গৌরী মৈত্রের কবিতা
সন্ধ্যার নীলফ্রক ঘুরপাক খাচ্ছে
অনেকদিন ধরে একটা জোরিপ করার ফিতে খুঁজছি…
শৈশবে ঘুরে দাঁড়াবার অভ্যাস তেমন ছিল না ;
কয়েকটা মাটির খেলনা, বিড়ালের পায়ের পাতায় লেগে থাকা আলো
আর রাঙামাসিদের বাতাবী বাতাস, মেপে রাখা হয়নি তাই,
তার অনেক কিছু পণ্যের জাহাজে চলে গিয়ে হাতছাড়া আজ,
কেবল সন্ধ্যার নীল ফ্রক ঘুরপাক খাচ্ছে…
জোরিপ করা হয়নি সেইসব ছড়িয়ে থাকা রোদের পাপড়িগুলো, আর
ঝোলা থেকে বেরিয়ে আসে বিমলার রিকেট আক্রান্ত শিশুটি ;
নীলঘূর্ণি চোখ মুখ নাক বন্ধ রেখে পরিক্রমণ সারে ;
চমকে দেখিয়ে আবার ফুড়ুত হওয়ার খেলায়
বাজীকর অবসর দেয়নি কিছুই ভাববার, মাপবার
শতদ্রু, নয়না দেবী, রঙিণ মাছের মত কিছু স্বপ্ন,
ঘুমের মধ্যে ঝরে যাওয়া স্বপ্ন, ঘুরপথ কত ঘুরপথ—
সবকিছুই স্থির এখন—এই অক্টোবরের এলোমেলো বাতাস
গ্রিলের ফাঁকে পড়ে থাকা আলো আর সেই কাঠের ব্রিজ এর মতো
মসৃণ এক বেদনা, সবকিছু জোরিপ করার প্রয়োজন ;
কিন্তু তার আগে একটা জোরিপ করার ফিতে চাই।
হে জন্মান্তর দাও
আরেকটু দাও, দাও না আমাকে
আরেকটু সময় !
ছুটে যাব… তারপর ফিরবো ঠিকই
আঙুলে জড়ানো তার দুরন্ত মাকড়সার
কঠিন বুনুনি শেষ হবার আগেই,
সে খেলছে—মেতে রয়েছে সেই সব
চতুর—চতুর সব দানে।
আমাকে দাও একটু সময় !
আমি যাবো, পাল্টে নেবো
নখের আঁচড় বসানো এই পোষাক,
ভাঁজ করে রাখা সূর্যঝালর জন্ম ভোরের
নিয়ে আসবো বৃষ্টি ভেজা রৌদ্রের এক শরীর…
এখনো তার হাতে উন্মুখ মনের ঘুঁটি
এধার ওধার পড়ে, ছিটকে গড়িয়ে ;
এই ফাঁকে আমাকে দাও, দাও আমাকে
হে জন্মান্তর, একটু সময় —
রক্তের ভেতর ভাসমান কৃষ্ণচূড়া
এই বিকেলটাকে যেভাবে দুমড়ে-মুচড়ে
রেখে দেওয়া হ’লো লেভেল ক্রসিং-এর হলুদ রঙের মধ্যে,
সেই ভাবে দৃশ্যের ভেতর কোলাজ হয়ে গেছে ভুরিভুরি ক্ষোভ আমাদের—
তবু স্বপ্নের বুকেই এক রোপওয়ে বসানো
অন্য শহরে যাওয়া আসা,
ঘুরে আসা যায় রংভর্তি আকাশের হলঘরে
দারুণ একটা শো দেখে—
তাই তো পারিনা অন্ধকারের জেগে থাকা এড়াতে,
কফি হাতে একা একা ডায়েরির মধ্যে শুয়ে থাকা;
পারি না এড়াতে বন্য ইঁদুরের তাড়া খাওয়া পাইন-রোদ্দুরে
কাঁথা সেলাই সেই বয়স্কা নদীকে;
যে তার সুতোর মধ্যে তিনটি রোদ্দুর জুড়ে নিয়ে
তিনটি স্বপ্নের নাম দিয়েছিল কৃষ্ণচূড়া,
যা আজোও রক্তের ভেতর ভাসমান থাকে, কৃষ্ণচূড়ার তিনটি বীজে।