উপেক্ষিৎ শর্মার কবিতা

হেরে যেতে যেতে মাকে আমি
খুঁজছিলাম মায়ের হাঁটুমুড়ে বসে থাকার প্রতিশব্দ
খুঁজছিলাম মায়ের কুটনো কোটার অবিকল স্বরসন্ধি
দুপুরের ব্যঞ্জনে দেখেছিলাম অতিথির বহুব্রীহি আপ্যায়ন
হেরে যেতে যেতে মাকে আমি এভাবেই…
মাকে আমি চোখ বুঁজে ঘুমোতে দেখিনি আজীবন
মাকে আমি ভাত মুখে চিবোতে দেখিনি বিকেলের পিঁড়িতে
মা’র শাড়ি রঙ পাল্টাতে পাল্টাতে
তিল তিল করে ধবধবে সাদা হতে দেখেছি
হেরে যেতে যেতে মাকে আমি এভাবেই…
হেরে যেতে যেতে মা’র আঁচলের গন্ধে
ভাতঘুম শেষ
কুলুঙ্গির চৌকাঠে বিষধর ফণা
কবে থেকে বাসা বেঁধে ক্ষয়ে গেছে গোধূলির রঙ
কবে যেন ভোররাত ছাইচাপা আগুনে পুড়েছে
এই সেই অপেক্ষার মন্ত্রপূত বিকেল
ফর্মালিনে ঢেকে রাখা মায়ের চন্দ্রবিন্দু আদল
সেই বুকে মুখ গুঁজে দুফোঁটা চোখের জল
উদ্বায়ু গন্ধ হয়ে রয়ে গেছে বিকেলের মেঘে
হেরে যেতে যেতে মাকে আমি রোজ দেখি
দিগন্তের ঈশান আলোয়
ব্যথাতুর আকাশের সীমানার খাঁজে
একা
পারিজাত ফুলের জাফরিকাটা পরিখায়
তীরবিদ্ধ অরণ্যের রক্তাক্ত ছায়ায়
হেরে যেতে যেতে মাকে আমি
এভাবেই
হারিয়ে ফেলেছি
স্বাস্থ্যকর্মীর আবেদন
শেখার মত ছুরি কাঁচির ব্যবহার পড়ে রইল
আস্তাবলে। ডিসেকশন টেবিলে আধকাটা
লাশ। রক্তের ঘুলঘুলিতে হাত রাখলেই
চলকে ওঠে মরুভূমির অবিশ্বাস
ঘাম এবার জিওগ্রাফিক চ্যানেলের টিয়ারপি
জ্বর হলে দুষ্টু পাখিটা ঠোঁট নেড়ে
থার্মোমিটার খোঁজে। আর হাসতে হাসতে
আইসিইউ কেবিনে সুইসাইড নোট ফেলে ধাঁ
চুপ! থিয়েটারে অপারেশন চলছে।
পাঁচলাখি কিডনির সাথে টিস্যু ম্যাচিং বার্গেনিং
পাঁচ টাকার ঝালমুড়ির সাথে আপসহীন রক্ষাকবচ
বাজারে এখন এটাই ভাইরাল।
রেগে গিয়ে হাত পা নেড়ে বলতে যাচ্ছিলাম, স্টপ!
নিঃসঙ্গ শ্মশানযাত্রী স্বাস্থ্যকর্মীর আবেদন, কুল! কুল!
সমকামী দম্পতির নৈতিক পদাবলি
লেগে আছে অগোছালো কিছু কথার নমুনা, প্ল্যাটোনিক
প্রেমের ঘর্মাক্ত আদিরস আর নোটবন্দি মৃত্তিকার
অরগ্যানিক অনুশোচনা। এই ছিল গীতগোবিন্দের নবধারাপাত।
থিয়েটার হলের অন্ধ সিটে বসে বাদামের কথোপনিষদ
চৌখুপি ফ্রেমের পশ্চিম দিগন্তে সাতরঙা হত্যাকাণ্ড।
গ্রিনরুমে শেষ দৃশ্যে আবহমানের ওকালতনামা।
নায়িকার ভ্রূ-প্লাক করার অপেক্ষায় দ্বন্দ্বমূলক দর্শকের
চুল ছেঁড়া বস্তুবাদ। সবটাই অনিচ্ছাধীন প্রত্যঙ্গের ড্রপসিন।
নদী স্রোতে ক্ষুব্ধ প্যাপিরাসে ফুটে ওঠে নন্দনতত্ত্বের আত্মজীবনী।
যা এখন বিপণনযোগ্য সমকামী দম্পতির নৈতিক পদাবলী।