এ কে এম আব্দুল্লাহ’র অণুগল্প

লালরং অন্তর্বাস ও সময়
মোজাইক মোড়ানো দীর্ঘ ওয়াল।মধ্যখানে সেন্সরযুক্ত অত্যাধুনিক লোহার গেইট।মধ্যদুপুরের সূর্যের আলো পড়ে চিকচিক করছে। সেন্সরপয়ন্টে গাড়ি থামাতেই অ্যাটোমেটিক গেইট খুলে গেল। চারদিকে সবুজের সমাহার। আলো-ছায়ার অপরূপ মিলনে এ যেন শান্তি বিছানো নকশিকাঁথার ওপর দিয়েই চলছে গাড়ি। মন ভালো করা হাওয়া আর পাখির কোলাহল ভেঙে সামনের দিকে এগিয়ে যায় গাড়ি। ধীরে ধীরে অনেক ভেতরে চলে গেলে— মনে হলো চারদিক কেমন ঘনছায়ায় ভরে যাচ্ছে। যতই সম্মুখে এগুচ্ছি— জোয়ানদুপুরেও যেন গাঢ় অন্ধকারের ভেতর ঢুকছি !
এখন চারপাশ অন্ধকার।এই সুন্দর বাগান যেন এক অন্ধকারের অরণ্যে পরিণত হয়ে গেছে।গাড়ির হেডলাইট অন্ করতেই অন্ধকার ভেঙে চোখের সম্মুখে দেখি— দাঁড়িয়ে আছে বিশাল এক বৃদ্ধ ডুমুরগাছ।ডুমুর গাছটির ডালে ঝুলছে সদ্য ছেঁড়া লাল রঙের অন্তর্বাস।গাড়ির লাইটের আলো পড়ে অন্তর্বাসের গোল্ডেন হুক চিকচিক করছে। উইন্ড্রো খুলতেই নাকে এসে ধাক্কা দিল— তাজারক্তের ঝাঁঝাল গন্ধ। বুকটা কেঁপে ওঠলো। কোনও কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই— পাশের ঝোপ থেকে ভেসে এলো কানে, কয়েকটি মানুষের কণ্ঠে কুকুরের মতো কর্কশ আওয়াজ। আমি ভয়ে গাড়ির দরজা খোলা রেখেই পালাতে থাকি আলোর খোঁজে।আজও সময়ের ভাঁজে সেই আলোই খোঁজছি…
প্রিজন
মার্চমাস ২০২০। শেষ সাপ্তাহে অ্যানির সাথে ডেইট। সে আমার কলিগ প্রেমিকাও। অকস্মাৎ নিষিদ্ধ হলে সংস্পর্শ— এখন ‘প্রিজন’ক্লাব থেকে নিয়ে আসা পারফিউমের গন্ধ কাপড় থেকে ঝাড়ছি। দক্ষিণ পকেটে ডাউনলোড করে রাখা মিউজিক স্টাক হয়ে আছে— বাতাসের আদ্রতায়। আর বুকপকেট ভেঙে বেরিয়ে যাচ্ছে ভায়োলিনের দীর্ঘ করুণ সুর। এখন আমার চোখের স্ক্রিনে কেবল ভেসে ওঠছে অনেকগুলো পরিচিত সরল মুখ। মুখগুলো আমার মতো ভেতরের নীল-পাখিটার ডানা- ঝাপটানোর শব্দ শোনতে পাচ্ছে। আর অ্যানি ব্লু- সাইরেনের ভেতর গিলে যাচ্ছে আমার নামে— পাইপ ভরতি অক্সিজেন। কিছুক্ষণ পর, এই তিলোত্তমা নগরীর উপর দিয়ে উড়ে যাবে অ্যানির দেহের একটি অন্ধকার ডানা। আর ইজি চেয়ারে আধশোয়া আমি,অ্যানির নামে গিলে যাব পাইপ ভরতি হুইস্কির দীর্ঘ নেশা।