তৈমুর খানের কবিতা

সব পথ রাস্তা হয়ে গেছে
সব পথ রাস্তা হয়ে গেছে
আমাদের ছোট ছোট রাস্তায়
অন্ধকার চলাফেরা করে
হাত ধরাধরি মেঘ নামে
ফিসফাস কথাদের বেশ আনাগোনা
তর্জন গর্জন দেখে আমরা ঘরে ফিরি
পতাকা ওড়ে দেখি সব মোড়ে মোড়ে
কাদের পতাকা এত ?
সব পথ রাস্তা হয়ে গেলে
এরকম পতাকা ওড়ে ?
মহল্লা মহল্লা জুড়ে এরকম গলি হয় ?
মানুষেরাও পাল্টে যায় অচেনা মানুষে ?
ঘরে ফিরে আসি —
সারারাত চাঁদ নয় , মৃত মায়ের মুখ মনে পড়ে !
যদি ছুঁতে পারো
আমি দৈর্ঘ্যে নেই , প্রস্থে নেই
শূন্য অবতলে কোথাও নেই
অথচ আমার ভাষা ব্যাপ্ত চরাচরে
শব্দ ও স্বপ্নের তালিকায়
বাঁচা ও মরার নির্বাহী ক্রিয়ায়
ছলকে ওঠে গন্ধে ধূপে
তুমি এসে ছুঁয়ে দাও
যদি ছুঁতে পারো
যদি এ নিঃসঙ্গতার বেড়া থেকে
আমাকে বের করে দাও…
ইহজাগতিক পথে
জয় ঘোষণার কাছে
কারা কারা গেল ?
আমি শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে যাব
ওই তো জবাগাছ !
কত জবাফুল ফুটে আছে
সবাই ডাকছে আমাকে …
তুমি ছোঁও
একটিবার অন্তত ছুঁয়ে দাও !
আমরা হেমন্তের দিকে যাব
ব্যস্ততায় দুলছে পটভূমি
কোথাও সুচারু সদ্গতি
দেখিনি আজও
নরম স্নেহের পলি রেখে
কবে ঢেউ চলে গেছে
চিৎ হয়ে শুয়ে আছে নদী
আমরা শুধু মাছেদের ভ্রমে
কল্পনার জাল বুনে গেছি
অনুভূতি, নৌকা আনো
যতই রোদের বিলাসী দিন
জ্বালাক আগুন—
আমরা হেমন্তের দিকে যাব
হয়তো ফিরবে আবার
করুণার শিশিরে ঝিকিমিকি !
শাশ্বতকথা
মৃদু স্বপ্নে আছি
মৃদু ভোর হলে জেগে উঠব
মানুষ চিরদিন অসভ্য থেকে গেল
সভ্যতা দখল করল রাজনৈতিক জন্তুরা
পর্দার আড়ালে আছি
ব্যাভিচার ব্যাভিচারিনী নিয়ে সংসার
সাধ্যমতন ওরা সবাই ভালো মানুষ
অন্ধকার পেলে মাঝে মাঝে নগ্ন হয়
বিষ ও অমৃতের দোকানে গিয়ে বসি
দোকান চালায় মধু আর নিম
দেখতে সুন্দর বেশ নারী ও পুরুষ
যার যা সাধ্যমতো কেনে —কান্না ও হাসিটুকু ফ্রি
রাতের চাঁদের কণা বুকে এসে নামে
আমরা সবাই চাঁদ খুঁজি শরীরের গানে
যদিও পাহাড় অরণ্য হ্রদ মরুর সঞ্চার
দেহ মনে রিপু খেলে অসম্ভব প্রলয় প্রহর
এ জন্ম মোচন হয়
এ জন্ম মোচন করতে এসে
শুধু অসন্তোষ বারুদে পুড়ি
কে এত পোড়ায় আমাকে?
জীবন যদিও দাতব্য চিকিৎসালয়
মন সেখানে চিরদিন রোগী
কত ভালো ভাগ্য দেখি এপাশে ওপাশে
অভিনয় সেরে বাড়ি ফেরে
আমি চাঁদ কুড়িয়ে স্বপ্নের ঘরে
গোলাপি হাতের ছবি আঁকি
এ জন্ম মোচন হয় ধুলোর পরাগ মেখে
এ জন্ম রোজ পার হয় কান্নায় আকাঙ্ক্ষার শরবত গুলে
পূর্ণ কেমন রোজ ভাবি
কতটুকু উজ্জ্বল তার পা, ঠোঁট নাক চোখ
কেমন নূপুর বাজে, দোলে নাকছাবি!