গল্প: ও চাঁদ

গল্প: ও চাঁদ

ও চাঁদ

অরূপ পালিত

চাঁদ আমি সেই মুহূর্তের স্মৃতি গুলো ভুলতে চেয়ে ছিলাম কবেই, কিন্তু দেখ পারলাম কি ?
আজ ও এসে ছিলাম তোমার প্রিয় জায়গায় অভয়মিত্র ঘাটে তোমাকে খুঁজতে।
আমাদের পরিচয়টা ছিল মোবাইল ফোনের এস এমএস এর মাধ্যমে , অনেক দিনের আলাপে মুখোমুখি হতে ইচ্ছে হলো তোমার,বুঝলাম সেইদিন আমাকে দেখতে তোমার বড্ড জেদ চেপে বসেছিল।আমি না করতে পারলাম না।
তোমার ইচ্ছে হলো আমাকে নিয়ে একা ঘুরবে, আমি বললাম ঠিক আছে, সকাল বেলা ছুটির দিন দেখে একটা মাইক্রোবাস নিয়ে দুজনে ঘুরবো।আর দুপুরে যে কোন ভাল রেস্টুরেন্টে খেয়ে নিব।
তুমি প্রস্তাবে রাজী না, কারণ মাইক্রোবাসে ড্রাইভার লুকিং গ্লাস দিয়ে দেখে থাকবে।তুমি লজ্জায় আমার সাথে ভালোভাবে কথা বলতে পারবে না। তোমার এক কথা আমাকে তুমি একা একটু পেতে চাও, আমার বুকে মাথা রেখে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে থাকবে। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিব কিন্তু, আমি ঘুম ভাঙ্গাতে পারবো না ।তোমার সব আবদার মেনে নিলাম কারন , তুমি বলেছ অনেক বছর শান্তিতে ঘুমাতে পার নি। সব শর্ত পূরণে রাজি হয়ে গেলাম।
সন্ধ্যা নামলেই আমাকে বললে তুমি অভয়মিত্র ঘাটে আসতে, আমি সেখানের কিছুই চিনি না , তবুও রাজি হলাম। আমার ও কেমন ভিতরে অস্থিরতায় কাজ করছে , সাথে মনে মনে ভয় কাজ করছে, মোবাইলে তোমার কথা গুলো শুনতে কত মিষ্টি লাগে আমার , মনে হয় তুমি তার চেয়ে অনেক মিষ্টি ও অনেক সুন্দরী।
তোমাকে সামনা-সামনি দেখে নি কোন দিন, আমি ও তোমার মুখটা দেখতে ব্যাকুল হয়ে উঠলাম, তুমি আমার মনের কথা বুঝতে পারলে।সন্ধ্যায় যখন পৌঁছলাম আমার হাতটা ধরে টেনে নিয়ে বললে চলো নৌকায় উঠি, ওখানে গিয়ে আমাকে মন ভরে দেখতে পারবে।
আমি হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম। দ্রুত দু’জনই নৌকায় উঠতে নদীতে নেমে গেলাম, শরীরে ভয় ও আসছে ভীষণ , সে এখন যদি আমাকে অপহরণ করে বা কোন বিপদ ঘটায়।
অনেক নৌকা আছে ঘাটে, কিন্তু একজন মাঝি আছে ঘাটে , মাঝি নৌকার ওপাশ মুখ করে বসে আছেন।
বুঝতে পারলাম আমি যাবার আগে নৌকা ঠিক করা ছিল,আমি বললাম চাঁদ তোমার কেমন অদ্ভুত বুদ্ধি, মনে মনে তোমার বুদ্ধির তারিফ করলাম।
আমাদের নৌকাটি অন্য নৌকায় বাঁধা ছিল, ভরা পুর্ণিমায় জোছনার আলো তোমাকে দেখতে চোখ জুড়িয়ে গেল, মাঝিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে পেছনে ফিরে তাকাতে পারবে না।
আমাকে বলল কিছু মনে করবেন না, গরমে অতিষ্ঠ হয়ে গেলাম, ব্লাউজ আর পেটিকোট ছাড়া সব কাপড় খুলে ফেললো ,মুখে বিড়বিড় করে বলল কি ঘরম রে বাবা এসবে অস্বস্তি বোধ হচ্ছে।
লজ্বায় আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম, সে বলল মেয়ে লোক আমি না তুমি, ধমকের সুরে বলল মুখ ফির, এইবার তুমি আমাকে দেখতে পারো । আমার গা শিউরে ওঠে, শালি কোন ভূত না পেতœী, এমন সুন্দর মেয়ে কি করে হয়, আবার আপনি থেকে এইবার তুমিতে বলছে।
মাঝিকে বলল সারা কর্ণফুলী নদী ঘুরিয়ে নিয়ে আসো ,তোমার ভাড়া ডাবল, আমার মাথা ঝিমঝিম করতে লাগলো , যখন সারা কর্ণফুলী ঘুরবে বললো , কিন্তু কি ভাবে।
সে একটা হান্টার বিয়ার নিল আমার জন্য বলল এইটা খেয়ে নাও, নেশা হলে আমাকে আলিঙ্গন করতে মনে ইচ্ছা জাগবে না। নৌকা ছাড়ার পর থেকে মনে হচ্ছে ক্ষনে ক্ষনে তার শরীরের রং পাল্টে যাচ্ছে ,শরীরের থেকে বেলী ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে।
জোছনা রাতে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ, সে বলল বিয়ারে চুমক দাও , সারাক্ষন হাঁ করে তাকিয়ে থাকলে ভালোবাসবে কি করে?
: তোমার বুকে মাথা রাখতে দিবে আমাকে, নৌকায় জোছনার আলো আমার বুকে মাথা রেখে বললো, কিছু মনে করো না , তুমি দরে নাও আমার এটাই বাসর রাত, তুমি যদি মনে কর আমার শরীরের উপর বাসর রাত করতে হবে, সেটা তুমি করতে পারো, মাঝি এই দিকে চোখ তুলে তাকাবে না ,আর আমিও বাঁধা দেব না।
ওর কোমল আচরণে আমার কেন যেন অন্তরে মায়া জমে গেল, এমন কোন কষ্ট ওর ভেতরে আছে আমাকে বলতে পারলো না।ওর দুই চোখ মুছে নিল।
নিজের ও কোন ফিলিংস নেই বরং ভয়ে কাঠ হয়ে গেছি। ওর ইচ্ছে হলো আমি ওকে বুকে জরিয়ে নিতে, যেখানে কোন নগ্নতা নয়, ভালবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিব আমি।
১৫ নং ঘাটে গিয়ে মাঝি আমাদের কে বললো সামনে গেলে বিপদের সম্মুখীন হতে হবে,আমি পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখি লাল সতর্ক সংকেত, বিপদ চ্যানেলে চলে আসলাম, ভয়ে মাঝিকে বললাম মাঝি আগের জায়গাতে ফিরিয়ে যাও, সে তখনও আমার বুকের উপর শুয়ে আছে, ভরা পূর্ণিমার চাঁদের আলো পানি গুলো চিকচিক করছে, মাঝিকে বললো এখন কি জোয়ার, মাঝি বললো হাঁ কণ্যা , তাহলে ভাটাতে আমাদের ভাসিয়ে দাও, নৌকার ইঞ্জিন বন্ধ করে দিয়ে গান ধর।
মাঝি গলা ছেড়ে গান শুরু করেছে, মাঝির কন্ঠস্বর যেন মেয়েলি ,মনের মধ্যে একটা খটকা লাগলো, কারন মাঝির চেহারা তো আমি দেখিনি।
বিধাতার কি সৃষ্টি এমন মধুর গানের কন্ঠ আমার মনটা ঝুরিয়ে গেল।
কি করে তোকে বলবো তুই কে আমার আয়নায় সাথে চলব সব পারাপার মনের ই আসকারে তোর কাছে এলাম হারিয়ে গেলাম।”
ওকে বললাম এই চাঁদ, তুমি তো জানোই আমি তোমাকে ভালবাসি, তবুও তোমার মনে এত ভয় কেন?
আমার প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যায় চাঁদ ।
আমাকে উত্তরে বলল দেখ কি সুন্দর চাঁদ , চাঁদের আলোয় আলোকিত হয় আমরা সবাই,আর প্রদিপের নিচে অন্ধকার থাকে , সে অন্ধকার আলোতে আমি বা তুমি কোন খারাপ কাজে লিপ্ত হয় সেখানে চাঁদ বা আলোর কি যায় ?
তুমি বল এতকিছুর পরও চাঁদের গায়ে কেউ কোন দিন কলস্ক লেপন করতে পারছে। আলো বা চাঁদ নিজের অবস্থানে রয়েছে,এই জগতে আমরা আছি সবসময় পরের দোষ খুঁজতে।
আমাকে আর কি ভাবে দেখবে বলো , তুমি চাইলে আমি বস্ত্র হীন হতে পারি।
ওর কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম, মাথায় কাজ করছে না, মাঝখানে এসে সে কেন উল্টোপাল্টা বলছে সে বলল তুমি আর আমি প্রতি ভরা পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় এই ভাবে বেড়াবো।
: চাঁদ দেখ আকাশে মেঘ জমেছে হয়তো বৃষ্টি নামবে, অনেক রাত হলো মাঝিকে বলো এইবার ঘাটে ভিড়তে, চাঁদ উত্তর দিল,
ও জান , মাঝি আমাদের ঘাটে রেখে অনেক আগে খেতে গেছেন।
মাথা তুলে দাঁড়াতে দেখি সত্যিই, আমরা ঘাটে কোথাও কেউ নেই , গা ভর হয়ে আসল।
আমি বললাম চল চাঁদ অনেক রাত হলো , আমি তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি।
:না ওই দেখ মা এসেছে,শেস বারের মতো তুমি আমাকে একটু বুকে চেপে ধরবে ,আর কখনো যদি তোমাকে দেখতে না পায়।এমন ভালবাসার লোভ আমি তো সামলাতে পারছি না। এখন তো চলে যাবে আমাকে ফেলে , পিছনে ফিরে কিন্তু আমাকে দেখবে না কিন্তু , আমার কাঁন্না পাচ্ছে। সত্যিই চাঁদ খেদে উঠল।
ঘাটের উপরে এক সুন্দরী মহিলা এসে হাজির ,মহিলার চেহেরাটা দেখা যাচ্ছে না ,মুখে ঘোমটা ধরে আছেন। গায়ের রং যেন চাঁদনি রাতে চকচক করছে, আমি উঠে আসতে ওই মহিলা দ্রুত গতিতে আমাকে পাশ কাটিয়ে নৌকায় নেমে গেল। গায়ে হালকা বাতাস অনুবভ করলাম।
পেছনে তাকানোর সাহস পেলাম না,উপরে উঠতে মোবাইলটা হাতে নিয়ে ভাবলাম যেতে যেতে চাঁদকে ফোন করব, কিন্তু নাম্বারটা দেখি মোবাইলে আর নেই। নিজের গায়ে নিজে চিমটি কাটঁলাম , পায়ের নিছের অংশটি অবশ হয়ে যাচ্ছে ,সামনে পা বাড়ানো সাহসটি হারিয়ে গেছে। হতবাক হয়ে গেলাম পেছনে ফিরে দেখি জনমানবশূন্য , ঘাটে কোনো নৌকা নেই, মূহুর্তের মধ্যে এই সব গেল কোথায় ?
আর কিছু মনে নেই যে আমার , পরের কয়েকটি বছর আমার না কি মেডিকেলের বেডে কাটিয়ে গেছে ,এখনও সবাই সন্দেহ করে পাগল বলে,তুমি বিশ্বাস করো এখন মনে হয় ছোখ বুঝলে দেখি ভাসছি র্কণফুলির বুকে নৌকা করে ,আর তুমি শুয়ে আছ আমার বুকের মাঝখানে। আদৌও পারলাম কি তোমাকে ভুলতে।