মজিদ মাহমুদের কবিতা

ভূত
আগে রাতে ভূতের ভয়ে রাস্তায় বেরুতাম না
ভূতগুলো রাস্তা জুড়ে নাচানাচি করতো
আগুন জ্বালাতো, আগুন নেভাতো
ভয় পেয়ে সটান ঘরের মধ্যে সিঁধে যেতাম
কেবল শুনতাম ভূতের অট্টহাসি
আজ ভূতের সঙ্গে ঘুরে বেড়াই
রাস্তা ছেড়ে মাঠের মধ্য দিয়ে হাঁটি
বাচ্চারা ভয় পেলে পুলকিত হই।
চিত্রশিল্পী
যে কোনো চিত্রশিল্পীকে আমি অপছন্দ করি
ভিঞ্চি, পিকাসো, গগ এবং ফিদা হোসেনও রয়েছেন
এসব তালিকায়-মৃতদের শরীর থেকে মুখগুলো
বের করে এনে লেপ্টে দেন ক্যানভাসে
বেচারা কোথাও যেতে পারে না, এমনকি
ঘাড় ঘুরাতেও পারে না, অপরিবর্তনীয় মুখগুলো
ক্রীতদাসের মতো হাসি বা কান্নায়
একই ভঙ্গিমায় নির্লিপ্ত চিরকাল।
কবি-১
যারা চাঁদ নিয়ে কবিতা লিখত, ফুল ও পাখি নিয়ে কবিতা লিখত
তারা আজ নেই
সুন্দরী মেয়েদের নিয়ে কবিতা লেখার ছ্যাবলামিও
এখন আর কেউ সহ্য করে না
আমরা তো বসে আছি ফুটন্ত কড়াইয়ের ওপর
সেই চাঁদও আজ মানুষের পায়ের নিচে, মেয়েদের শরীরও উন্মুক্ত
আর পদাবনত ও নগ্নতা কবিরা সযত্নে পরিহার করেন।
কবিতা- ২
কিছু একটা হলেই আমি কবিতা লিখে ফেলি
যেমন ছেলেটার পাতলা পায়খানা
মুখের ব্রণ কিংবা মিনিস্ট্রেশন
তাই বলে ব্রেস্ট ক্যান্সারে মা মরা শিশুটি
বাদ যায় না।
কবিতা-৩
আমার কবিতা শেষ না হতেই পাঠক বই ছুড়ে মারেন ডাস্টবিনে
আমি স্বস্তি পাই, তাহলে ঠিকমত এগুচ্ছে সব
আসলে কবিতার বই রেকে থাকতে চায় না
কবিতা এমন একটা জ্ঞান যা ফুটপাত থেকে কুড়িয়ে নিতে হয়
কাগজ কুড়ানো শিশুদের পলিথিনের ব্যাগের ভেতর ঘুরে ঘুরে
কবিতাগুলো আবার আমার হাতেই ফিরে আসে।
জুতা
এলিফ্যান্ট রোড দিয়ে যাওয়ার সময়
আমি পথচারীদের পায়ের দিকে তাকিয়ে থাকি
অসংখ্য দোকানের শোকেচে সাজানো রয়েছে
নানা রকম বাহারি জুতা
তবু পথশিশুদের নগ্নপদাঘাতে
আমি ক্ষতাক্ত হই।
বেশ্যা
বেশ্যা তো একটাই-নারী অনেক
বেশ্যাদের একটাই নাম
বেশ্যাদের শরীর নেই
আছে পায়ূপথ ও মূত্রনালী
কসাইয়ের দোকানে যেভাবে রান ও
সিনার সঙ্গে ঝুলে থাকে মাংসের ফালি।
পাতক
আমি তো আর সব কিছু দেখি নাই
নদী ও জ্বলন্ত অগ্নিগিরি এক নয় জানি
যারা এখনো জন্মায়নি কিংবা
চলে গেছে মৃত্যুর পথে
সকল নারী যদি একই হবে
তবে আমি কেন এমন পাতক।
দাইসেলফ
কিভাবে নিজেকে জানতে হয়
কিভাবে আত্মনম বিদ্ধি
সক্রেটিসও তো একই কথা বলেছিলেন
নো দাইসেল্ফ
কিন্তু কিভাবে নিজেকে জানবো
আসলে কোনটি আমি
অন্যরা যাকে আমি বলে জানে
না কি আমি যাদের চিনেছি অন্য নামে
আমার চারপাশের সকল দৃশ্য ও দ্রষ্টব্য
হয়তো প্রকৃত আমির স্বরূপ।
বান্দা
জানি, জীবন ঈশ্বরের দান
ঈশ্বর করেছেন সৃষ্টি নিজের আনন্দে
আমার সকল নিবেদন তাই ঈশ্বরের দাবি
অথচ সুখ ও দুঃখ, কর্তনের বেদনা
কেবল আমার
আমি কি নিজের জন্য মরতেও পারব না।
রুশো
জন্মে স্বাধীন মানুষ-সর্বত্র পরাধীন
এ কথা বলেছেন ফরাসি মহামতি রুশো
তার কালে অসংখ্য উপনিবেশ-আফ্রিকা
দাসদের কেনাবেচা চলে প্রশান্ত মহাসাগরে
আমার প্রশ্ন পণ্ডিপ্রবরের কাছে
কোথায় দেখেছিলেন দাসদম্পতির স্বাধীন প্রসব।
ভাষা
অনেক পাখির ডাক আমি করেছি অনুকরণ
অনেক পশুর মুদ্রা আমি জানি
আমার এই সব আহ্বান শুনে
অরণ্য থেকে ছুটে আসে বাঘ
বিহঙ্গ ডানা মেলে থাকে মাথার উপর
সবাই দেখেছ আমায় হায়েনার সাথে রাত্রিবাস
কেবল পারিনি বুঝতে কি তার মানে
নারীর ইঙ্গিত আভাস।
মজিদ মাহমুদ এ সময়ের অন্যতম গুরুত্বর্পূণ কবি ও প্রাবন্ধিক। তার জন্ম ১৬ এপ্রিল ১৯৬৬, পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার চরগড়গড়ি গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতোকত্তোর। কবিতা তাঁর নিজস্ব ভুবন হলেও মননশীল গবেষণাকর্মে খ্যাতি রয়েছে। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৪০এর অধিক।