লুৎফুন নাহারের কবিতা

লুৎফুন নাহারের কবিতা

কৃতজ্ঞতা হে পৃথিবী

অপরাহ্নের নির্জনতা ভেদ করে
চলে গেছে থপ-থপ পদশব্দ কাছ থেকে দূরে…
জমাট তুষারে রেখে গেছে
চাপ চাপ পায়ের ছাপ, বুঁনোহাসের দল
আর্টিফিসিয়াল ওয়াটারফল’র ছন্দময়তায় বুজে আসলে চোখ
বলে উঠি, এক পৃথিবী ভালবাসা নিয়ে কেউ অপেক্ষায় না থাকুক
তবুও তো পৃথিবী আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে ভালবাসা দিয়ে
আলো-ছায়ায় ঘিরে, আমাকে তার যোগ্য ভেবে।

কৃতজ্ঞতা হে পৃথিবী!
সালাম, আদাব, নমস্কার গ্রেটিংস জানালাম সবই
আমি হাসির রুমালে কান্না মুছে, জীবন সাজাতে জানি।

অতএব,
আর ডিস্ট্রিবিউট না হোক ব্যক্তিগত ভালবাসার লিফলেট
আজই নামিয়ে ফেলা হোক ‘নীড লাভ’ জাতীয় টু-লেট।
মন্দ মনের সংস্পর্শের চেয়ে, শূন্যই থাক মন;
মেপে মেপে আকাশের শূন্যতা
সন্ধ্যাতারায় হারিয়ে যাওয়া ক্ষণ।

যদি বাসতেই হয় কিছু ভালো-
ভালবেসে হয়ে যেতে পারি, কোন অন্ধ-চোখের আলো;
বয়ে যেতে পারি অক্সিজেন হয়ে
মুমূর্ষ রোগীর রক্ত কনিকায়, শিরায় শিরায় বেয়ে।
তাদের মুখে ফুটিয়ে তুলতে পারি হাসি
শোকের মিছিল কেড়ে নিয়েছে যাদের সুখ-পাখি;
অসুখে, অশ্রুতে জীবনে যাদের বইছে বরষা
হতেই তো পারি তাদের বেঁচে থাকার ক্ষীণ ভরসা।

অত্মহত্যা নয় কোন সমাধান, মৃত্যু এক পরিসমাপ্তির নাম।

সমাপ্তির আগে পরিশুদ্ধিত হোক জীবন আরেকবার…
জীবনের সব জঞ্জাল উড়ে যাক ঝড়ে
ঝরে যাক টুপ-টাপ দুঃখ ভেজা চুলের ডগা বেয়ে।
চিতায় যাক, চিন্তায় বোঝাই ঝাপি
কবর হোক সেইসব খবরের,
যা কিছু মারা গেছে মনের মুকুরে আজি।

মানুষ চলে গেলে কাঁদি খুব

চলে যাবার অনেক রকম থাকে।
যেমন- হৃদয় ছেড়ে চলে যাওয়া, স্থান ছেড়ে চলে যাওয়া
কাছ থেকে দূরে, যাত্রায় যাত্রায় দূর থেকে আরো দূরে
এবং শেষযাত্রায়, পৃথিবী ছেড়েই চলে যাওয়া একেবারে!

মানুষ চলে গেলে আমি কাঁদি খুব!
আমার চেয়েও ঢের কেঁদে বেড়ায় আমার মন,
চলে যাওয়া মানুষের মাটি আঁকড়ে সারাক্ষণ।

আমি তখন একটা জেগে থাকা মাঠ হয়ে
শস্য ফলাই, হলুদ রেণু’র ঘ্রাণ মেখে উড়ে যায় প্রজাপতি
দূরের সাদা সারসের দিক নির্ণয়ে ঘোরে রুপোলি মাছের গতিবিধি
সরিষায় সরিষায় লেগে যায় পরাগায়নের ধুম
উবে গিয়ে কোন এক উর্বশীর শীত সকালের ঘুম
নদী খুঁজে যায় নিয়তির মরুভূমির খাঁজে খাঁজে রোজ।

মানুষ কতটা তৃষ্ণার্ত হলে, চলে যায় নিরবে
সব ব্যথা গোপন করে
হৃদয়ভূমি হতে উপরে ফেলে শেকড়; যেনো অসময়ের অভিমানী প্রস্থান
নয়ত মরে গিয়ে, মনে গড়ে যায় গোপন গোরস্থান!

গোরাজাবের মত করে, স্মৃতির ভস্ম ফোঁড়ে
কেউ কেউ জেগে ওঠে বিষফোঁড়া হয়ে!
বিষে-বিষে বিষিয়ে তোলে অন্তর, পচা পুঁজের ভারে
পথ চলা হয়ে ওঠে বিভীষিকাময়!
অথচ, মানুষ উড়তে চায় জলফড়িংয়ের ডানায়!

বিধির বিধানে,
সব মানুষই একদিন সুপ্ত ডানা রেখে গুপ্ত পথে
গুম হয়ে যায়
অথবা, চিরদিনের মত ঘুম হয়ে যায়
সব রকম ঘুমহারা রাতে শ্বেত শীতল
শেকলে বাঁধা প্রাতে; প্রায়শ্চিত্তে প্রায়শই…
মানুষ চলে গেলে আমি নিভৃতে কাঁদি খুব!