সোমনাথ রায়ের কবিতা

সোমনাথ রায়ের কবিতা

ভ্রমরজন্ম

তুমি স্বপ্নে ছিলে বলে কাল আমি দুঃস্বপ্ন দেখিনি
নদীতে সাঁতার কাটতে কাটতে আমি ডিঙিয়ে গিয়েছি
শ্মশানের চিতাকাঠ, ঢেউগুলো হল্কা থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
যখন অনেক দূরে স্পর্শহীন বয়ে যায় জল
দহন জ্বালার মুখে দ্বার খুলে রাখে দাহপথ
কিছুটা এগিয়ে ফিরে এসে বৃষ্টি খুঁজেছি আকাশে।
আমার ঝলসানো মুখ দেখে আঁতকে উঠেছে দর্পণ
আমি তবু বদ্ধ জলাশয় দেখে কাতর হয়েছি।
শঙ্খ নয়, দীর্ঘশ্বাস ছুঁড়ে ছুঁড়ে ভেঙেছি বরফ
তুমি ধারাপথে এসে কোলে তুলে নিয়েছ আমাকে
স্নিগ্ধ প্রলেপের স্পর্শে আমি যত জুড়িয়েছি জ্বালা
ততই বিস্ময়ে মুগ্ধ হয়েছে তোমার অশ্রুভূমি।
দুঃস্বপ্নের দাহ থেকে আমাকে ভাসানে রাখো তুমি
তোমার প্রতিটি বাঁকে আমার ভ্রমর জন্ম হোক।

দায়

শরীরে তুষের তৃষ্ণা হোমাগ্নি চেয়েছে।
যা প্রাকৃত। যার হিত উৎসবে প্রশ্রয় পেয়েছে
ফসলের মাঠ আর আগাছার ক্ষেত নির্বিচারে।
সমুদ্রের তীরে এবং পাহাড়ের আড়ালে আলোবাতাস সমপরিমাণ
উন্মোচিত নয় এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা তার অনুযায়ী।
সংরক্ষণের অনভিজ্ঞতায় প্রসবও ব্যাধির রূপ নেয়
পতঙ্গের অগ্নি আকর্ষণে মেতে ওঠে অন্ধের হৃদয় পরিক্রমা
বধ আর আত্মহননের তীব্রতায়
পবিত্র জরায়ুকেই দায়ী হতে হয়।

জড়ভরতের দ্যাখা

আমার হাত পা বাঁধা, কানে তুলো, চোখে পর্দা, মুখে সেলোটেপ
গায়ে গণ্ডারের চামড়া, নাকদুটো সার্কাসের বিশ্বস্ত জোকার
যার শুধু বেঁচে থাকাটাই আছে সংসদের তাঁবুর ভেতর
অনন্ত কমিশনের কাছে যে কেবল ফাঁপা আর ফাটা বাঁশ
মাঝে মাঝে ফোঁস করে যা শুধু নির্বিষ নয় হাসির খোরাক
একটা জ্যান্ত কিংবা মৃত মানুষ ভ্যানিস হয়ে গেল কার স্বার্থে
ফিরে এলে, কে তাঁকে বুলেট উপহার দিতে চেয়েছিল—ক্যানো
কোন সন্ধি কল্পবিমানের ছাই রেনকোজি মন্দিরে রেখেছে
প্রশ্ন মানে কমিশন—কিছুটা আতঙ্ক—কিছু কেনাবেচা—ঘুম
গণতন্ত্রে সারমেয় হয়ে লেজ নাড়া আর লুকানো ব্যতীত
মতাদর্শে প্রতিষ্ঠিত পরম্পরা কিংবা উত্তরাধিকার নেই
আছে আমার ও আমাদের মতো একটা জড়ভরতের জাতি
পরাধীনতাকে জন্মাবধি স্বাধীনতা বলে যারা চুষে যায়
আর দ্যাখে ভারতে সুভাষ বসু শুধু এক বানিজ্য সম্পদ।