সৈয়দা কানিজ রাসুলের কবিতা

শব্দ নিঃশব্দ
ঠক্ ঠক্ ঠক্ নির্মাণ শ্রমিকের হাতুড়ির ঘায়ের শব্দ
অবিরাম ছন্দ তুলে হারিয়ে যাচ্ছে বাতাসের স্রোতে।
কখনওবা চার দেওয়ালের মাঝে শব্দগুলো
মাথার ভিতর বড় যন্ত্রনার কামড় বসায়,
শব্দের অতিকীয়তায় নিঃশব্দের বিলোপ ঘটে।
দিনমান শব্দের অনুরণন প্রতিধ্বনিত
হতে থাকে আমার শ্রবনেন্দ্রিয়ের মধ্যে।
নেহাত কিছু শব্দ আমার কর্ণকুহরে
সুধা বর্ষন করে যায় ; ফজরের আযানের শব্দ
‘আস–সালাতো খাইরুম মিনান নার’,
সদ্যজাত শিশুর কান্নার শব্দ,
মুষলধারে বৃষ্টির ঝম্ ঝম্ শব্দ,
রবিশঙ্করের দাদরা রাগের সেতারের শব্দ,
‘রবিঠাকুরের অজর কবিতা অবিনাশী গানে’র শব্দ।
জীবন জীবিকার তাগিদ শব্দ বিনে অসম্ভব।
উদরপূর্তির জন্য হেসেলে খুন্তি কড়াইএর শব্দ,
পথে ঘাটে শকটযানের শব্দ,
মানুষের মুখে খিস্তিখেউড়ের শব্দ,
মহাকাশে গ্রহ বিষ্ফোরণের শব্দ,
বিশ্বজুড়ে মিসাইল, বোমাবাজি, গুলির শব্দ,
অন্তঃসত্ত্বা মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ
শিশুর চিৎকারের শব্দ, পথে ঘাটে
নির্যাতিতার আর্তচিৎকারের শব্দ,
ধর্ষক, লুঠেরা, নব্য রাজাকারদের অট্টহাসির শব্দ,
প্রতি পল অনুপলে শব্দের গতিবেগ
ক্রমশঃ বর্ধমান।
নিঃশব্দতাকে এফোঁড় ওফোঁড় করে
শব্দ ক্রমশঃ বেড়েই চলেছে
বুকের ভিতর
বুকের ভিতর একটি ছোট নদী আছে
নদীর জলে দুঃখ সুখে দুজন কাছে।
তোমার জন্য একটি ছোট ঘরও আছে।
ভালোবাসার ফল্গুধারার ঝর্ণা আছে।
বুকের ভিতর দ্রোহের সাথে আগুন জ্বলে
ন্যায়ের পক্ষে পুড়িয়ে দিতে শুধুই বলে।