্য জগতে ধাবিত করে। অন্যদিকে গীতিকবিতা পাঠের মাধ্যমে কাব্যিক প্রাচুর্যতার স্পষ্ট কলতান জেগে ওঠে পাঠকের মনে। ধরা যাক সেই বিখ্যাত গায়ক বব ডিলানের গীতিকবিতা, যেখানে ফুটে উঠেছে গল্প, প্রতিবাদ, পাওয়া না পাওয়ার সামষ্টিক অনুরণন ।
“How many roads must a man walk down
Before you call him a man?
How many seas must a white dove sail
Before she sleeps in the sand?
Yes, ‘n’ how many times must the cannon balls fly
Before they’re forever banned?
The answer, my friend, is blowin’ in the wind
The answer is blowin’ in the wind ‘
(Bob Dylan – Blowin’ In The Wind)”
বব ডিলান কখনও প্রতিবাদী কখনও প্রেমিক আবার কখনও পথিক। তিনি বলেন ‘অর্থ কিছুই না, একজন মানুষ সফল সে যদি নিয়মিত সকালে ঘুম থেকে ওঠে আর রাতে নিয়ম করে নিদ্রা যায় আর এরই মাঝে সে যেটা করতে চায় সেটা ঠিকঠাক মতো করে’। তিনি জীবনটাকে এতো সহজ করে দেখেন যে জীবনে জটিলতা বলতে কিছু নেই। সময়টাকে উপভোগ করাটাই জীবনের মানে। দুঃসময়টা সবসময় কড়া নেড়ে যায় কারণ তার কাজটাই তাই। এ জন্য একজন পাঠক বা লেখকই পারেন দুঃসময়কে হটাতে। বব ডিলান তেমনি একজন, যিনি বিশ্বাস করেন- ‘Behind every beautiful thing, there’s some kind of pain’. লেখালেখিতে উৎসাহ উদ্দীপনা যেমন প্রয়োজন তেমনি চলমান জীবনের ক্ষেত্রেও তা অপরিহার্য। সংগীত এবং সংস্কৃতিতে তাকে একবিংশ শতাব্দীর একজন ‘মোস্ট ইনফ্লুয়েন্সিয়াল ফিগার’ বলে অবিহিত করা হয়। ২০০৮ সালে, পুলিৎজার পুরস্কার প্রদানের সময় তাকে উল্ল্যেখ করে বলা হয়- His profound impact on popular music and American culture, marked by lyrical compositions of extraordinary poetic power’.একজন সৃজনশীল গায়ক এবং গীতিকারের মাঝে যখন কাব্যিক শক্তিটা বিদ্যমান থাকে তখন তিনি হয়ে ওঠেন আরও শক্তিশালী। কিংবদন্তী এই শিল্পী, কবি, গীতিকার তিনিও কোনো না কোনো ভাবে কারো লেখা পড়ে বা গান শুনে অনুপ্রাণিত হয়েছেন; তাঁদের মধ্যে লোক-সংগীত শিল্পী উডি গাথরি, তাঁর ‘লাস্ট থট্স অন উডি গাথরি’ গানটাই এর প্রমাণ করে, জ্যাক কেরয়্যাক, কার্ল ভন, ফরাসী তরুন কবি আরথার রিম্বাউড (র্যাবো), লিও টলস্টয়, অ্যালেন গিন্সবার্গ সহ আরও অনেকে।
উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ, রোম্যান্টিকতায় যার বিশাল ব্যাপ্তি । আসা যাক এই ইংরেজ কবির কাব্যিক ভাবনা এবং কবিতার অন্দর মহল নিয়ে। তাঁর কবিতা কীভাবে পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধ করে তোলে! কেন তিনি প্রথম পাঠ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। ওয়ার্ডসওয়ার্থের কবিতায় যে ইমেজারি বা চিত্রকল্প দেখা যায় তা হলো মেটাফোর এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অভূত সংযোগ। তাঁর কবিতায় প্রেম এবং আবেগ যেন ছন্দাকারে ছড়িয়ে আছে। ধরা হয়ে থাকে ওয়ার্ডসওয়ার্থের আগে মানুষের অপরিণত আবেগের বর্ণনা খুব কম কবিই কবিতার মাঝে তা তুলে ধরেছেন। তিনি তাঁর সনেটে লিখেছেন-‘beauteous evening, calm and free’. গোধূলিকে সম্বোধন করেছেন সুন্দর, শান্ত আর অবাধ বলে। কবি তাঁর কবিতায় বিমূর্ত ছায়াচিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছেন নিখুঁত তুলিতে। এই কবিতাতে কবি দেখেন বনভূমির মাথার উপর থেকে সূর্য যেন ধীরে ধীরে ফিরিয়ে নিচ্ছে মুখ, সমুদ্রের শরীর থেকে ঝাঁক ঝাঁক কলরোল যেন ভেসে আসছে কবির কর্ণদুয়োরে। আর স্বর্গীয় কোমলতা যেন ছড়িয়ে পড়ছে শান্ত সরোবর থেকে সমুদ্রতীরে। তিনি বলেছেন শোন হে– ঈশ্বর এখনো জেগে আছেন। এ কবিতাতে ফুটে উঠেছে উপমা, উৎপ্রেক্ষা, অন্বয়, চিত্রকল্প। আর নিরবিচ্ছিন্ন অনুভুতিগুলো ধরা পড়ছে কবিতার রন্ধ্রে রন্ধ্রে। যে তিনটি বিষয়ের মাধ্যমে কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থকে অন্যদের থেকে আলাদা করা যায় তা হলো: কবিতার বিষয় বস্তুতে অনুভূতিগুলোর উপর গুরুত্ব আরোপ করা, সহজাত প্রবৃত্তি, অভিরুচি, লৌকিকতা এবং সাহিত্যের প্রতি নিগুঢ় আসক্ততা।
কবির গ্রামীন জীবন যাপন কেটেছে ঝোপঝাড়, লতাপাতায় ঘেরা শৈশবীয় কটেজে, যেখানে মানুষের সংবেদনশীল আত্মা এবং ভেতরকার অনুভুতিগুলো খুব ¯পষ্টভাবে ছুঁয়ে যায়। ওয়ার্ডসওয়ার্থ বলেন- ‘Poetry should be written in the nature language of common speech, rather than in the lofty and elaborate dictions that were then considered poetic’. তিনি আরও বলেন কবিতার প্রথম সূত্রই হলো ‘Pleasure’ অর্থাৎ আনন্দ উপভোগ করা মানেই হচ্ছে তৃপ্তি, সুতরাং একজন পাঠক যেন পাঠান্তে উপলব্ধি করতে পারে সে কী পড়ল। ছন্দ এবং সৌন্দর্যের অভিব্যাক্তি ঘটানো হচ্ছে কবির কৃতিত্ব, পাঠক যেন স্মৃতির ভেতর থেকে তুলে আনতে পারে বোধশক্তিকে এবং গভীর চেতনাকে জাগিয়ে তুলতে পারে অনায়সে। প্রকৃতির সাথে আবেগের যে অবাধ বিচরণ, কবি সেসব উপলব্ধি তাঁর কবিতায় বপন করেছেন যেমন করেছেন বিখ্যাত আইরিশ কবি ডব্লিউ বি ইয়েট্স।
সবুজ বনাঞ্চলের এক নিগুঢ়তায় কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থ কাটিয়েছেন জীবনের অনেকটা বছর। সলিটারি রিপারের গুঞ্জন শুনে কবি যেন থমকে দাঁড়াতেন। বুকের মধ্যে কে যেন বাজিয়ে যেত শস্য কাটার হৃদমিক বাঁশি! প্রকৃতিকে এতোটাই ভালোবাসতেন যে প্রকৃতির ওপর মানুষের অত্যাচার মেনে নিতে পারেননি। সনেটে লিখেছেন –
”The world is too much with us; late and soon,
Getting and spending, we lay waste our powers;
Little we see in Nature that ours”.
একজন কবি হিসেবে তিনি দেখিয়েছেন সচেতনবোধ, দেখিয়েছেন তিনি কীভাবে মানবিকতার উৎস-ধারায় নিজেকে নিযুক্ত করেছেন। একজন কবিরও যে এই বিশ্ব ব্রহ্মা-ের প্রতি দায় রয়েছে তা ওয়ার্ডসওয়ার্থের কবিতার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়; তাঁর এই প্রখর সচেতনতা কবিতাকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলেছে। কবিতা যে শুধু ছন্দ আর শব্দের ব্যাবহার নয় এবং অন্তর্নিহিত আনন্দ, বেদনা, আবেগ, শোক, বিহ্বলতা, বিদ্রোহ, প্রেম-প্রণয়, পরিনতি এসব কিছুর একটি বার্তা থাকতে পারে তা তিনি প্রমাণ করেছেন কবিতায়।
প্রকৃতির এক অভূতপূর্ব চিত্রকল্প কবি দাঁড় করিয়েছেন তাঁর অধিকাংশ কবিতায়। ‘I wandered lonely as a cloud’ তাদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর অসাধারন বর্ণনায় যেন আমার চারপাশে তারই প্রতিচিত্র ফুটে ওঠে-‘Cloud floating above hills and valley’ আর ছোট্ট সেই হ্রদের পাশ দিয়ে উপছে পড়ছে ড্যাফোডিলের নির্লজ্জ শরীর। তাঁর কল্পনার সুদূর দৃষ্টি যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে। যখন তিনি বলেন ফুলেদের নৃত্যে এক অনন্য সুর ছড়িয়ে পড়ে হ্রদের আশে পাশে তখন গোধূলিবেলা, বাড়ি ফেরার কথা মনে করিয়ে দেয়। এখানে এলেই কবি হৃদয়ের সব আর্তি, একাকীত্ব সরে গিয়ে আনন্দের ¯স্রোতধারা এসে ভিড় করে। ওয়ার্ডসওয়ার্থের কবিতার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃতির সাথে মনব হৃদয়ের এক নান্দনিক সম্পর্ক যেমনটি রয়েছে বিংশ শতাব্দীর সাড়া জাগানো কবি রবার্ট ফ্রস্টের কবিতায়। সে সম্পর্কের নিগুঢ়তা যেন কবিকে সজীব করে তোলে লেইক ডিসট্রিক্টে অবস্থিত তাঁর ডাব কটেজের পরবর্তী দিনগুলোতে।
ওয়ার্ডসওয়ার্থ পড়তে পড়তে আমিও যেন হারিয়ে যাই বনাঞ্চল থেকে পাহাড়, উপত্যকা কিংবা রাই সরষে ক্ষেতের হলদিয়া শরীরে। ড্যাফোডিলের কথা মনে পড়লে আমার চোখের সামনে গাঁদাফুল কিংবা নয়নতারা ভেসে ওঠে। কবির লেইক ডিসট্রিক্টের পাশ ঘেঁষে স্বচ্ছ হ্রদ আর আমার বাড়ির পাশে বুড়ি ভৈরব। তাদের মধ্যে শারীরিক সাদৃশ্যতা নেই কিন্তু এই বুড়ি ভৈরবের পাড়ে আমার স্কুল জীবনের অনেক বেলান্ত কাটিয়েছি। অনেক লেখাজোকা হয়ে যেত নদীর দিকে তাকিয়ে অথবা সিঙ্গিয়া রেলস্টেশনের মধ্যে যে বকুল গাছটা আছে তার নিচে বসে, লেখার অনেক রসদ ভিড় করত সেখানে। ওয়ার্ডসওয়ার্থের সার্থকতা এখানেই যে তিনি প্রকৃতির ভীষণ কাছাকাছি থেকে অনুধাবন করেছেন যে মানুষের দুঃখ-বেদনা একমাত্র প্রকৃতিই পারে নিঃশেষ করে দিতে আর বিনিময়ে একজন মানুষ হয়ে উঠতে পারে সুখি এবং সমৃদ্ধ। আরেক জন ইংরেজ কবি রবার্ট হেরিকের কথা মনে পড়ে যায়, তিনিও প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে লিখেছেন প্রচুর। ‘টু ড্যাফোডিল’ কবিতায় কবির বক্তব্য এরকম-
”Fair Daffodils, We weep to see
You haste away so soon;
As yet the early rising sun
Has not attained his noon.
Stay, stay
Until the hasting day
Has run.
But to the even-song;
And, having pray’d together, we
Will go with you along.
১৭০০ সালের মাঝামাঝি এই কবিতাটা লেখা হলেও আধুনিকতার ছোঁয়া স্পষ্ট রয়েছে। উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের সমসাময়িক আরেক জন কবি, সাহিত্যিক, সমালোচক এবং দার্শনিক স্যামুয়েল টেইলর কোলরিজ যিনি ছিলেন ওয়ার্ডসওয়ার্থের ছায়া হয়ে। দু’জনকেই বলা হয় আধুনিক কবিতায় রোমান্টিসিজমের পুরোধা পুরুষ। ১৭৯৮ এবং ১৮০০ সালে তাঁদের যৌথভাবে প্রকাশ পায় ‘লিরিক্যাল ব্যালেড্স’। বোঝাই যায় যে ওয়ার্ডসওয়ার্থ এবং কোলরিজ তাঁরা একে অন্যের লেখা কতোটা পাঠ করেছেন এবং সমৃদ্ধ হয়েছেন। অন্যদিকে ফ্যান্টাসি-সিরিজ লেখক ‘A song of ice and fire’ জর্জ আর আর মারটিন ‘Fire and ice’ লিখেছিলেন রবার্ট ফ্রস্টের ‘A prayer in the spring’ পড়ে উৎসাহিত হয়ে। উল্লেখ করতে হয় যে এই বিদগ্ধ কবি রবার্ট ফ্রস্ট চারবার পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছেন আর নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন একত্রিশবার কিন্তু পাননি যা সাহিত্য জগ Iতে বিরল ঘটনা। রবার্ট ফ্রস্টের ‘Iambic meter’পড়লে বোঝা যায় যে তিনিও কতটা প্রকৃতি প্রেমিক ছিলেন। তার প্রথম স্তবক অনুবাদ করলে এরকম দাঁড়ায়-
‘আজ এই বাসন্তীয় ফুলের উদ্যানে ঢালো তোমার আনন্দ সুধা
রেখো না দূরে অপরিপক্ক শস্যমালার মতো, রেখ না দূরে বসুধা
আমাদেরকে সতেজ রাখো, প্রতি বসন্তে নেমে এসো, হয়ে ঋতুর পুরোধা।’
উইলিয়াম ওয়ার্ডস ওয়ার্থের প্রায় একশ বছর পর উইলিয়াম বাটলার ইয়েট্স লিখেছেন ‘দ্যা ওয়াইল্ড সোয়ান্স অ্যাট কুল’ কবিতা। শরতের এক অনবদ্য বর্ণনা তুলে ধরেছেন এই কবিতায়। দেখিয়েছেন সিমিলি এবং মেটাফোরের কারুকাজ, এবং কবিতাটি ‘Brilliant rhetorical accomplishments of emotions’এ লেখা। প্রকৃতির সাথে একাত্বতা, চকচকে সরোবর যেন স্থির আকাশ, ছবির মতো দাঁড়িয়ে আছে পাশাপাশি, পার্কের সবুজ উদ্যান, গাছালি আর শরতে ঝরে যাওয়া পাতার মাঝে দেখতে পান ধূসর প্রকৃতির রুগ্ন অবয়ব। কবি তার কবিতার মধ্যে পুঞ্জিভুত করেছেন সকরুন স্মৃতিতে ছড়িয়ে থাকা নিদারুণ বেদনার কথা। ইয়েট্স তাঁর ভেতরে জমে থাকা এক পশলা শ্রাবণের কথা ব্যক্ত করেছেন কাব্যিকতার মধ্য দিয়ে; পাঠককে তিনি অতীতের রিক্ত দিনের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। ‘দ্যা মাউন্টেন টম্ব’, ‘টু এ চাইল্ড ড্যান্সিং আপন দ্যা শোর’, ‘ফলেন ম্যাজেস্টি’, ‘লাভ অ্যান্ড দ্যা বার্ড’, ‘দ্যা রিয়েলিস্টস’ সহ বহু কবিতা ইয়েট্স লিখেছেন যেখানে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, প্রেম-প্রণয়, স্মৃতি-বিস্মৃতি দারুণ ভাবে নিমজ্জিত আছে।
ইয়েট্সের লেখায় যে সব তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় আমাকে স্পর্শ করে যায় তা হলো: ‘Properly, We should read for power. Man reading should be man intensely alive. The book should be a ball of light in one’s hand’ অর্থাৎ তাঁর কাব্যিয় প্রকাশ ভঙ্গি। ইয়েট্সের কবিতা বিংশ শতাব্দীতে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত জ্বলে উঠেছিল যা এখনও প্রজ্জলিত। সমসাময়িক কবিদের মধ্যে স্টিফেন স্পেন্ডার, থেডর রোয়াতকি, ফিলিপ লারকিন থেকে শুরু করে ডব্লিউ হেইচ অডেনও তাঁর লিরিকধর্মী কবিতার প্রচুর প্রশংসা করেছেন। অডেন তাঁর একটি লেখার মধ্যে খুব উচ্ছ্বাসিত হয়ে বলেছেন আধুনিক সময়ে ইয়েটসের দারুণ কিছু কবিতা পড়লাম – ‘Modern writers are the moons of literature; they shine with reflected lights, with light borrowed from the ancients’ আমার কাছে মনে হয়েছে সেই একমাত্র কবি যিনি শুরু থেকে তাঁর কাছের এবং প্রকৃতির কথাগুলো সার্বজনীন করে পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছেন। ইয়েটস সারাজীবন চেয়েছেন কবিতা মানব হৃদয়ের জটিল বিষয়-আশয়গুলোকে শিল্পগুণ রূপ দিয়ে পাঠকের কাছে তুলে ধরতে। এখানেই ইয়েট্সের সার্থকতা। তিনি তাঁর অনুভূতি, অভিজ্ঞতা আলাদা আলাদা ভাবে ধৎঃরংঃরপ ধৎঃরপঁষধঃরড়হ এর মাধ্যমে সংযোজন করেছেন।
এজরা পাউন্ড এবং টি এস এলিয়েটের কথা বলতেই হবে। তাঁদের সাহিত্য কর্ম এবং একে অপরের প্রতি যে বন্ধুত্ব সুলভ সম্পর্ক বিদ্যমান তা যে কোনো পাঠককেই ভীষণভাবে আকৃষ্ট করবে। দু’জনই উনবিংশ শতাব্দীর আশির দশকে জন্ম গ্রহন করেন। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও পাঠকেক ফিরে যেতে হয় ইংরেজি সাহিত্যের এই দু’জন গুরুত্বপূর্ণ কবির কাছে। কবি, সাহিত্যিক এবং সমালোচক টি এস এলিয়ট যিনি জন্মগ্রহণ করেন ২৬শে সেপ্টেম্বর ১৮৮৮ সালে, আমেরিকার মিশৌরিতে। অন্যদিকে এজরা ওয়েস্টন লুমিস পাউন্ড, আধুনিক কবিতার অন্যতম প্রবাদপুরুষ এবং সমালোচক যিনি জন্মগ্রহণ করেন ৩০শে অক্টোবর ১৮৮৫ সালে, আমেরিকার হেইলিতে। পরে তাঁরা দু’জনেই একটা সময়ের ব্যবধানে লন্ডনে বসবাস শুরু করেন। এজরা পাউন্ড যাদের লেখা পড়ে সমৃদ্ধ হয়েছেন তাঁদের মধ্যে টি এস এলিয়ট, ডব্লিউ বি ইয়েট্স, ওয়াল্ট হুয়িটম্যান, দান্তে অ্যালিঘিয়েরি, উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ অন্যতম।
বিংশ শতাব্দীর আধুনিক কবিতার অন্যতম এই পুরোধা ব্যাক্তিত্ব এজরা পউন্ড বলেন ”চৎড়ঢ়বৎষু, ডব ংযড়ঁষফ ৎবধফ ভড়ৎ ঢ়ড়বিৎ. গধহ ৎবধফরহম ংযড়ঁষফ নব সধহ রহঃবহংবষু ধষরাব. ঞযব নড়ড়শ ংযড়ঁষফ নব ধ নধষষ ড়ভ ষরমযঃ রহ ড়হব’ং যধহফ”. পাঠ খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষের জন্য আর সে পাঠ হতে হবে গুরুত্ব সহকারে। গভীর পাঠের মধ্য দিয়ে প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব। আর সে জন্য দরকার উৎকৃষ্ট বই যা তীব্র আলো ছড়িয়ে সমস্ত অন্ধকারকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে। এজরা পাউন্ড লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করার পর আরও একজন অন্যতম প্রখ্যাত আইরিশ কবি উইলিয়াম বাটলার ইয়েট্সের সাথে তাঁর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। যদিও বাটলার ছিলেন পাউন্ডের চেয়ে বিশ বছরের বড়। বন্ধুত্বের একটা সময় দেখা যায় পাউন্ড, বাটলারকে রোমান্টিক এবং সিম্বোলিস্ট কবিতা থেকে সরে গিয়ে পোয়েটিক প্রিসিপশন অর্থাৎ স্পষ্ট এবং যথাযত চলতি বা নাগরিক ভাষা নিয়ে চিন্তা করার জন্য উদ্ভুদ্ধ করেছেন। এই নাগরিক ভাষাটাকে আমি মনে করি আধুনিক কবিতার ভাষা হোক। পাঠক সরাসরি জেনে যাক কবিতার অন্তর্নিহিত বক্তব্য। স্যামুয়েল জনসন বলেছেন ”গড়ফবৎহ ৎিরঃবৎং ধৎব ঃযব সড়ড়হং ড়ভ ষরঃবৎধঃঁৎব; ঃযবু ংযরহব রিঃয ৎবভষবপঃবফ ষরমযঃং, রিঃয ষরমযঃ নড়ৎৎড়বিফ ভৎড়স ঃযব ধহপরবহঃং”. সুতরাং বাটলার যখন সহজ কথাটাকে ভাষার ব্যবহারে নান্দনিক করে তুলছেন তখন সেটা আরও হৃদয়গ্রাহী হয়ে উঠছে। আবার জন কীট্স যখন তাঁর ‘টু অটাম’ কবিতায় লিখছেন–
‘বসন্তের গান আজ কোথায়? চিরদিনের জন্য তারা কোথায়?
শুধু তাদের কথা ভেব না, তুমি তোমার সঙ্গীতের কথাও ভাব’।
কবি বসন্ত ঋতুর বর্ণনার মাঝেও যেন মনে করছেন কোনো প্রেমিকার কথা। ‘টু অটাম’ কবিতায় ইংলিশ বসন্তের যে নিগুঢ় শিল্পচিত্র এঁকেছেন তা যেন চোখের সামনেই ফুটে ওঠে। বাটলারের কবিতায় ভাষার ব্যবাহারের সাথে সাথে ইমেজের ব্যবাহারও সমানভাবে উঠে এসেছে।
আবার দেখা যায় এজরা পাউন্ড তাঁর সমকালীন বন্ধু টি এস এলিয়টের কাব্যগ্রন্থ ‘দ্যা ওয়েস্ট ল্যান্ড’ এর পান্ডুলিপি সম্পাদনা করেছেন। তিনি সমকালিন আইরিশ ঔপন্যাসিক, ছোটো গল্পকার ও কবি জেম্স জয়েসের লেখাপত্র প্রচারের প্রসারের জন্য নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। অন্যদিকে টি এস এলিয়টের ‘দ্যা ওয়েস্ট ল্যান্ড’ নিয়ে কিছু সমালোচনা রয়েছে। লেখক রোনাল্ড বুশ বলেছেন এলিয়টের এই কবিতায় ‘জাজ’ এর ছায়া আছে। ‘জাজ’ হলো আফ্রো-আমেরিকান সঙ্গীত। উনবিংশ শতাব্দীর শেষে অথবা বিংশ শতাব্দীর গোঁড়ায় আমেরিকাতে এই সঙ্গীতের আবির্ভাব ঘটে। এলিয়ট যেসব লেখকদের সৃষ্টি সাহিত্য পড়ে সমৃদ্ধ হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে ভার্জিনিয়া উলফ, এজরা পাউন্ড, অ্যালেন টেইট, জেম্স জয়েস, উইলিয়াম গরডিস, হার্ট ক্রেইন, রাসেল ক্রক প্রমুখ। উল্লেখিত যে ‘দ্যা হলো মেন’ এবং ‘অ্যাশ ওয়েনেসডে’ কবিতা দুটিতে আইরিশ কবি সিয়ানো রিওরডেন এবং মারটিনো ডিরেইনের লেখার ছাপ রয়েছে।
ভুল আবিষ্কারের জন্য গভীর পাঠ দরকার। সঠিক পঠনপাঠনের মাধ্যমে উন্মোচিত হতে পারে নতুন দিগন্ত, অনেক অজানা তথ্য। একটি উৎকৃষ্ট বই একজন পাঠককে দিতে পারে অসামান্য জ্ঞান; একজন লেখক হয়ে উঠতে পারে সমৃদ্ধ এবং পেতে পারে লেখার সঞ্জিবনী শক্তি। অগ্রজ লেখক উৎসাহিত হয়ে নতুন কোনো সাহিত্য নির্মাণে নিমগ্ন হতে পারে; নতুন কোনো আলো দেখাতে পারে আগামীর পাঠককে। সেক্ষেত্রে একে অন্যের প্রেরণা, উৎসাহ, উদ্দীপনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে পারে পরবর্তী সাহিত্যকর্মে, হয়তো এটাই স্বাভাবিক। জেম্স জয়েস, টি এস এলিয়ট, এজরা পাউন্ডের মধ্যে একে অন্যের প্রভাব লক্ষ্য করা যায় তাঁদের সাহিত্য কর্মে; আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বীকার করেও নিয়েছেন তাঁদের মধ্যে এক অপরের গভীর সম্পর্কের কথা। সাহিত্য সৃষ্টির উৎসকাল থেকে এই ধারা বহমান তা কেউ স্বীকার করুক আর নাই করুক। কারো মধ্যে প্রভাব প্রকট আর কারো মধ্যে অদৃশ্য ছায়া হয়ে জড়িয়ে থাকা। সে ক্ষেত্রে একটা উদাহরন টেনে শেষ করা যেতে পারে, ফরাসী লেখক বোর্হেসের সাহিত্য কর্মের উপর অন্য লেখকদের ছায়া কীভাবে বিস্তার লাভ করেছে সেগুলোর একটা তাৎপর্যপূর্ণ সমালোচনা করতে গিয়ে উনবিংশ শতাব্দীর আরেক ফরাসী সাহিত্য সমালোচক আঁদ্রে মারোয়া বলেছেন “নিখাদ এবং দার্শনিক-সংক্রান্ত ভঙ্গিমায় নির্ণীত এইসব সাহিত্য সৃষ্টির পেছনে যার নিশ্চিত যোগসূত্র রয়েছে তিন হলেন অ্যালান পো, আবার এই অ্যালান পোর সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়েছেন স্টিফেন মালার্মে, আবার সেই স্টিফেন মালার্মের ছায়া এসে পড়ে কবি প্রাবন্ধিক ও দার্শনিক পল ভালেরির সাহিত্যকর্মে, এবং বোহের্সের সাহিত্যকর্মেও ভালেরির প্রভাব লক্ষ্য করা যায়”।
অর্থাৎ একটি আনন্দময় পাঠ থেকে উঠে আসতে পারে অনেক নিগুঢ় রহস্য। সেসব রহস্য হয়তো সবার জন্য উন্মোচনের দরকার হয় না কিন্তু আত্ম উপলব্ধির এক গভীরতম অঞ্চল পেরুবার সময় টের পাওয়া যায় একটি লেখার ভেতরকার শব্দ কাঠামো, ভাবের বিন্যাস, অধুনিকতা এবং গ্রহণযোগ্যতা। কোনো নির্দিষ্ট ভাষার সাহিত্যকে আরও সমৃদ্ধ করতে গেলে অন্যভাষার সাহিত্য পড়া অত্যন্ত জরুরী কারণ পৃথিবীর কোন কোণায় কি লেখা হচ্ছে সেটা জানা এবং পাঠ করা একজন সচেতন লেখকের অপরিহার্য কর্ম বলে আমি মনে করি। ‘ইনোভেশন’ শব্দটি যেমন আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত তেমনি সাহিত্যের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য কারণ ‘নতুনের প্রবর্তন’ দরকার। বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করতে হলে এই ‘ইনোভেশন’ অত্যন্ত জরুরী তার জন্য অন্যভাষার সাহিত্য পাঠ আমাদের গুরু দায়িত্ব।