গোলাম রসুলের কবিতা

প্রদর্শনের জন্য
পাথরের ওপর লেখা দিন সপ্তাহ বছর
উপত্যকা দিয়ে নেমে যাচ্ছে আমাদের আশা
জল আর পাথর এত শান্ত শোনা যাচ্ছে না পৃথিবীর চলার শব্দ
যখন মানুষ চিন্তা করে একটি শিল্পের কথা
সূর্যের থেকেও মারাত্মক
কেউ দেখছে শূন্য।
যেখানে একটি হৃদয় রাখা আছে অনন্তকাল প্রদর্শনের জন্য।
বালকের বইয়ের কয়েক পৃষ্ঠা
বালকের বইয়ের কয়েক পৃষ্ঠা
উষ্ণ লবনের মতো বছর
শহরের ওপর দিয়ে হাওয়া টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে একটি গাছের ঈগল
ঈশ্বরের মোমবাতির নিচে নিভে গেছে
একটি দিন
স্মৃতির মতো ধনী বাড়ি
চাঁদের ভূতের আলো
রাত্রির সবুজ
জাঁকজমকপূর্ণ দুঃখের সমারোহের মধ্যে দিয়ে আমাদের নিয়ে চলেছে
অনেক নক্ষত্রদের পায়ে চলা পথ
মাটির গর্ভস্থ সময়
সহস্র দেহের একটি খাঁড়া মানুষ
শিকারী পাখির থেকে তীক্ষ্ণ দেখছে
আমারা শুনতে পাচ্ছি তার প্রস্তর যুগের কন্ঠস্বর
হৃদয়ের দৈর্ঘ প্রস্থ নেই
কে জন্মগ্রহণ করছে
সমবেত আমাদের গর্ভে
আমরা ফেলে এসেছি রাস্তায় ঘুমিয়ে পড়া জনতা
কৃষকের কাক ডাকছে আগামী ভোরের মাঠে
হায় স্পর্ধিত শহর
মৃত মুখ দিয়ে এখনো কিছু কথা বলিয়ে নিচ্ছ
আর রাজত্বের বালিশে শুয়ে কবর
কি সুন্দর পালকের স্পর্ধা উড়ছে আকাশে
বহু বছর পরে
বালকের বইয়ের কয়েক পৃষ্ঠা
উষ্ণ লবনের মতো বছর।
হাওয়া নক্সা তুলছে একটি শিল্পের
নৈঃশব্দ্যের প্রহরীর মতো আমি ঘুমিয়ে আছি
আমার ঘুমের ভেতরে জেগে আছে উদ্ভিদ
ঝড় চলে গেছে আমি তার ভিতের ওপর শুয়ে আছি
খোলা জায়গায়
চাঁদের আলোয় বালির ঢল
আমি তলিয়ে যাচ্ছি
জমির আলের স্বাধীনতার মতো পৃথিবী
এক জায়গায় মর্মর মূর্তি শোক পালন করছে
স্মারকের মতো তোমাকে কবর থেকে তুলে নিয়ে কথা বলছিলাম
আর স্মার্টফোনে লিখছিলাম একটি আখ্যান
চোখের জলে সমুদ্রের স্বাদ
শিকল খুলে পালিয়ে যাওয়া আকাশ
রাত্রির প্রতীক ভুত
আমরা একটি বনের ভেতরে
মানুষের ধর্ম নিয়ে যত যুদ্ধ হয়েছে সে সব এখন সারিবদ্ধ গাছ
আর গাছের ওপর হাওয়া নক্সা তুলছে একটি শিল্পের।
অনির্দিষ্টকাল ঋতু আর স্মৃতি
আমার নিজস্ব একটি সূর্য জ্বলছে আকাশে
আমার অশ্রুর জল বাহক
শুকনো মরুভূমি পেরিয়ে নৃশংস ধাতুর ঈগল
ধাবমান কালো জাহাজ
মিছিলে ঘুমিয়ে পড়েছে জনতা এমন এক আন্দোলনের ধার দিয়ে ধীরে এগিয়ে চলেছে
দুটো কালো রং লাল হয়ে পাথরের মতো তাকিয়ে
আর রাশি রাশি শুকনো পাতা যেভাবে মৃতরা ফিরে ফিরে আসে আমাদের স্মৃতিতে
এত ফাঁপা যে আমাদের একাকিত্ব নেই
নৈঃশব্দ্য ও নেই
আমাকে ছেড়ে গিয়ে ঝিঁঝিঁর মতো উড়ছে পৃথিবী
দুঃখে আমরা অবসর কাটাই
আর কিভাবে বানিয়েছি এই জীবন সমূহ
ঝড়ের মুখ থেকে লবণের গন্ধ
আর কাতারে কাতারে লোক এদিকে আসছে
শান্ত অট্টালিকা
মরচে ধরা লোহার পাত
প্রাচীনকাল ধরে যখন আমি জাঙালের ওপর দিয়ে যাচ্ছিলাম
কুয়াশার মুসুরি খেত
অনির্দিষ্ট ঋতু আর স্মৃতি
আমার একটি নিজস্ব সূর্য আছে।
একটি গ্রন্থের প্রথম পৃষ্ঠা
ফাঁকা মাঠ
চাকা ঘুরতে ঘুরতে অদৃশ্য হয়ে গেল
আর আমি সেই ঘূর্ণায়মান জাঙালের ওপর দাঁড়িয়ে
পৃথিবীর দুঃখের মতো আরো কয়েকটি নক্ষত্র দেখলাম
স্ফটিকের ন্যায় উজ্জ্বল
পাথর আর জলের তৈরি
একটা একটা করে গুণে নেওয়া যায় ব্যথা
লবণের সড়ক
ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসছে যে যুবক তার হৃদয়
বিস্তৃত কবর খানার নিচে প্রস্তর যুগের উদ্ভিদ
চৌচির পাহাড়
আকাশ
একটি গ্রন্থের প্রথম পৃষ্ঠা
জনতা থেকে জনতা ছুটে চলেছে শহর
কালো ছায়ার জাহাজ
ফাঁকা মাঠে আমি মেঘ
আর কিছু জানি না।