প্রবীর রঞ্জন মণ্ডলের কবিতা

প্রবীর রঞ্জন মণ্ডলের কবিতা

নিরুপায় রাত

কোনো কোনো নিরুপায় রাত
জেগে থাকে উৎকণ্ঠায় একেবারে আমারই মতো;
দু’একটি তারা খসে চোখের পলকে
পোড়া ছাইভস্ম বুকে ধারণ করে
আর বেমালুম নক্ষত্রখচিত আকাশের দিকে
তাকিয়ে থাকে আমারই মতো বিস্ফারিত চোখে
গুননহীন বুনন তারার ঝলকানি
চোখের তারায় এসে কিলবিল করে।

তখনই মনে পড়ে বিদিশার চুলের বিনুনির কথা
ঝরা পাতার মত কালো এলো চুল
বিলকুল শ্রাবস্তীনগরের কারুকাজের মতোই
ফুটিয়ে তোলে রাতের গাঢ় আঁধার জুড়ে।
একটি দুটি রাতচরা পেঁচা গান গেয়ে ফেরে
এরচেয়েও ঢের বেশি মেঠো ইঁদুর
সারা মাঠ জুড়ে সোনালী ধানের ভিতর উশখুশ করে
নড়ে চড়ে নেমে আসে আঁধারেও আলো।

এর চেয়েও ভালো বোধহয়
ভোরের কুয়াশায় খাবি খাওয়া
এক একটা নতুন দিন আঁকা ভোর
সব দোর উন্মুক্ত হয়ে নেমে আসে আলো
তাই নিরুপায় জেগে থাকা রাত
আমার কাছে ঢের ঢের ভালো।

আঁধার মুছি

মিছে মিছে আকাশের কালো দেখে বড়ো ভয় জাগে
জলের প্রবাহীধারা বোধহয় নেমে এলো বলে
চল সব গুছিয়ে রাখি আঁটোসাঁটো করে।
আগের বন‍্যার জল সব গিলে ফেলেছিল একদিন
এখনো তার দগদগে ঘা শরীর জুড়ে
মাঠে,ময়দানে আনাচকানাচে আঁতুড়ঘরে
তার ছাপ পড়ে আছে অনিবার।

আলো আলো একচোখ সূর্যটার লোল ঝরে
সবদিক জুড়ে লোলুপ জিভে চাটবে বলে
কোনো কোনো দিন বিবেকশূন‍্য হয়ে ঘুরে বেড়ায়
পুব থেকে পশ্চিম আঁধার নামিয়ে
সবুজেরা খাদ্যহীন পোশাক ছেড়ে বেআব্রু থাকে
আর হাপিত‍্যেশ করে জানান দেয়
তাদের মরে বেঁচে থাকার দুঃখ কথা।

এসো,কালের আঁধার মুছে সাফ করি
একসাথে বেঁচে থাকবার শব্দ বুনে চলি
নতুন আলো পাবো বলে।

বুঝে নিতে হয়

বুঝে নিতে একটু সময় লাগবে বৈকি!
অনেকটা সময় পেরিয়ে এসেছি এখন
কালের চাকা গড়িয়ে গেছে অনেকদূর;
বিপন্ন মানুষেরা গলা তুলে কাঁদছে
চোখের তারায় খররোদের দুঃসহ মরীচিকা
পিচ প্রবাহ সড়কে জ্বলছে কালের আগুন।
আর কত জাগুন জাগুন বলে উৎসাহ জোগাবে?

পেটের নালীপথ পাক দেওয়া গামছায় বাঁধা
বিনা পয়সায় রেশনের খুদ,কুড়ো, আটা
আমাদের ফাটা ভাগ্যের কারিগররা
তালি মেরে মেরে এগিয়ে দিচ্ছে সংসার।
কেমন না চাইতেই পেয়ে যাওয়া খাদ্য
বেশ এক অলস আধা ঘুম কাতুরে মানুষের মতো
ঝিমটি কেটে কেটে চলে যাচ্ছে অনেকটা সময়।

এরপর চার হাতপায়ে মেরুদণ্ড সোজা রেখে
আবার হাঁটা যাবে কীনা সন্দেহ থাকলেও
নিশ্চিত করে বলা যায়,আমাদের যা কিছু পরিশ্রম,
যা কিছু অর্জিত অধিকার সব বন্ধক দিয়ে দিয়েছি;
এক শ্রেণির রাজনৈতিক ধান্দাবাজ মানুষের কাছে।
পিছে আমার বহুচর্চিত সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়
তাই ঝান্ডাটা ধরেছি সবার সন্মুখভাগে
অধিকাংশ মন পঙ্গু মানুষের আগে।

ম্লান শান্তির আলো

ভীরু একটা আলো
মাটির প্রদীপ সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছে
আমারই বুকের মধ‍্যে।

সাঁঝের প্রদীপ জ্বলা দেখে
অনেকেই মাথা নুইয়ে দিচ্ছে অকপটে
একেবারে আমারই দিকে।

মনের মধ্যে জেগে উঠছে দেব অনুকম্পা
আমি কী তবে দেবতা হয়েগেলাম!
মাটির পৃথিবীতে পড়ে আছি কেন এখনো?
তবে চলে যাই সমাধিস্থের দিকে এগিয়ে,
তোমরা আমার পিছনেই থাকো
ওই ম্লান শান্তির নিভু নিভু আলোর মাঝে।

আগের মতো

কী যেন একটা যন্ত্রণা
মনের অভিমানে হয়েছে জমা
ইপ্সিত ইচ্ছায় বেরিয়ে পড়ছেনা এখন!

এখুনি একটা দমকা হাওয়া
দুদ্দাড় বয়ে গিয়ে খুলে দিক মনের আগল।
সব ক্ষোভ দুঃখ ধুয়ে মুছে সাফ হোক
জেগে উঠুক ভালবাসার শতেক আলোক।

যন্ত্রণার এক একটা ক্ষত পূরণ করে
আমরা এক্ষুনি এই মুহূর্তে হয়ে যাই
একেবারে একদম আগের মতোই।