দিলারা হাফিজের কবিতা

দিলারা হাফিজের কবিতা

অশ্রুসজল শোক-তাপ

এই তো সেদিন আমি ছিবুড়িয়া খেলা শেষ করে
নিজের ভেতরে মাত্র ফিরেছি ঘামের গন্ধ নিয়ে
একটু একটু করে চিনতে চাইছি প্রপঞ্চকে
এরমধ্যে ভেঙে সব খান খান;
আমাকে তো কেউ আর বুঝতে দিলো না,
কখন আমার চুলে সাদা লেগেছে,কিংবা লাগেনি,
এইটুকু চিরচিরে রোদে পলাশ পতন সময়ের
ঘণ্টা বেজে যায় যদি, কী করতে পারি আমি আর?
অচিরেই যদি অনামিকা থেকে খসে পড়ে অঙ্গুরীয়,
নাকফুল গড়ায় মাটিতে—-
তখনো কবিতা কাঁদে একাকী দাঁড়িয়ে দূরে দূরে
গদ্যেরাও ফেরি করে দিন-পঞ্জিকার শেষ গল্প
নিউরণে নিউরণে কত যে গোপন নিষিক্ত হতে বাকী,
কেবা জানে তার সবটুকু
এখনো কত কথা বলার ছিলো…
বিনিময়ে শোক-তাপে সজল চোখের তৃষ্ণাটুকু
কেড়ে নিতে চাও তবে?
তুমি নেই বলে কবিতার সঙ্গে আড়াআড়ি মিটে গেছে,
নিঃসঙ্গের ধুলোবালি মিলে ঢের জমেছে মিতালি
এতকাল কবিতা ও তুমি,ছিলে সমান দু’জনে

কবিতাই আজ প্রণয়ের শেষ-বেঞ্চে তুমি হয়ে বসে আছে।

জন্ম আমার ফিরিয়ে নে মা

জন্ম আমার ফিরিয়ে নে মা,আর জন্মে ছেলে আনিস
আমি যে তোর স্বপ্নভঙ্গের,বিবর্ণ এক শিক্ষা-নবিশ

এই বেদনায়, রাত্রি-দিন খুবলে খায় শৃগাল-কুকুর,
দেখ তো দেখি,হায়েনা এসে বাসা বাঁধে চোখের উপর
বনের যত পাখ-পাখালি ধুয়ো তোলে সকাল-বিকাল
আমি নাকি নষ্ট মেয়ে,তোর গর্ভের দুষ্টু ভ্রুণ,ভীষণ বিফল
কি ভেবে যে তরুণ জলে রেখেছিলি তুমুল নুন?
খোলা রেখে অস্ত্র-শস্ত্র কেউ ফেলে দেয় আপন তূণ?
জন্ম যদি কৃষককূলে হাল চাষাতেই সময় যেতো
বিদ্যা শিক্ষা,জ্ঞান-গরিমা চষা ক্ষেতেই আবাদ হতো
কি যে তোর এই মতিভ্রম,আলোর সলতে উসকে দিয়ে
জ্ঞানের সঙ্গে দিলি কেন তোর মেয়ের বিয়ে,
কি আনন্দ পেলি রে মা—— ?
মেয়ে যে তোর উড়ণচণ্ডী,ভাত রাধে না সময় মতো,
‘পুরুষ’বলে প্রভুর মতো মান্য গণ্যি নেই যে অতো
শব্দ চুরির নেশা দারুণ,কাব্য-জ্ঞানে ধর্ম
পালক ছাড়া পাখির মতো সকরুণ এই শিল্প যে তার বর্ম,
শব্দ দিয়ে তাসের মতো, তাস পেটায় খুব যতনে
দানের ঘোড়া উল্টে যায় রুহিতন কি হরতনে,
ইশকাপনের তাসের তুরূপ উল্টে দিয়ে মনে মনে
নেশায় ঘোরে উলের কাটায় কবিতা বোনে,কবিতা শোনে।

জন্ম আমার ফিরিয়ে নে মা,আর জন্মে ছেলে আনিস
আমি যে তোর স্বপ্ন ভঙ্গের ,বিবর্ণ এক শিক্ষা নবিশ,
এবার আমায় ছেড়ে দে মা॥