সুবীর লরেন্সের কবিতা

তবুও চিহ্ন রয়ে যাবে
আলো না জ্বললেও ছায়া থেকে যাবে কোথাও।
সকাল দুপুর বিকাল চলে গেলেও থেকে যাবে কিছু,
সন্ধ্যা হারালেও আকাশ রয়ে যাবে,
চাঁদ, তারা মেঘে ঢেকে গেলেও
অন্ধকারের জোনাকি জ্বালবে অন্য সূর্য এক।
হিমেল বাতাস এসে, ছুঁয়ে বলে যাবে
এই তো আছি এখানে।
তবুও চিহ্ন রয়ে যাবে।
কৃষ্ণচূড়া রবে না কৃষ্ণচূড়ায়।
লাল পাপড়ি হয়ে যাবে কারো চেনা মুখ,
সবুজ পাতারা আঁচল হয়ে ছায়া হবে কারো,
কারো বা কবিতার ঘ্রাণ।
বইয়ের কোন পাতায় ভাজ হয়ে রবে।
তবুও চিহ্ন রয়ে যাবে।
বৃষ্টি ফোঁটারা ঝড়ে গেলে, ঝড়ে গেলে পাতারা
ডুবে গেলে অতল জলে, তবুও কিছুই হবেনা শেষ
ঢেউ এসে সৈকতে পায়ের ছাপ মুছে দিলেও
সাগরের দীর্ঘশ্বাসে, ফেনায় ফেনায় ফিরে দেখা রয়ে যাবে।
তবুও চিহ্ন রয়ে যাবে;
চিহ্নরা জাগিয়ে দেবে নতুন ভোর।
আমার কি দোষ বল
দ্রোহের ক্ষত বেড়ে গেলে
নদীও নিজেই সাঁতরে উঠে যায় কূলে।
আমার কি দোষ বল
যদি শূন্যতার সীমানা পেরিয়ে যেতে
দিতে হয় অবিরাম সাঁতার!
অভিমানী মেঘেরা আবার নিরুদ্দেশে যাবে
শুকনো পাতারা ঝরে যাবে নতুন কুঁড়ির আশায়
অপেক্ষা বসে রবে বৃষ্টি দিনের।
তুমি একটুকরো সন্ধ্যা নিয়ে
জাগিয়ে দেবে কবিতার ঘুম;
আমি চেয়ে রবো সময়ের ইতিহাস।
আমার কি দোষ বল
শিশিরের ছোঁয়ায় যদি জেগে ওঠো
হেমন্তের তারাফুল।
তোমাকে দেখিনা বহুদিন
তোমাকে দেখিনা বহুদিন
অথচ তুমি আড়ালের বিন্যাসে চারপাশে সবসময়।
আকাশে তাকাই
অভিমানী মেঘ বিরহের বৃষ্টি হয়ে ভিজিয়ে দেয় স্মরণের সীমারেখা।
দেখা
হয়না ভোরে, সন্ধ্যায়, কুয়াশায়, প্রদীপের আলোতে।
সৈকতে
হাঁটি, দীর্ঘশ্বাস আছড়ে পড়ে পায়ে, মুছে দেয় পিছনের পদচিহ্ন।
চিহ্ন
একা, বইয়ের ভাজে চিঠির ভিতর ঘুম; নিঃসঙ্গ স্তব্ধতা গড়ে।
পাহাড়ে
এলেই মনোরম ঝর্না তড়িৎ-বন্যা হয়ে তাড়ায়, ভাসায় দিকে দিকে।
যেদিকে
তাকাই, প্রতিটা দিক চিহ্ন তুমি।
তুমি
চারপাশ হয়ে জড়িয়ে থাকো
অথচ তোমাকে কোথাও দেখিনা;
দেখিনা বহুদিন!
সাদাকালো ছাড়া আমার কিছুই নেই
অন্ধকার ঘরে মোমের আলো আঁকি
অথবা
জানালার ক্ষতগুলো অন্ধকারে ঢাকি।
অন্ধকার জ্বালিয়ে তোমাকে জ্যোৎস্না সাজাই
তুমি চাঁদ হয়ে তারা হয়ে জেগে থাকো আকাশে,
আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রাত্রি কাটাই।
সাদাকালো ছাড়া আমার কিছুই নেই।
আগামীর মুখ দেখি দিনের আলোয়
রঙিন মানুষেরা প্রত্যহ কত রঙধনু আঁকে
তোমার বৃষ্টিস্নাত মুখ মুগ্ধ তাকিয়ে থাকে।
রঙের হিসাব সাজিয়ে নিজের
রঙধনু আলো আঁকতে বসি যেই
দেখি,
সাদাকালো ছাড়া আমার কিছুই নেই।