কাঞ্চন রায়ের কবিতা

কাঞ্চন রায়ের কবিতা

দাম্পত্যে প্রেম, সেও আবার হয় না কি?

সত্যি বলতে, তোমায় কখনো ভালোবাসিনি…
তোমায় কখনো প্রেমিকা বলেও মনে হয়নি।
আসলে ‘দাম্পত্যে প্রেম’, তাও আবার হয় না কি?
যারা পারেন, তারা মহর্ষি…

ঘুম থেকে উঠে তোমার ওই অযথা সব খুঁত ধরা,
একটু বিশ্রাম নিতে দেখলেই,
যেকোনো ছুঁতোয় কাজ ধরিয়ে দেওয়া,
বাজার থেকে ফিরলেই, “লাউটা কেন খারাপ?
মাছটা আজ বড্ড নরম”;
খুব রাগ হয় জানো?
এইসব তুচ্ছ বিষয় আমার চিন্তার জগৎ
খুব ছোট করে তোলে।

আড়াল থেকে তোমায় দেখেছি অনেক;
চেষ্টা করেছি তোমায় নিয়ে একটা-
মেঘ পরীর কবিতা লিখবো ।
যা সব আমার,
আমার বুক পকেটের সহজলভ্য;
কল্পনার জগতে বানাবো দুষ্প্রাপ্য !
একটু আড়ম্বর করে তোমায় বানাবো গল্পের রাজকন্যা !
তুমি তো সুন্দরী এমনিই…
মাঝে দু’চার কথা এসেও ছিল একদিন ।
ঠিক তখনই তুমি হাঁক পাড়লে-
“কিগো মেয়ের যে ব্যাগটা এনেছো,
তার তো ফিতে ছোট।
তুমি কি কেনাকাটা শিখবে না কখনো ?”
“ধুস, তুমি প্রেমিকা হওয়ার বস্তুই নও” ;
একদমই নও… তুমি গিন্নি হয়েই থাকো।

মনে আছে? যখন তুমি প্রথমবার আমায় নমস্কার করেছিলে, পা ছুঁয়ে
প্রথম বার আমার এঁটো থালায় ভাত খেয়েছিলে
আমার ফেরার জন্য বসে থেকেছিলে সারাটা দুপুর
আমি বারবার বারণ করেছি এসব;
তুমি শোনোনি।
কী আশ্চর্য, সেই তুমি আবার একটু পরেই
করলে হাজার বকাবকি…

মনে পড়ে, তোমার হাত ধরে পাহাড়ে প্রথমবার…
সেই প্রথম হাতে হাত রেখে হাঁটা।
না, না ওইটুকু কে কি আর প্রেম বলে?
ছেলে মেয়ের সংসার
সোহাগ আদর কিছুই নেই
পার্ক, সিনেমা তাওতো লন্ডভন্ড সবাই মিলে।
তবু আজ এত বছর পরেও
যখন তুমি নতুন পাড় ভাঙ্গা শাড়ি পরো,
একটুখানি আয়নায় সাজো,
রাতে শোয়ার আগে কালান্তরে যদি কথা হয়,
বাজার ঘাট, ছেলে-মেয়ের পড়া সরিয়ে রেখে;
হঠাৎ করে যখন বাজারের ফর্দে খুঁজে পাই-
তোমার কম দামি লিপস্টিক, মাথার ক্লিপের দাবি,
মনে পড়ে যায় বিশ বছর আগের
চন্দন, সিঁদুর মাখা মুখ খানি;
না, না শুধু ওইটুকুই
দাম্পত্যে প্রেম, সেও আবার হয় না কি ?

এক পরত মিথ্যে আস্তরনের নিচে…

ভালোবাসার রঙে,
কিছুটা মিথ্যের আবির লুকিয়ে থাকে;
না হলে স্বর্গ নামক দেশটা
বিক্রি হয়ে যেত কবে…
ভালোলাগার চাওয়া পাওয়া গুলো
শুরু হয়, এক পরত মিথ্যে আস্তরণর নিচে ।
ভালোবাসার ইস্তেহারে ফাঁকফোকর
জমে থাকে অক্ষরে অক্ষরে
কিছুটা বাক‍্যালাপ, কিছুটা স্পর্শে অনুভবে
অবচেতন ছিটমহল, ছিটেফোঁটা হলেও-
পরিযায়ী পাখিরাও ঘর বাঁধে।

কবিতারা ক-খ বলে

কবিতারা অ-আ-ক-খ বলে
আর আমার পেনের ডগায় নেমে আসে
চাক বাঁধা প্লাজমা-অনুভূতি ।
যারা দেখা যায়,ইট-কাঠ-পাথরের ঘরবাড়ি,
গাছপালা পার করে উঁচু উঁচু পাহাড়ের সারি,
তার মাঝে ছালা পেতে বসে থাকে মন;
আনন্দ অভিমান রোদ-ঝড় আমরণ ।
ঠিক সেখানেই বসে থাকি,
মনের কুয়াশা ঘণ হলে শিশির—
হাত বুলালে শব্দ জমে
ভবনারা পটভূমি গড়ে,
আমি ওৎ পেতে বসে থাকি
কবিতারা ক-খ বলে
আর আমার পেনের ডগায় নেমে আসে
চাক বাঁধা প্লাজমা-অনুভূতি।