অলোক আচার্যের অণুগল্প

অলোক আচার্যের অণুগল্প

সাপ

আমি এইমাত্র ভয়ংকর একটা কাজ করেছি। ভয়ংকর না বলে নৃশংস বলাই ভালো। পৃথিবীর ভয়ংকর আর নৃশংস খুনীরা যা করে তাই করেছি। একটা লম্বা লাঠি দিয়ে মাথাটা থেঁতলে দিয়েছি। যতড়্গণ ওটার দেহে প্রাণ ছিল ততড়্গণ মাথা আঘাত করে গেছি। শেষদিকে আমার দিকে মাথা তুলে দেখতে চাইছিল। মনে হয় ওর খুনীর চেহারাটা দেখতে চাইছিল শেষ বারের মতো। ফাঁসীর আসামীকেও তার শেষ ইচ্ছার কথা জানতে চাওয়া হয়। আমি জানি না আমার সেই সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল কি না। সকালে ঘর ঝাড় দেওয়ার সময় আমি সাপটাকে আবিষ্কার করি টিভি ট্রলির পেছনে। সেখানে গোল হয়ে মাথা তুলে ছিল। আমি কোনো ঝুঁকি নিতে চাইনি। কারণ আমার মেয়ে তখন বিছানায় ঘুমুচ্ছিল। লাঠিটা তুলে নিলাম আর সোজা মাথায় আঘাত করলাম। যখন ওটার মৃত্যু নিশ্চিত হলাম তখন শান্ত হয়ে বিছানায় বসলাম। আমার মেয়ের পাশে। কিছুটা খারাপ লাগছিল। সাপ হলেও তো পৃথিবীতে আসা একটা প্রাণ ছিল।

বড়সাহেব

রমাকান্তবাবু অনেক বসে আছেন বড়সাহেবের রুমের সামনে। হাতের বগলে একটা ফাইল। বড়সাহেবের সই লাগবে। প্রায় দু’ঘন্টা হয়ে গেলো তিনি বসে আছেন। বড়সাহেবের পিয়ন তাকে যেতে দিচ্ছে না। স্যার ভিষণ ব্যস্ত বলে বসিয়ে রেখেছেন। রমাকান্তবাবু একবার বলেছেন, তোমাদের স্যার আমার ছাত্র। আমাকে ঢুকতে দিন। বড়সাহেবের পিয়নটা কটমট করে তার দিকে দেখেছে। আসলে রমাকান্তবাবুর এমন গ্রাম্য সাধারণ পোশাকে তার কথায় ঠিক ভরসা পাচ্ছে না অথবা তার কথা ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না। তাছাড়া স্যারের মেজাজ আজ সকাল থেকেই খুব খারাপ। একরকম অকারণেই সে সকাল থেকে তিনবার ধমক খেয়েছে। এখন যদি তাকে রুমে ঢুকতে দেওয়ার কারণে ধমক খেতে হয়? কে জানে হয়তো তার চাকরি নিয়েই টানাহেঁচড়া বেধে যাবে! বড়সাহেবের মর্জি বলে কথা! এরও প্রায় ঘন্টাখানেক পর রমাকান্তবাবুকে দেখে হয়তো পিয়নটার একটু মায়া হলো। সে ভেতর থেকে স্যারের অনুমতি নিয়ে এলো। রমাকান্তবাবু হাতের ফাইলটা বগলে নিয়ে ভেতরে ঢকুলো। পেছনে পেছনে পিয়নটাও এলো। রমাকান্তবাবুকে দেখেই বড়সাহেব চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো। তারপর কাছে এসে পা ছুঁয়ে সালাম করে বললো, স্যার,কেমন আছেন? পেছেনে একটু অবাক হয়ে দাড়িয়ে আছে পিয়নটা।

দশ বছর পর

আমি বরাবরই ট্রেনের জানালার পাশে বসতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। তাছাড়া বমি বমি ভাব হয়। অন্য কোথাও বসলে দম বন্ধ লাগে। সন্ধ্যায় রাজশাহী রেল ষ্টেশন থেকে টিকিট কিনে সিটে আসতেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। সিটটা জানালার পাশে না। তার এক সিট পরে। আমি বসে অপেক্ষা করছি আমার সহযাত্রীর জন্য। অবশেষে তিনি এলেন। চোখে কালো গ্লাস। এক্সকিউজ মি, বলেই আমার পাশে এসে বসলো। সেই চেনা ঘ্রাণ। চোখে চশমা থাকলেও চিনতে অসুবিধা হচ্ছিল না। দশ বছর কি খুব বেশি সময়? আজ বহুদিন পরে জানালার পাশে না বসেও আমার খারাপ লাগলো না।