অণুগল্প : পালংপুরের মেয়ে রোকেয়া

পালংপুরের মেয়ে রোকেয়া
এ কে এম আব্দুল্লাহ
অন্ধকার গভীর হলে,মেয়েটি আত্মহত্যা করল। আর তার পেটের ভেতর ভেঙে মুখ দিয়ে নেমে এলো জিহবা। মার্বেলের মত চোখের মণিগুলো চেয়ে আছে ; ঘিরে রাখা উৎসুক মানুষের প্রতি। যে মানুষেরা অনেকই ইতোমধ্যে ফেইসবুকে লাইভে আছেন। কেউ কেউ সেলফি তুলে পোষ্ট দিচ্ছেন। আত্মহত্যার পূর্বে কন্যাশিশুর মুখ থেকে স্তনের বোটা আলগা করে,যে শেষ চুম্বন দিয়েছিল সন্তানের কপালে ; সেই চুম্বনের গন্ধ এখনও লেগে আছে পালংপুরের মেয়ে রোকেয়ার ঠোঁটে। ভিড় ঠেলতে ঠেলতে রোকেয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে পাশের বাড়ির কাজের মেয়েটি বলল, ‘ যাক মরে গিয়ে তুই বেঁচেই গেলি’ বলে ওড়না দিয়ে চোখ মুছল। অদুরে পুলিশের গাড়ির সাইরেন শোনা গেলো। কেউ কেউ খুঁজতে গেলো বাঁশের চাটাই ।এখন পোষ্টমর্টেমের নামে কাটাচেরা হবে। হউক। তাতে আমাদের কী ?
আমাদের পুকুরপাড়ের দক্ষিণ কোনে,বাড়ির বয়সি যে গাবগাছ, সেই গাছে আমাদের পূর্বপুরুষের আত্মার বাস। এমনটা জন্মের পর থেকেই শুনছি। আত্মারা রাতে বহিরাগত জ্বীন ভূত থেকে আমাদের পাহারা দেয়। তারপরও,তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রায়শ: জ্বীনআত্মা ভর করে আমাদের পীর-বাবাজ্বির দেহে, তিনি ধ্যানমগ্ন হন। গ্রামের মহিলারা ভিড় ধরেন ফানা-ফিল্লাহ পীর-বাবাজ্বির খাওয়া পানি, চা কিংবা খাবার খাওয়ার জন্য। এতে মনোবাসনা পূর্ণ হয়।ফেয়ার এন্ড লাভলী ক্রিম মাখা গাল পীর-বাবার স্পর্শে কবুতরের পালকের মত নরম হয়ে ওঠে। আর পীর-বাবাজ্বি কবুতর গুলো বুকে জড়িয়ে নেন। শরীরে লেগে থাকে শুধু পবিত্রতার গুদা।
এভাবে পুত্রপাবার নেশায় পালংপুরের মেয়ে চারকন্যার মা রোকেয়া তারও সরলতার ঘাড় ভেঙে সেজদা দিয়েছিল পীর-বাবার পায়।
আজ রোকেয়ার ঝুলন্তদেহের দিকে তাকিয়ে বড় মায়া হচ্ছে। সে রাতে পূত্র-সুখে,মেয়েটির স্বামী- তাকে কবুতরের মত বুকে জড়িয়েছিল কি-না জানা হল না।